শেষ আপডেট: 26th December 2024 16:00
সুমন বটব্যাল
'শহর কলকাতা দিয়ে পুরুলিয়াকে গুলিয়ে ফেলবেন না! রাত যত বাড়ে ঠান্ডাও এখানে ততই বাড়ে, দুটো জ্যাকেট পরেও গতরাতে পাহাড়ের কোলে দাঁড়িয়ে রীতিমতো কাঁপতে হয়েছে।'- টেলিফোনের ওপার থেকে নাগাড়ে বলে গেলেন এক বনকর্তা।
ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ থেকে পায়ে হেঁটে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোড়-ময়ূরঝর্ণার জঙ্গলে ঘুরে গত শনিবার বান্দোয়ানের পাহাড়ে আস্তানা গেড়েছে বাঘিনি। প্রায় তখন থেকেই রাইকা পাহাড় সংলগ্ন রাহামদা গ্রামে ঘাঁটি গেড়েছেন বন দফতরের কর্তারা। শুরুর দিকে অনেকেই ভেবেছিলেন, আড়াই বছরের জিনাত কী আর খেলা দেখাবে।
শুরুতে খাঁচায় এলাহি খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। সে আয়োজন এখনও রয়েছে। জঙ্গলমহলে দাপিয়ে কাজ করা বনদফতরের স্পেশ্যাল টিমের পাশাপাশি বাঘিনিকে 'অ্যারেস্ট' করতে আনা হয়েছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের দক্ষ অফিসারদের। আনা হয়েছে অত্যাধুনিক ড্রোন ক্যামেরাও। তবু সবাইকে যেন নাকে দড়ি গিয়ে ঘোরাচ্ছে বাঘিনি!
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে নিয়ে আসা এই বাঘিনির গলায় লাগানো রয়েছে উচ্চ ক্ষমতার রেডিওকলার। তবু কেন তাকে ধরা যাচ্ছে না?
বন দফতর সূত্রের খবর, গত ৬দিন ধরে বাঘিনি রাইকা পাহাড়-জঙ্গলের যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে নেটওয়ার্কের সিগন্যাল খুবই দুর্বল, কিছু এলাকায় আবার নো নেটওয়ার্ক! ফলে বাঘিনির গলায় রেডিও কলার থাকলেও তা বিশেষ কাজে আসছে না। তারই জেরে বাঘিনির গতিবিধি জানতে গিয়ে বারে বারে হোঁচট খেতে হচ্ছে বনকর্তাদের।
বন দফতরের দক্ষিণ-পশ্চিম চক্রের মুখ্য বনপাল বিদ্যুৎ সরকার বলেন, "নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। বাঘিনিকে বাগে আনতে ভিন্ন পরিকল্পনার কথাও ভাবা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনই প্রকাশ্যে কিছু বলা যাবে না।"
ইতিমধ্যে বাঘিনির হাত থেকে গ্রামবাসী ও গবাদি পশুদের বাঁচাতে সুন্দরবনের স্টাইলে জাল দিয়ে ঘেরা হয়েছে রাইকা পাহাড় সংলগ্ন গ্রামটি। বন দফতরের পাশাপাশি পাহারায় নেমেছেন গ্রামবাসীরাও। তবে বাঘিনির 'খোঁজ' এখনও অধরায়।
এক বনকর্তার কথায়, "ক্যাট ফ্যামিলি আইসোলেশন পছন্দ করে। রাইকা পাহাড়ের এই এলাকাটি বেশ নিরিবিলি। তার ওপর জঙ্গল থেকে নিজের মতো শিকারও করে নিচ্ছে। ফলে খাবারের টান না হওয়া পর্যন্ত বাঘিনি নিজের ডেরা থেকে খুব একটা নড়বে বলে মনে হচ্ছে না।"
অগত্যা, বাঘিনির খোঁজে একদা মাও-ভূমে 'অস্থায়ী অফিস'ই বানিয়ে ফেলেছে বন দফতর!