ফাইল ছবি।
শেষ আপডেট: 23 December 2024 17:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আরজি কর কাণ্ডে তথ্য লোপাটের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডল জামিন পেতেই সিবিআই তদন্তের প্রতি কার্যত আস্থা হারিয়ে মেয়ের খুনের ঘটনায় নতুন করে মামলা দায়েরের অনুমতি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নির্যাতিতা ডাক্তারি ছাত্রীর বাবা-মা। ইতিমধ্যে আদালত মামলা দায়েরের অনুমতিও দিয়েছে।
নির্যাতিতার পরিবারের তরফে মোট ৪২টি প্রশ্নকে সামনে রেখে নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, খুনের ঘটনাকে কেন প্রথমে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছিল? দেহের চাদর কেন বারবার বদল করা হয়েছিল? তাহলে কি সেমিনার হল ক্রাইম সিনই নয়?
এ ব্যাপারে সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির যে রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে, তাতেও স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে, সেমিনার হলে ক্রাইম সিনের কোনও প্রমাণ নেই। অর্থাৎ, এক খুন ও ধর্ষণের ঘটনা অন্য কোথাও ঘটানো হয়েছে অথবা ঘটনার পর যাবতীয় অপরাধ মুছে ফেলা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে ঘটনার পর ঠিক কী বলেছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা?
ঘটনার দিন আরজি কর হাসপাতাল থেকে তাঁদের তিনবার ফোন করে তিনরকম কথা বলা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন মৃতার বাবা-মা। সেই অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছিলসে সময়। একই সঙ্গে নির্যাতিতার পরিবারের তরফে সে সময় অভিযোগ করা হয়েছিল, মৃত্যুর আগে বা পরে মেয়ের শরীরে যে চাদর ছিল, তা পরে বদলে দেওয়া হয়েছে।
নির্যাতিতার বাবা-মা সে সময় দাবি করেছিলেন, হাসপাতালে যাওয়ার পর তাঁরা যখন মেয়ের দেহ দেখেছিলেন তখন তার গায়ের ওপর সবুজ চাদর ছিল। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে যে ছবি আগে দেখানো হয়েছে সেখানে চাদরের রং ছিল নীল। শুধু তাই নয়, ঘটনার আগের দিন রাত্রে মেয়ে লাল চাদর নিয়ে শুয়েছিল এমন খবরও তাঁরা পেয়েছেন বলে দাবি।
রহস্য শুধু চাদর ঘিরেই নয়, মৃতদেহর পজিশন নিয়েও। কারণ ঘটনার পরে জুনিয়র ডাক্তাররা যে ছবি দিয়েছিল তাতে দেখা গিয়েছিল নির্যাতিতার একটা পা ম্যাট্রেসের বাইরে ছিল। কিন্তু তাঁর বাবা-মার বয়ান অনুযায়ী, তাঁর দুটো পা-ই ছিল গদির ওপর। অর্থাৎ স্পষ্ট অভিযোগ, মৃতদেহ কেউ সরিয়েছে। কিন্তু কারা করল এটা, তখনই সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে তিনবার ফোন গিয়েছিল নির্যাতিতার পরিবারেরব কাছে। প্রথম ফোনে নির্যাতিতার বাবা-মাকে চটজলদি হাসপাতাল আসতে বলা হয়েছিল। জানানো হয়, 'মেয়ে অসুস্থ'। দ্বিতীয় ফোনটিতে নির্যাতিতার পরিবারকে একজনকে বলতে শোনা যায়, 'মেয়ের শরীর ভীষণ খারাপ, ভর্তি করতে হয়েছে। আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন'!
আবার তৃতীয় ফোনে নির্যাতিতার পরিবারকে হাসপাতালের এক মহিলা কন্ঠ বলছিলেন, ‘ওঁর অবস্থা খুবই খারাপ। উনি সুইসাইড করেছেন হয়তো বা মারা গিয়েছেন।’ ওই মহিলা কণ্ঠ নিজেকে ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার’ হিসেবেও পরিচয় দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন নির্যাতিতার মা।
তখনই নির্যাতিতার বাবা-মা বলছিলেন, খুনের ঘটনাকে কেন আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে তা বোধগম্য হচ্ছে না। নির্ঘাত কাউকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ফরেনসিক লাইব্রেরির রিপোর্ট যেন মা-বাবার সেই আশঙ্কাকেই আরও জোরাল করে দিল।