শেষ আপডেট: 28th October 2024 13:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পুরুলিয়া: সোনালি ধানের খেত লুঠতে গ্রামে হানা দিত ডাকাত দল। চাষিদের মেহনতের ফসল আগলে রেখেছিলেন স্বয়ং দেবী কালী। তাই ডাকাতদের রোষের মুখে পড়েছিলেন তিনি। ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল তাঁর মূর্তিও। কাটা গিয়েছিল নাক। সেই থেকে পুরুলিয়া শহরের চিরাবাড়ি এলাকার দেবীকে নাক কাটা কালী বলেই ডাকেন সকলে।
লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে, এক সময়ে পুরুলিয়ার শহরের এই এলাকায় তেমন জনবসতি ছিল না। এলাকা জুড়ে ছিল বিঘে বিঘে জমি। সেখানে ধান পাকলে ডাকাত দল হানা দিত। লুঠ হতে থাকত বিঘে বিঘে ফসল। এমনকী বাসিন্দাদের বাড়িতে লুঠপাট চালাত ডাকাতরা। বার বার ক্ষতির মুখে পড়ায় সম্বল বাঁচাতে এলাকার একটি অশ্বত্থ গাছের নীচে শ্যামাকালীর পুজো শুরু করেন এলাকাবাসী।
তারপরে ডাকাত দল গ্রামে লুটপাঠ চালাতে এলেই নূপুরের আওয়াজ পাওয়া যেত। নূপুরের শব্দে সজাগ হয়ে যেতেন গ্রামবাসীরা। এলাকার বাসিন্দারা রুখে দাঁড়াতেই পালাত ডাকাতদলও। এরপরেই শ্যামাকালীর মূর্তির উপর আঘাত হানে ডাকাতদল। রাগে তারা মূর্তি ভাঙার চেষ্টা করে। তখনই দেবীমূর্তির নাক কেটে দেয় তারা। এই ঘটনার পরেই এক এক করে ডাকাতদলের সদস্যরাও অঘটনের শিকার হতে থাকেন। কারও মৃত্যু হয়, কারও পরিবারে অভাব দেখা দেয়।
এদিকে দেবীর ছিন্নভিন্ন মূর্তিকে পুজো করতে থাকেন গ্রামের মানুষ। এখনও মন্দিরের চাতালে ছড়িয়ে রয়েছে দেবীর কাটা হাত, পা, জিভ, নাক। এই অবস্থাতেই আজও পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী। এলাকার মানুষ দেবীকে জাগ্রত বলে মনে করেন। কালীপুজোর চারদিন দেবীর পুজো ঘিরে উৎসবে মাতেন মানুষ। এই সময়ে মানত করলে সেই ইচ্ছে পূরণ হয়। রাতে পুজো দেখতে ভিড় জমে পুরুলিয়ার নাক কাটা কালী মন্দিরে।
দেবীর নিত্যপুজোর সঙ্গে কালীপুজোর দিনে থাকে বিশেষ আয়োজন। মন্দিরে সেদিন বলির মাংস দিয়ে খিচুড়ি প্রসাদ রান্না হয়। এই প্রসাদ পেতে রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। মন্দির চত্বরে রয়েছে দুশো বছরের বেশি পুরোন সেই অশ্বত্থ গাছ। মন্দিরের পাশেই রয়েছে বজরংবলি ও শিবের মন্দির।