শেষ আপডেট: 17th March 2023 05:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাহুল গান্ধীকে (Rahul Gandhi) নিয়ে বিজেপি (BJP) ও কংগ্রেসের সংঘাত ক্রমশ চরম আকার নিতে চলেছে। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতিকে লোকসভায় (Loksabha) দাঁড়িয়ে তাঁর লন্ডনের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে অনড় বিজেপি। অন্যদিকে, কংগ্রেস সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই।
দু-পক্ষের লড়াই বৃহস্পতিবার অন্যদিকে মোড় নেয় রাহুল গান্ধীর মন্তব্যে। বৃহস্পতিবার লোকসভায় দ্বিতীয় দফার অধিবেশনে হাজির হয়ে তিনি স্পিকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাকে সভায় বলার সুযোগ দেওয়া হোক। কংগ্রেস সাংসদ এই টুকু বলা মাত্র সভায় গোলমাল শুরু হয়ে গেলে স্পিকার ওম বিড়লা অধিবেশন শুক্রবার পর্যন্ত মুলতুবি করে দেন। পরে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে রাহুল বলে আসেন, তাঁকে শুক্রবার লোকসভায় বলতে দেওয়া হোক। একই দাবি জানিয়ে স্পিকারকে চিঠি লেখেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী। কিন্তু স্পিকার বা তাঁর অফিস থেকে এই ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।
এরপরই কৌশল বদলে ফেলে বিজেপি। রাহুল জানিয়ে দেন, তিনি লন্ডনে বলা কথা সংসদে দাঁড়িয়েও বলতে প্রস্তুত। সাংসদ হিসাবে এটা তাঁর অধিকার। সূত্রের খবর, এরপরই স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে বিজেপি দাবি করে, ক্ষমা না চাইলে রাহুলের সদস্যপদ খারিজ করতে হবে। স্পিকারকে এজন্য কমিটি গড়ার দাবি জানিয়েছে বিজেপি।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, রাহুলের বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ করার মধ্য দিয়ে বিজেপি আসলে দেখাতে চাইছে, বিরোধী শিবিরে কংগ্রেস কতটা একা। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসকে বিরোধী শিবিরে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়াই উদ্দেশ্য গেরুয়া শিবিরের।
কংগ্রেস যে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন তা স্পষ্ট হয়েছে রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের ঘরে বিরোধীদের বৈঠকেও। তৃণমূল ওই বৈঠকে অংশই নিচ্ছে না। আবার যে ১৮টি দল খাড়্গের ডাকা বৈঠকে যাচ্ছে তারা সংসদে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে বিজেপির আক্রমণের মোকাবিলায় কংগ্রেসের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছে না।
লন্ডনে রাহুল বলেছিলেন, ‘নরেন্দ্র মোদীর শাসনামলে ভারতে গণতন্ত্র নেই। এমনকী সংসদে পর্যন্ত বিরোধী দলের সাংসদদের বলতে দেওয়া হয় না। তাঁরা বলতে উঠলে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ বিজেপি-সহ গোটা গেরুয়া শিবির রাহুলের বক্তব্যকে দেশের অবমাননা বলে দাবি করছে।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে রাহুল শুধু তাঁর রাজনৈতির প্রতিপক্ষ নরেন্দ্র মোদী নন, লোকসভা ও রাজ্যসভার দুই পরিচালক যথাক্রমে ওম বিড়লা এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়কেও কাঠগড়ায় তোলেন। গেরুয়া শিবিরের কৌশল, রাহুলের বক্তব্যকে বিদেশের মাটিতে দেশের অসম্মান বলে দেগে দেওয়া।
গত সোমবার থেকে বিজেপি রাহুলের বক্তব্যকে হাতিয়ার করে সংসদের দুই কক্ষেই দাবি করে আসছে কংগ্রেস নেতাকে ক্ষমা চাইতে হবে। পাল্টা কংগ্রেস দাবি করছে, আদানি কাণ্ডে তদন্তের ভার সংসদের তদন্ত কমিটির হাতে দিতে হবে। দু-তরফের বিবাদে সভার কাজ লাগাতার পণ্ড হয়েছে গত চারদিন। বৃহস্পতিবারও সংসদের দু দফার অধিবেশনই মুলতুবি হয়ে যায় গোলমাল শুরু হওয়ায়।
বিজেপির কৌশল মতো প্রতিদিন একজন করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী সংসদের দুই কক্ষে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির কথার নিন্দা করে বক্তব্য পেশ করছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, তাঁদের জবাব দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। মন্ত্রীদের বক্তব্যের পরই সভা মুলতুবি করে দেওয়া হচ্ছে।