শেষ আপডেট: 22nd August 2023 14:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জীবনের ৫২টা বসন্ত পার করে ফেলেছেন। এখনও অবিবাহিত (Rahul Gandhi)। তার উপর সুদর্শন, স্মার্ট। দেশের রাজনীতিতে বিশেষ জায়গা করেছেন। তাই আজও তিনি বহু মহিলারই 'ক্রাশ', এমনকি 'এলিজিবল ব্যাচেলর' হিসেবেও বেশ মান্যতা পান বহুলাংশেই। তিনি রাহুল গান্ধী।
তবে আকর্ষণীয় রাজনীতিবিদ হিসেবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেলেও রাহুল গান্ধীর অন্য গুণের তুলনায় বলতে গেলে তা কিছুই নয়। সব মিলিয়ে এত কিছু করেছেন অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় রাহুল, এত বিষয়ে তাঁর পারদর্শিতা, বিভিন্ন অফবিট স্পোর্টস নিয়ে এত উৎসাহ, যে ধারণার বাইরে।
আইকিডোতে ব্ল্যাকবেল্ট (Black Belt in AIkido)
জাপানি মার্শাল আর্ট আইকিডোতে ব্ল্যাক বেল্ট রয়েছে রাহুলের। তিনি বহু বছর ধরে এই মার্শাল আর্ট শিখেছেন, অভ্যাস করেছেন, এমনকি এখনও নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন। ২০১৩ সালে জাপানেও গিয়েছিলেন ট্রেনিংয়ের জন্য, সেখান থেকেই ব্ল্যাক বেল্ট পান তিনি। আইকিডোর পোশাক পরে তাঁর অভ্যাসের ছবি বেশ কয়েকবারই দেখা গেছে।
বিশ্বের অন্যতম পরিচিত মার্শাল আর্টগুলির মধ্যে একটি হল আইকিডো। আর পাঁচটা মার্শাল আর্টের মতো লাথি কিংবা ঘুষির উপর বেশি জোর দেওয়া হয় না, এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হল জয়েন্ট লক করা, পিন করা, স্ট্রাইক করা, থ্রো করা-- ইত্যাদি। বলা হয়, এই মার্শাল আর্টের অর্থ মারধর করে উল্টোদিকের প্রতিদ্বন্দ্বীকে কাত করা নয়, বরং নিজের শরীরের ও মনের এনার্জির উপর নিজের কতটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, কতটুকু ন্যূনতম বলপ্রয়োগে আক্রমণকারীর থেকে আত্মরক্ষা সম্ভব-- তারই সাধনা করতে শেখায় আইকিডো। এই মার্শাল আর্ট অনেকটাই শান্তিপূর্ণ।
দক্ষ পাইলট (Trained Pilot)
বিমান ওড়ানোর বিশেষ প্রশিক্ষণও রয়েছে রাহুল গান্ধীর। তাঁর বাবা, প্রয়াত রাজীব গান্ধীও এই ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহী ও পারদর্শী ছিলেন। ককপিট ছিল তাঁর ভালবাসা। গত বছর ২০ অগস্ট, রাজীব গান্ধীর জন্মদিনে শশী তারুর টুইটও করেছিলেন রাজীব গান্ধীর বিমান চালক হিসেবে প্রাইভেট লাইসেন্সটির ছবি। সেই প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের নম্বর ছিল ৯৬১।
ছেলে রাহুলও সেই পথেই হেঁটেছেন। যুবক বয়সেই বাণিজ্যিক বিমান ওড়ানোর প্রশিক্ষণ ও শংসাপত্র পেয়েছেন তিনি। বেশ কয়েকবার উড়িয়েওছেন বিমান।
এমনকি বছর দুয়েক আগে এই নিয়ে একটি ভিডিও বার্তায় রাহুল বলেছিলেন, একজন পাইলট একজন ভাল নেতাও হতে পারেন। তাঁর কথায়, 'পাইলটদের একটি বিশেষ ক্ষমতা থাকে, ৩০ হাজার ফুট উঁচু ককপিট থেকেও তাঁরা নীচের ছবি পরিষ্কার দেখতে পান। ট্র্যাক হারিয়ে ফেলেন না। তাঁদের অনেক কিছু বিনা বাধায় দেখার ক্ষমতা থাকে, যা নেতা হওয়ার জন্য জরুরি। ভাল পাইলট হওয়ার কারণেই, নানা বিষয়ে আমার দৃষ্টি সহজে অবরুদ্ধ হয় না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি যখন কোথাও যাই, লোকজনের সঙ্গে দেখা করি, তাঁদের কথা শুনি, তা অনেক বিশদে বুঝতে পারি, আমার মধ্যে অনেক স্পষ্টভাবে পৌঁছয় সে বিববরণ। এই শক্তি আমি আমার বাবার থেকেই পেয়েছি।'
