শেষ আপডেট: 30th September 2024 22:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পুরুলিয়া: আগামী ২ অক্টোবর মহালয়া। দেবীপক্ষের শুরু। তার আগেই দেবীপক্ষ শুরু হয়ে গেছে পঞ্চকোটে রাজপরিবার। ১৬ দিন ধরে চলবে এই পুজো। রাবণবধের জন্য রামচন্দ্র দুর্গার 'বোধন' করেছিলেন এই সময়ে। তাই নাম হয় 'অকালবোধন'। সেই মত অনুসারে দেবীপক্ষের আগেই রাজরাজেশ্বরীর ঠাকুরদালানে শিখরবাসিনীর দুর্গাপুজো শুরু হয়।
মহালয়ার এক সপ্তাহ আগে আদরা নক্ষত্রের কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে পুজো হয় পঞ্চাকোট রাজপরিবারে। এখানে গুপ্তমন্ত্রে পূজিতা হন শিখরবাসিনী দুর্গার। দেবীর আসনও থাকে গুপ্ত। পুজোর মন্ত্র এতটাই গোপনীয় যে মন্ত্রের লিপি আজও অপ্রকাশিত। দুহাজারেরও বেশি বছর পরেও সেই মন্ত্র লিপিবদ্ধ হয়নি। বংশধরের জানিয়েছেন, শুধু গাছের ছালে সংস্কৃত ও পালি ভাষায় ৯টি পাতায় ন'টি লাইন লেখা।
লোকমুখে জানা যায় মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়নীর ধার নগরের মহারাজা বিক্রমাদিত্যের বংশধর জগদ্দেও সিং দেওর ছোটো ছেলে দামোদর শেখর সিংদেও বাহাদুর চাকলা পঞ্চকোটরাজের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর পূর্বপুরুষ কুলপ্রথা অনুযায়ী, শকাব্দ ২ থেকে দামোদর শেখর এই পুজো শুরু করেন। তাঁর নামানুসারে এই এলাকার নাম হয় ‘শেখরভূম’। তাই দেবীর নামও রাখা হয় শিখরবাসিনী দুর্গা।
পঞ্চকোট রাজপরিবারের সদস্য সৌমেশ্বরলাল সিং জানিয়েছেন, ঐতিহ্যশালী বেদিতে দেবী নিত্যপুজো হয়। মহাসপ্তমীর দিন মাঝরাত থেকে পুজোর পর্বে দশমীর পূর্বাহ্ন পর্যন্ত দেবী মূর্তি গুপ্ত আসনে বসানো হয়। দেবী গুপ্ত আসনকে বলা হয় ‘সোড়ন’। এই সময় একটি তলোয়ারও পুজো পায়। যার নাম ‘ভূতনাথ তাগা’।
শিখরবাসিনী দুর্গা এখানে অষ্টধাতুর তৈরি। তিনি চতুর্ভুজা। একহাতে তাঁর জপমালা, অন্যহাতে বেদ এবং বাকি দুই হাতে বরদা ও অভয়া। গলায় রয়েছে নর মুণ্ডমালা। পদ্ম ফুলে অধিষ্ঠান দেবীর।
পঞ্চকোট রাজ দেবোত্তরর সেবাইত বিশ্বজিৎপ্রসাদ সিং দেও। তিনি জানিয়েছেন, ৮০ তম পুরুষ ধরে এই গুপ্ত মন্ত্রে মায়ের পুজো করছেন তাঁরা পরিবার। গুপ্ত মন্ত্র তাঁর মুখস্থ হয়ে গেছে।
কথিত আছে এই রাজপরিবারে এসেছিলেন যদুভট্ট। বেনারস থেকে দুর্গাপুজোতে গান গাইতে আসতেন গহরজান, জানকীবাই, মালকার মত সঙ্গীতজ্ঞরা। ঝাড়খণ্ড থেকে আসতেন কমলা ঝরিয়াও।