Date : 17th Jul, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
কয়েকমাসের ব্যবধানে আবার ডোমজুরের একটি কারখানায় আগুন লাগল, ঘটনাস্থলে দমকলের দু'টি ইঞ্জিনশক্তির স্বার্থেই রাশিয়ার পাশে ভারত, ন্যাটো প্রধানের হুঁশিয়ারিকে পাত্তাই দিল না নয়াদিল্লিভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হতে পারে সামনের সপ্তাহেই! কম দামে মিলবে হুইস্কি, ওয়াইননিকোপার্কে যুবকের মৃত্যু: পরিবারের অভিযোগ গাফিলতির, ময়নাতদন্তে হৃদরোগে মৃত্যুর ইঙ্গিতকল্যাণী স্টেডিয়ামেই হবে ডার্বি, তবে পিছল দিনমিলিয়ে মিশিয়ে হাজারের উপর নামকরণ করে ফেলেছেন মমতা, এখনও তালিকা অফুরন্ত, জানালেন নিজেইগোপালগঞ্জ: পুলিশ রিপোর্টে আ-লিগ কর্মীদের মৃত্যুর কারণ লেখা নেই, সেনাকে আড়াল করাই লক্ষ্য?আইআইটি সমাবর্তনে 'কালা চশমা' মুহূর্ত, 'কুল' ছাত্র-প্রফেসরের রসায়ন ভাইরালউত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের করিডোরে ভবঘুরের দেহ খুবলে খেল কুকুরমুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই হবে এবারের ডুরান্ডের উদ্বোধন

রেডরোড খুঁড়তেই ইতিহাস! ইটের পাঁজরে লোহার খাঁচায় ঘুমিয়ে অবাক কাঠামো

দ্য ওয়াল ব্যুরো: কলেজ জীবনে মখমলে গালিচার মতো নরম, সবুজ ময়দানে গা এলিয়েছেন তো কতজনই। অফিস জীবনে রেড রোড ধরে ফাইল হাতে গলদঘর্ম হয়ে চক্করও কেটেছেন ঠিকই। কিন্তু এটা কি জানেন, যে এই শতাব্দীপ্রাচীন রাস্তার ঠিক নীচ দিয়ে চলে গেছে দু'টি আস্ত সুড়ঙ্গ

