শেষ আপডেট: 12th October 2023 15:04
দ্য ওয়াল ব্যুরো, বীরভূম: ইংরেজদের অত্যাচারে জর্জরিত গোটা গ্রাম। আর্থিক কষ্ট আরও বাড়িয়ে তুলছিল মানসিক নানা যন্ত্রণা। খ্রিস্টধর্ম নিলে খাজনা কম দিতে হবে এমন টোপ চাপ বাড়াচ্ছিল আরও। এমনই দুঃসহ পরিস্থিতিতে প্রথম আগমনীর সুর বেজেছিল সুলঙ্গা গ্রামে। অত্যাচারের জবাব দিতে নিজেদের ভিতরের শক্তি জাগ্রত করতেই শক্তির আরাধনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গ্রামের মানুষ। শুরু হয়েছিল অসুরনাশিনীর দুর্গার আরাধনা।
ঝাড়খণ্ড সীমান্ত ঘেঁষা রামপুরহাট ব্লকের সুলঙ্গা গ্রাম। লাগাতার অত্যাচারে দেওয়ালে যখন পিঠ ঠেকে গিয়েছিল তখন গ্রামের মানুষকে সংঘবদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ব্রজ মুর্মু আর দুর্গা মুর্মু। দুর্গাপুজো শুরুর পিছনেও ছিল তাঁদেরই অবদান। ইংরেজদের উপর ক্ষোভে সন্ধিপুজোয় দেবীকে সাদা ছাগল উৎসর্গ করা হত। ইংরেজরা দেশ ছাড়লেও সুলঙ্গা গ্রামের দুর্গা মন্দিরে আজও বজায় রয়েছে সেই প্রথা।
এখানে সিংহ নয়, দেবীর বাহন বাঘ। গ্রামের জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষজন পৈতে পরে মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে দেবীর আরাধনা শুরু করেছিলেন। দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করতে দেবীকে আহ্বান করা হয়েছিল। এখন পাকা দুর্গামন্দির তৈরি হয়েছে। গাছ-গাছালি দিয়ে ঘেরা মন্দির পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এখানে দেবীকে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। সন্ধিপুজোয় একটি সাদা ছাগল উৎসর্গ করা হয়। গ্রামের নতুন প্রজন্মের মনে পূর্বপুরুষদের বীরত্বের কথা বাঁচিয়ে রাখতেই ইংরেজ-বিদ্বেষ থেকে শুরু হওয়ার প্রথা আজও টিকিয়ে রেখেছেন গ্রামের মানুষ।
এই পুজোর সঙ্গে গ্রামের মানুষের অন্যরকম আবেগ জড়িয়ে থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে সুলঙ্গা গ্রামের দুর্গাপুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এবছর ফের পুজো শুরু হোক চাইছেন সবাই। কিন্তু পুজো হবে কিনা তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিটি। অন্য বছরগুলিতে প্রতিমার কাজ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এবছর এখনও মন্দিরের দেওয়ালে রঙের প্রলেপ পড়েনি। কারণ গোল বেঁধেছে অন্য জায়গায়। গ্রামের বাসিন্দা সুশীলা মুর্মু জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর পুজো কমিটিরগুলির আর্থিক অনুদানের তালিকায় এই পুজো রয়েছে। কিন্তু পুরো টাকা পুজো কমিটির ফান্ডে আসছে না। ফলে পুজো হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, “দু'বছর আগে সরকার থেকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হত। অনুদানের টাকা গ্রামের তৃণমূল নেতার নামে আসে। দু'বছর মাত্র ৩০ হাজার টাকা পেয়েছিল কমিটি। মাঝের এক বছর টাকা পাওয়া যায়নি।”
তৃণমূলের ওই নেতা শৈলেন মুর্মু অবশ্য বলেন, “ওই দু'বছর দমকল বিদ্যুৎ, পুলিশের কাছে অনুমতি নেওয়া-সহ আনুষাঙ্গিক কাজে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল। মাঝে আমি চেক তুলিনি। এবার যদি পুজো হয় তাহলে আমি টাকা তুলে কমিটিকে দিয়ে দেব।” আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা পুজো কি শুরু হবে আবার! সেদিকেই যে তাকিয়ে সুলঙ্গা গ্রামের মানুষ।