খরুন গ্রামের দুর্গাপুর পুজো
শেষ আপডেট: 12th September 2024 16:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো, বীরভূম: পুজোর দিনে সন্ধ্যারতি দিতে গিয়ে ঘরে ফেরেনি এক কুমারী। খোঁজাখুঁজি করলে দুর্গা প্রতিমার পাশে শাড়ির লাল পার পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামের মানুষ। তখন থেকেই তাঁদের বিশ্বাস, ওই কুমারীকে ভক্ষণ করেছেন দেবী। সেই থেকে মাটির মূর্তি গড়া বন্ধ হয়ে যায় রায় পরিবারে। তারপর থেকে শুরু হয় পটের প্রতিমায় পুজো। মাটির ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। খরুনের রায় পরিবারে এটাই রীতি হয়ে আসছে।
খরুন (মতান্তরে করুণ)-বেলিয়া-চাকপাড়া, মাঝখানে রয়েছে তারাপীঠ মন্দির। মন্দিরের কাছে বিশেষ উল্লেখযোগ্য গ্রাম খরুন। গ্রামে সবক'টি পুজোই হচ্ছে পাঁচ বংশের সাবেকি পুজো। সব বাড়ির পুজো শুরু হয় রায় বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপ থেকে। ৩৫০ বছর ধরে এই রীতি চলে আসছে। প্রথাভাঙা এই পুজোর নিয়মকানুন অনেকটাই আলাদা। বিজয়া দশমীতে উমার বিসর্জন হয় না, দেবী ভাসান যান পরের বছর মহালয়ার দিনে।
গ্রামের জমিদার রামনিধি রায় ও রামকানাই রায় যৌথ উদ্যোগে খরুন গ্রামে দুর্গাপুজো শুরু করেন। লোকমুখে শোনা যায়, পুজোর দিনে রায় বংশের এক কুমারী মেয়ে পুজোর দিনে মন্দিরে ঢুকে সন্ধ্যারতি করতে গিয়েছিল। এরপরেই মেয়েকে মন্দিরে থেকে আর বের হচে দেখেননি কেউ। রাতে বাড়িতেও ফেরেনি সে। খোঁজাখুঁজির পরে জমিদার বাড়ির লোকমন্দিরে ঢুকলে কুমারী ওই মেয়ের শাড়ির লাল পাড়ের টুকরো দেবীমূর্তির পাশে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই অঘটনের পর থেকেই নাকি মূর্তি গড়ায় মাটির ব্যবহারই নিষিদ্ধ করে দেন রায়েরা। শুরু হয় পট পুজোর প্রচলন।
গোটা বছর জুড়েই এখানকার দুর্গা মন্দিরে নিত্যপুজো পান পটের দুর্গা। বছরভর পুজোর পর সেই একচালা পটমূর্তির নিরঞ্জন হয় পরের বছর মহালয়ার দিন বিকেলবেলা। এবছরও প্রথার অন্যথা হবে না। তারপর পিতৃপক্ষের শেষে প্রতিপদের সূচনায় ঘটে জল ভরে বলিদানের মধ্যে দিয়ে নতুন করে সেই বছরের পুজোর সূচনা হয়। মহাষষ্ঠীর সন্ধেয় অন্য চার বাড়ির সদস্যরা রায় বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে বসেই একসঙ্গে বসে নবপত্রিকা বাঁধেন। সপ্তমীর দিন দেবী বন্দনার পর শুরু হয় সিঁদুর খেলা। এমনকি সন্ধিপুজোতেও কালো ছাগলের বদলে ধপধপে সাদা ছাগল বলি দেওয়া হয়। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত রায় পরিবারের বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে না। ওই তিন দিন পরিবারের তিন শতাধিক সদস্য একসঙ্গে বসে মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করেন।