শেষ আপডেট: 10th September 2024 21:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সোমবার আরজি কর মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে হবে। নইলে রাজ্য সরকার চাইলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ সত্ত্বেও জুনিয়র ডাক্তাররা মঙ্গলবার কাজে ফেরেননি। বরং তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন। এহেন পরিস্থিতিতে এদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম তাঁদের ইমেল পাঠিয়ে বলেন, সরকার জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত। তাঁরা যেন তাঁদের দশ জন প্রতিনিধি পাঠান নবান্নে। তাঁদের ঘরোয়া ভাবে এও জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী রাতেই তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করতে চান। কিন্তু স্বাস্থ্য সচিবের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ফলে সন্ধে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত নবান্নে অপেক্ষা করে বেরিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, স্বাস্থ্য সচিব এদিন যে ইমেল পাঠিয়েছেন, তাতে পরিষ্কার করে বলা ছিল না যে মুখ্যমন্ত্রীই জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। শুধু লেখা ছিল, সিনিয়র অফিসাররা কথা বলবেন। সুতরাং চিঠি ভাষা আরও পরিষ্কার হতেই পারত। এভাবে ধোঁয়াশা রাখা ঠিক হয়নি।
এই অবস্খায় ডাক্তাররাও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছাড়েননি। তাঁরা পরিষ্কার জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য সচিবের পদত্যাগ চেয়ে তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান করছেন। আবার সেই স্বাস্থ্য সচিবই তাঁদের চিঠি দিয়েছেন। এতে তাঁদের অপমান করা হয়েছে। নবান্ন থেকে কোনও চিঠি আসেনি। তা ছাড়া শুধু ১০ জন প্রতিনিধি কেন আলোচনার জন্য যাবেন! প্রতিটি কলেজ থেকে প্রতিনিধিদের ডাকতে হবে। সরকার সুসংহত ভাবে প্রস্তাব দিক, আমরা বিবেচনা করে দেখব।
এখন কৌতূহলের বিষয় হল, আদৌ কি বরফ গলতে পারে, কীভাবে বরফ গলবে?
পর্যবেক্ষকদের একাংশ এও মনে করছেন, জুনিয়র ডাক্তাররা গোলপোস্ট শিফট করছেন। অর্থাৎ শুরুতে তাঁরা দাবি করছিলেন, কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে বিনীত গোয়েলের ইস্তফা চাই। এখন তাঁদের দাবি হল, স্বাস্থ্য সচিবের ইস্তফা চাই। যা দেখে অনেকের ধারণা হচ্ছে, এই নতুন দাবির নেপথ্যে রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে। সম্ভবত সেই কারণে সরকার এই সব দাবি মানতে চাইবে না। কারণ, সরকারের মনে হতে পারে আজ পুলিশ কমিশনারের ইস্তফার দাবি উঠছে। সরকার তা মেনে নিলে এর পর মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি উঠবে। অর্থাৎ ইনক্রিমেন্টাল প্রেশার তৈরি করাই লক্ষ্য।
এই অবস্খায় সরকার কৌশলগত ভাবেই আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। এবং মুখ্যমন্ত্রী এই বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ না দেওয়ায় সরকার ব্যবস্থা নিতে পারত ঠিকই। কিন্তু নবান্ন কোনও হঠকারী পদক্ষেপ করতে চায় না। বরং নবান্নও জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দাবির ব্যাপারে সহানুভূতিশীল। হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা সরকারেরও অগ্রাধিকার। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টেও সরকার হলফনামা দিয়েছে। তাছাড়া প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, সরকারকে সময় বেঁধে সেই সব পরিকাঠামোর কাজ করতে হবে। তাতে মেনে নিয়েছে সরকার।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এর পরেও ডাক্তাররা যদি স্বাস্থ্য সচিবের ইস্তফার দাবিতে অনড় থাকেন তাহলে সমাধানের পথ বের করা বিলম্বিত হবে। তা ছাড়া সরকারও বলার সুযোগ পেয়ে যাবে যে, মুখ্যমন্ত্রী আলোচনা চাইলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ অচলাবস্থা জিইয়ে রাখতে চাইছে।
সেদিক থেকে ইতিবাচক যে জুনিয়র ডাক্তাররা এদিন জানিয়েছেন, নবান্ন থেকে তাঁদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে চিঠি পাঠানো হলে তাঁরা তা বিবেচনা করে দেখবেন। তা ছাড়া প্রতিটি মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধিকে বৈঠকে ডাকতে হবে। এখন দেখার নবান্ন সেই প্রস্তাবে কত দ্রুত সাড়া দেয়।
সরকারের এক শীর্ষ আমলার কথায়, কর্মবিরতে চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরাও সমর্থন করেননি। বিচারপতিদের প্রজ্ঞার উপরেও ভরসা রাখা উচিত। তা ছাড়া জুনিয়র ডাক্তাররা যদি মনে করেন যে স্বাস্থ্য ভবনে সত্যিই ঘুঘুর বাসা রয়েছে, তাহলে স্বচ্ছ প্রশাসনের লক্ষ্যে তাঁদের দাবি দাওয়াও তাঁরা সরকারকে জানাতে পারেন। আলোচনার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে শুধু অবস্খান বিক্ষোভে কোনও সমাধানের রাস্তা বেরোবে না।