শেষ আপডেট: 28th August 2023 13:35
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘ব্লু মুন!’
নীল চাঁদের (blue moon) নীলিমা আকাশ ভরিয়ে দেবে।
৩১ অগস্ট রাতে নীল চাঁদ দেখার সৌভাগ্য হবে পৃথিবীর। চাঁদ তার জ্যোৎস্নায় পৃথিবীর আকাশ ভরিয়ে দেয়। তাকে তো প্রতিদিন এত কাছে আমরা পাই না। এই অগস্টেই সেই আশা পূরণ হচ্ছে। জোড়া পূর্ণিমায় মাসের শেষে ঝিকিমিকি তারার মাঝে দেখা দেবে নীল চাঁদ।
একই মাসে জোড়া পূর্ণিমা, আর দুই পূর্ণিমাতেই সুপারমুন (Supermoon) দেখা যাবে। ২০১৮ সালের পরে ফের এমন মহাজাগতিক ঘটনা ঘটতে চলেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, অগস্টের ১ তারিখে দেখা গিয়েছিল সুপারমুন। আকাশজুড়ে মস্ত থালার মতো চাঁদ উঠেছিল। আবার ৩১ তারিখে সুপারমুন দেখা যাবে। তবে এবার 'ব্লু মুন' দেখা যাবে রাতের আকাশে।
লাল বা কমলা চাঁদের কথা শোনা গেছে। আসলে সূর্যের রশ্মির প্রতিসরণে চাঁদের গায়ে লালচে আভা তৈরি করলেই ব্লাড মুন (Blood Moon) বলে। সাধারণত পূর্ণগ্রাস গ্রহণে লাল রশ্মির প্রতিসরণে চাঁদকে লালচে দেখায়। আসলে চাঁদ হল পৃথিবীর আত্মজা। পৃথিবীর চারপাশে পাক খেতে খেতে কখনও সে কাছে আসে আবার কখনও দূরে সরে যায়। যখন পৃথিবীর সঙ্গে চাঁদের দূরত্বটা সবচেয়ে কম হয় তখন তাকে বলে ‘অনুভূ’ (পেরিজি) অবস্থান। সে সময় যদি পূর্ণিমা হয়, তাহলে চাঁদ হয়ে যায় ‘সুপারমুন।’ পশ্চিমী দুনিয়ায় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে সুপারমুন শব্দটার প্রচলন আছে ।
আরও পড়ুন: ইসরোর গা ছমছমে আদিত্য-অভিযান ২ সেপ্টেম্বর, চাঁদে নিঃশ্বাস ফেলেই সূর্যের পাড়ায় দৌড়
সাধারণত পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব থাকে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। পেরিজিতে এই দূরত্ব কমে হয় ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার কিলোমিটার আর এপোজিতে (চাঁদের অবস্থান যখন পৃথিবী থেকে দূরে হয়) হয় ৪ লক্ষ ৫ হাজার কিলোমিটার। ৩১ তারিখ চাঁদ আবার পেরিজি অবস্থানে আসবে। সেই সময় মস্ত বড় থালার মতো চাঁদ (Blue Moon) দেখা যাবে পৃথিবীর আকাশে।
সবচেয়ে আগে প্রশ্ন আসে, কেন একই মাসে দু’বার পূর্ণিমা হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ১২ মাস মানে হল ৩৬৫ দিন। অর্থাৎ এক বছর, যাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় এক সৌর বছর বলে। সাধারণত একটি পূর্ণিমা থেকে অপর পূর্ণিমার ফারাক হয় গড়ে সাড়ে ২৯ দিন। সঠিক হিসেব বলতে গেলে ২৯.৫৩১ দিন বা ২৯ দিন ১২ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড। এইভাবে হিসেব করলে ১২টি পূর্ণিমা হতে সময় লাগে ৩৫৪ দিন ৮ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড (Blue Moon) ।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এর ফলে এক সৌর বছর থেকে এক চান্দ্রবছরের মধ্যে ১১ দিন ফারাক হয়। এই হিসেবের ফারাকের জন্যই প্রতি তিন বছর অন্তর এক মাসে দু’টি পূর্ণিমা দেখা যায়। এ ভাবে প্রতি ১৯ বছরে গড়ে সাত বার নীল চাঁদের (blue moon) দেখা মিলতে পারে।
নাসা জানিয়েছে, এক বছরে দুটি ব্লু মুনের ((blue moon) ) উদাহরণও রয়েছে। ১৯৪৪ সালে জানুয়ারি এবং মার্চ মাসে দু’টি করে পূর্ণিমা ছিল। ২০৩৯ সালে এমন ঘটনা ঘটলেও ঘটতে পারে।
পূর্ণিমার গোল থালার মতো চাঁদ। রঙ মোটেও নীল নয়। আসলে ব্লু মুন নামের পিছনে অনেক গল্প আছে। কেউ বলেন, ব্লু মুন হল ‘হান্টার মুন’। চাঁদের আলোয় আগে রাতে শিকারিরা শিকার ধরতে বের হতেন। তাই এমন নাম দেওয়া হয়েছিল। আবার অন্য কথাও প্রচলিত আছে। ইতিহাস বলছে, নীল চাঁদের ধারণা এসেছে চাষিদের কাছ থেকে। ১৯ শতকের দিকে চাষিরা চাষের কাজ করতেন চান্দ্রমাস ধরে। তাদের নিজস্ব ক্যালেন্ডারে প্রতি ঋতুতে (তিন মাসে) তিনটি পূর্ণিমার নামকরণও করা হত। যেমন গ্রীষ্ম বা বর্ষার প্রথম পূর্ণিমা, দ্বিতীয় পূর্ণিমা ইত্যাদি। কোনও ঋতুতে চারটি পূর্ণিমা পড়ে গেলে নামকরণের সুবিধার জন্য অতিরিক্ত পূর্ণিমাটিকে ব্লু মুন বলা হত। এখন নাকি সে ধারণাই পাল্টে কোনও মাসে দুটি পূর্ণিমা পড়ে গেলে, দ্বিতীয়টিকে ব্লু মুন বলা হয়।