রেডরোড খুঁড়তেই ইতিহাস! ইটের পাঁজরে লোহার খাঁচায় ঘুমিয়ে অবাক কাঠামো

শেষ আপডেট: 15 June 2021 05:20

দ্য ওয়াল ব্যুরো: কলেজ জীবনে মখমলে গালিচার মতো নরম, সবুজ ময়দানে গা এলিয়েছেন তো কতজনই। অফিস জীবনে রেড রোড ধরে ফাইল হাতে গলদঘর্ম হয়ে চক্করও কেটেছেন ঠিকই। কিন্তু এটা কি জানেন, যে এই শতাব্দীপ্রাচীন রাস্তার ঠিক নীচ দিয়ে চলে গেছে দু'টি আস্ত সুড়ঙ্গ! ব্রিটিশদের বানানো ইটের কালভার্টের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সেই জোড়া টানেল! দুই শতাধিক বছরের পুরোনো রেড রোডের গায়ে প্রায় কয়েক দশক বাদে এই প্রথম পড়তে চলছে কোদাল, গাঁইতির ঘা। জল সরবরাহ ও নিকাশি ব্যবস্থা সংস্কার করতেই কালভার্টটি সারানোর উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। হঠাৎ করে সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিল কেন? পিডব্লিউডি-র তরফে খবর, গত সপ্তাহে হাল্কা বৃষ্টির পরই মোহনবাগান তাঁবুর আশপাশে জল জমে যায়। উপচে পড়ে রেড রোড সংলগ্ন একাধিক এলাকা। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, রাস্তায় কিছু গলদ থাকতে পারে। তাই উপর উপর রাস্তা মেরামত করে ফিরে যান তাঁরা। কিন্তু কয়েক দিন বাদে ফের একই ঘটনা চোখে পড়ায় ইঞ্জিনিয়াররা বুঝতে পারেন, ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থায় গোলমাল রয়েছে। তাই এবার রাস্তা মেরামত নয়, রেড রোড খুঁড়ে কালভার্ট সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিহাসে মোড়া পথ খুঁড়ে কীসের দেখা মিলল? ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা অবশ্য বিশেষ কিছু ভাঙলেন না। চলতি প্রকল্পকে 'সংবেদনশীল' তকমা দিয়ে কথা ঘুরিয়ে দিলেন। তবে প্রাথমিকভাবে যেটুকু জানা যাচ্ছে— এক, টানেলজোড়া কালভার্ট পুরোদস্তুর ইটের তৈরি। যানবাহনের ভার নেওয়ার কথা মাথায় রেখে এক নয়, একাধিক স্তরে ইটগুলি সাজানো হয়েছিল। দুই, পরিস্থিতি বলেছে। তাই এবার আর আগের মতো খিলানাকৃতি গড়ন বজায় রাখতে চাইছেন না ইঞ্জিনিয়াররা। বদলে ত্রিকোণ স্ল্যাব বসানো হতে পারে। এতে করে গোটা কাঠামো আরও সুদৃঢ় হবে বলেই তাঁরা মনে করছেন। তিন, সংস্কারের কাজ আগামী ১৭ জুন রাত ১০টার মধ্যেই শেষ হবে। কর্তব্যরত ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, দু'টি টানেলের একমুখে রয়েছে ময়দান। অন্যমুখে হুগলি। যার কাজও মূলত দু'ধরনের। একবার জল বয়ে আনা এবং পাশাপাশি অতিরিক্ত জল নিষ্কাশন করা। বর্ষায় কিংবা অতিরিক্ত বর্ষণে ময়দান এলাকা উপচে পড়লে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ দিয়েই সেই জলের স্রোত গঙ্গার বুকে জমা হয়। কিন্তু উল্টো খেলাও রয়েছে। নদীতে যখন জোয়ার আসে, তখন আপনাআপনি টানেল বেয়েই জলের ধারা ময়দান ভাসিয়ে ফেলে। মোহনবাগান তাঁবুতে নিয়মিত যাতায়াত আছে যাঁদের, তাঁরা এমন দৃশ্য নিশ্চয় আকছার দেখেছেন। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার নীলোৎপল বসু। কাজের ফাঁকে পুরোনো শহরের সুলুকসন্ধানে তাঁর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। নীলোৎপলবাবুর মতে, ফোর্ট উইলিয়ামের জায়গা বদলের সময় ব্রিটিশরা এর চারপাশে পরিখা কাটে। পরে পার্ক স্ট্রিট, লিন্ডসে স্ট্রিটের মতো এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার সঙ্গে তা যুক্ত করা হয়। এই সমস্ত অঞ্চলের জল ফোর্ট উইলিয়ামে বানানো পরিখা ধরেই বয়ে যেত। যা এখন এজেসি বোস রোডের তলা দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু ময়দান অঞ্চলের জল আজও রেড রোড-অভিমুখী। ঐতিহাসিক দেবাশিস বসু জানান, রেড রোড আদতে বানানো হয়েছিল ১৮২০ সালে। গোড়ায় এর নাম ছিল 'সেক্রেটারিজ ওয়াক'। তৎকালীন গভর্নর জেনারেলের বাসভবন, এখন যেটা 'রাজভবন', তার সঙ্গে দক্ষিণ শহরতলিকে জুড়তেই এই রাস্তা তৈরি করা হয়। পরে ব্যস্ত খিদিরপুর হয়ে হাউজ স্ট্রিট, ব্রেবোর্ন রোড, মিশন রো যেতে সরকারি আধিকারিকেরা এই বাইপাসটি ধরে গাড়ি হাঁকাতেন। আজ, কয়েক দশক পর যখন এই ঘুমন্ত ইতিহাসের গায়ে ধাতব আঘাত নেমে এল তখন দেবাশিসবাবু ফেলে আসা সময়কে ফিরে দেখেছেন। সড়ক যখন তৈরি হচ্ছে, তখন এর পুরোটাই ইটের কুচি দিয়ে ভরা ছিল৷ সেই থেকে লোকমুখে নাম ছড়ায় 'রেড রোড'। পরে বিকেল গড়াতে সাদা গাউন পরা শ্বেতাঙ্গী তরুণীরা এই সড়ক ধরে হেঁটে যেতেন। দল বেঁধে। ধীরে সুস্থে। এই ভঙ্গিমাকে লক্ষ করেই ঐতিহাসিকেরা এর নাম দেন 'লেডিজ মাইল'। 'সেক্রেটারিজ ওয়াক' হয়ে 'রেড রোডে'র এই বিবর্তনে এবার কিছুটা হলেও মিশে গেল আধুনিকতার পরত।

ভিডিও স্টোরি