শেষ আপডেট: 9th August 2024 13:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পুরুলিয়া: পরাধীন ভারতে নীলকরদের অবর্ণনীয় অত্যাচারের প্রতিবাদে বিদ্রোহ করেছিলেন কৃষকরা। ইতিহাসে ১৮৫৯ সালের সেই বিদ্রোহ নীল বিদ্রোহ নামে খ্যাত। এর প্রতিটি পর্বের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ ও অত্যাচার। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পর সেই নীলচাষই আবার দিশা দেখাচ্ছে মানবাজারের টুক্যা আর মোহনডি গ্রামের মানুষকে।
এই গ্রামের মানিক মুর্মু, বাপি সরেনরা একসময় কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছিলেন ভিন রাজ্যে। পরিযায়ী শ্রমিকের দলে নাম লিখিয়ে চলে গেছিলেন ঘর দুয়ার ছেড়ে। সেই পরিযায়ী শ্রমিকরা এখন নীলচাষ করে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন। এ কাজে পুরুষদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন গ্রামের মহিলারাও। বাড়ির লোকটাকে এখন আর পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিন রাজ্যে যেতে হচ্ছে না। এতেও খুব শান্তি পাচ্ছেন তাঁরা।
পুরুলিয়ার মানবাজার ১ ব্লকের টুক্যা এবং মোহনডি এই দুটি গ্ৰামে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকজন তাঁত শিল্পের জন্য যুক্ত ছিলেন। সেই তাঁত শিল্প এখন অবলুপ্তির পথে। মহাত্মা গান্ধী গ্রাম উদ্যোগ সেবা সংঘ ফাউন্ডেশন এই তাঁত শিল্পকে পুনরায় উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে এগিয়ে এসেছিল। তাঁতের কাপড় বোনার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে তাঁতের কাপড়কে রঙিন করতেও উদ্যোগী হয়েছে তারা। সারা বিশ্বজুড়ে নীলের একটা আলাদা রকম চাহিদা রয়েছে। এমনিতেই পুরুলিয়া মানেই বন্ধ্যা জমির আধিক্য। বর্ষা না হলে এখানে চাষ হয় না। চাষিরা বসে থাকেন আকাশের দিকে তাকিয়ে। এইরকম পরিস্থিতিতে ধান চাষের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি, যেখানে কোনও চাষই হয় না সেই জমি ব্যবহার করে এলাকার মানুষকে সংগঠিত করে নীল চাষে উদ্যোগে নেয় ওই সংস্থা। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য রুবি রক্ষিত বলেন, যেখানে কোনও চাষই হয় না, সেখানে নীল চাষ মানুষকে নয়া দিশা দেখাতে পারে।
পুরুলিয়া এবং পরিযায়ী শ্রমিক এই দুটি প্রায় সমার্থক শব্দ। জেলায় কোনও কাজ নেই তাই বাধ্য হয়ে এ জেলা থেকে দলে দলে বেকার যুবকরা চলে যায় দক্ষিণ ভারতে। ভিন রাজ্যে কাজ করতে এই টুক্যা গ্রামের যুবকরাও একসময় পাড়ি দিয়েছিল পুনে, হায়দ্রাবাদ প্রভৃতি জায়গায়। ফিরে এসে নীল চাষে উদ্যোগী হয়েছে তারা। নীল চাষ করে রং তৈরি করে তারা তাঁতের কাপড় রঙিন করতে ব্যবহার করছেন। বিকল্প আয়ের নতুন দিশা পেয়ে এরা আর কেউই বাইরে যেতে চান না। এমনই এক চাষি মানিক মুর্মু বলেন, "ধান লাগালে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হত। নীল চাষ করতে গিয়ে দেখছি জলের তেমন দরকার হয় না। একবার চাষ করলে তিনবার ফসল পাওয়া যায়। এর থেকে আর ভাল কী হতে পারে। এখন আর বাইরে কাজের জন্য যাই না।"
বাড়ির মহিলারাও পুরুষদের সঙ্গে সমান তালে নীল চাষ করছেন। পাশাপাশি তাঁতের কাপড় বুনে সেই কাপড়কে রঙিন করছেন তাঁরা। সে কাজে নীলের পাশাপাশি পলাশ, শিমুল, পেঁয়াজ, ব্যবহার করছেন এগুলিও। মহিলারা কেউ আবার গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য। কেউ শাসক দল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ। তারাও খুশি নীল চাষ করে। কারণ একলপ্তে আয় বেড়েছে অনেকটাই। আপাতত কুড়ি বিঘা জমিতে কুড়িটি পরিবার নীল চাষ করে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন।