শেষ আপডেট: 2nd December 2024 23:26
রফিকুল জামাদার
আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনা অনেক কিছু শিখিয়েছে রাজ্যের পুলিশকে। সঠিক তদন্ত করেও কিছু বিবৃতি এবং 'পারিপার্শ্বিক ঘটনার' জেরে পুলিশি তদন্তের উপর প্রশ্নচিহ্ন তুলেছিলেন নির্যাতিতার পরিবার, সহকর্মী জুনিয়র ডাক্তাররা, মিডিয়ার একাংশ।
আরজি করের পরে গত তিন মাসে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। অথচ সেই সব ঘটনা নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কিন্তু কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। কারণ, আরজি করের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে পুলিশ। তা হল, অভিযোগ দায়ের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা, নির্যাতিতার পরিবারের দাবিকে সর্বতোভাবে মর্যাদা দেওয়া এবং মিডিয়ার সামনে ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার সময়ে ভীষণভাবে সতর্ক থাকা। পুলিশের এই নিখুঁত পদক্ষেপ নিন্দুকদের আঙুল তোলার সুযোগ দেয়নি। পোড় খাওয়া আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে এই পদক্ষেপ কাজে দিয়েছে।
এবার রাজ্যের প্রতিটি মহকুমায় পুলিশের জন্য একজন করে আইনি পরামর্শদাতা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
শীঘ্রই রাজ্যের ৯৯টি মহকুমায় পুলিশকে আইনি সাহায্যের একজন করে পরামর্শদাতা নিয়োগ করা হবে। এজন্য ওই আইনজীবীদের কী যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা থাকা দরকার তা অবশ্য এখনও বিস্তারিতভাবে জানানো হয়নি। তবে রাজ্যের এই উদ্যোগকে যথেষ্ঠ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
এক পুলিশ কর্তার কথায়, "আরজি কর কাণ্ডের তদন্তভার গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তদন্ত যে সঠিক পথেই এগোচ্ছিল, ৭৭ দিন পর আদালতে সিবিআইয়ের জমা দেওয়া চার্জশিটে তা স্পষ্ট। তবে এফআইআর রুজু করা থেকে সিজার লিস্ট তৈরি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট- এসব আইনি কাগজপত্র তৈরিতে পুলিশের কিছু ঘাটতি ছিল। তারই জেরে বারে বারে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল পুলিশকে।"
সূত্রের দাবি, ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পুলিশের তরফে আরজি কর পরবর্তী সময়ে আইনি পরামর্শদাতাদের সাহায্যে তদন্তে কৌশলগত কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
পুলিশের এই নিখুঁত পদক্ষেপ আরজি কর পরবর্তী সময় যেমন জয়নগরে নাবালিকাকে ধর্ষণ, কৃষ্ণনগরে তরুণীর দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার, আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটায় এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন, ডোমকলেও এক শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় পুলিশর বিরুদ্ধে নিন্দুকদের আঙুল তোলার সুযোগ দেয়নি। এমনকি নির্যাতিতাদের পরিবার যেমনভাবে তদন্ত চেয়েছে, পুলিশ সেই দাবিকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়ায়, উচ্চ আদালত এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করেনি বা কোনও ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়নি।
পুলিশ সূত্রের দাবি, কৌশলগত বদল এনে তার ফলও হাতেনাতে মিলেছে। বন্ধ পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। নির্যাতিতার পরিবারগুলির তরফেও আর দাবি উঠছে না সিবিআই তদন্তের। এই সূত্রেই এবার পুলিশি তদন্ত ঘিরে অবাঞ্ছিত প্রশ্ন এড়াতে প্রতিটি মহকুমায় রাজ্যের তরফে আইনি পরামর্শদাতা নিয়োগ করার উদ্যোগ নেওয়া হল বলে মনে করা হচ্ছে।