স্কুবা ডাইভার (Scuba Diver)
কলেজ থেকেই রাহুল গান্ধীর শখের স্পোর্টস স্কুবা ডাইভিং। এই ক্ষেত্রে একাধিক স্তরে শংসাপত্রও রয়েছে তাঁর। তিনি সার্টিফায়েড স্কুবা ডাইভার প্রশিক্ষকও বটে। সমুদ্রের গভীর থেকে গভীরে নেমে প্রবাল-মাছেদের রাজত্বে অ্যাডভেঞ্চার করতে বিশেষ ভালবাসেন রাহুল। এ জন্য বিদেশের নানা সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছেন, বহুবার।
সম্প্রতি একটি অনলাইন শো 'কার্লি টেলস'-এর এপিসোডে রাহুল বলেন, 'আমি ফ্লোরিডায় থাকার সময়ে স্কুবা ডাইভিং শেখাতাম। পেশা নয়, ভালবাসা ছিল এটা আমরা।' কথায় কথায় তিনি জানান, 'ফ্রি ডাইভিং' বিশেষ প্রিয় বিষয় তাঁরা। ফ্রি ডাইভিং হল, স্কুবার পোশাক বা যন্ত্রপাতি ছাড়াই এক নিঃশ্বাসে সাগরের তলায় যতটা সম্ভব যাওয়া এবং থাকা! রাহুল জানিয়ে দেন, নিয়মিত প্র্যাকটিসে থাকলে তাঁর দম কিন্তু বেশ জোরালো, বহুক্ষণই জলের তলায় থাকতে পারেন দক্ষ ডুবুরির মতো!
জাতীয় স্তরের শ্যুটার (National Level Shooter)
অনেকেই জানেন না, রাহুল গান্ধী একজন জাতীয় স্তরের শ্যুটিং চ্যাম্পিয়ন। ১৯৮৯ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ৩২তম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ২৫ মিটার রেঞ্জের শ্যুটিংয়ে চতুর্থ হন তিনি। তাঁর সেই সার্টিফিকেটটিও কোনও কোনও সময়ে সামনে এসেছে।
পর্বতারোহণের কোর্স (Mountaineering Course)
বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্সও করা রয়েছে রাহুল গান্ধীর। রাজনীতি যেমনই করুন না কেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি যে একজন আদ্যোপান্ত অ্যাডভেঞ্চার-মনস্ক মানুষ, তা তাঁর এই নেশা থেকেই বোঝা যায়। সম্প্রতি মোটরবাইক নিয়ে লাদাখের প্যাংগঙেও গেছেন রাহুল। তাঁকে দেখা গেছে বাইকারদের পোশাকে, মাথায় হেলমেট পরে। সঙ্গে স্পোর্টস বাইক। দেখে বোঝার উপায় নেই, ৫২ বছরের এক রাজনীতিবিদ তিনি। যেন রাজনীতি করছেন ঠিক আছে, আদতে তিনি অভিযাত্রীই!
হার্ভার্ডে পড়াশোনা, কেমব্রিজে ডিগ্রি (Degree from Cambridge)
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট স্টিফেন কলেজে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য ভর্তি হলেও, এক বছর পরে, ১৯৯০ সালে রাহুল গান্ধীকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পরিবারের তরফে। তবে, মাত্র এক বছরই তিনি সেখানে পড়াশোনা করেন, কারণ ১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধী খুন হলে, হার্ভার্ডে নিরাপত্তার সমস্যায় পড়েন তিনি। তখন রাহুল গান্ধীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ফ্লোরিডার রোলিন্স কলেজে। সেখান থেকেই ১৯৯৪ সালে স্নাতক হন তিনি। রোলিন্স কলেজে থাকার সময় রাউল ভিঞ্চি ছদ্মনাম নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন, তাঁর আসল পরিচয় কেবল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানত। তার পরেই রাহুল গান্ধী ১৯৯৫ সালে ভর্তি হয়েছিলেন কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে এবং এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন সেখান থেকেই।
রাহুল গান্ধীকে দেখে কারও কারও বেশ ভাল লাগছে, কেন ভাল লাগছে, কারণগুলো ঠিক কী কী