শেষ আপডেট: 28th October 2024 16:02
ঋতভাষ চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম
বয়স সবে ১০। এই বয়সেই নারী সুরক্ষার কথা চিন্তা করে একটি যন্ত্র বানিয়ে সবাইকে চমকে দিল লাভপুর বিডিও অফিসপাড়ার বাসিন্দা অনুরাগ মজুমদার ওরফে ইমন।
ইমনের বাবা মুক্তিশ্বর পেশায় গ্রাফিকস ডিজাইনার, মা সঙ্গীতা স্থানীয় বেসরকারি স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষিকা। পশ্চিম কাদিপুর জুনিয়র হাইস্কুলের ক্লাস ফাইভের ছাত্র সে। এই বয়সেই এমন একটা যন্ত্র তৈরি করছে ইমন, যার সাহায্যে বিপদে পড়া কেউ সঙ্গে সঙ্গে নিজের অবস্থানের কথা জানাতে পারবে পুলিশকে। বিজ্ঞান নিয়ে তার জ্ঞান ও গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় কলেজের লাইব্রেরি এবং ল্যাবরেটরি ব্যবহার করারও ব্যবস্থা করে দিলেন স্বয়ং জেলাশাসক।
ইমন যে যন্ত্রটি বানিয়েছে তার মাধ্যমে যে কেউ কোনও জায়গায় বিপদে পড়লে মাত্র একটি বাটন প্রেস করেই রিয়েল টাইম ও তার লাইভ লোকেশন সহ বিপদ সংকেত পৌঁছে দেবে স্থানীয় থানায়। মূলত, এই ডিভাইসের মধ্যে রয়েছে ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার ডিভাইস। যার মধ্যে ট্রান্সমিটার ডিভাইসগুলি থাকবে সাধারণ মানুষের কাছে। এবং রিসিভার ডিভাইসগুলি থাকবে থানায়। এর সঙ্গে থাকবে একটি অ্যাপ ।
ইমনের কথায়," যদি রাস্তায় কেউ বিপদে পড়ে তাহলে ট্রান্সমিটার ডিভাইসের বাটন প্রেস করলেই GPS এর মাধ্যমে রিয়েল টাইম এবং লাইভ লোকেশন সহ বিপদ সংকেত পৌঁছে যাবে তার সবথেকে কাছাকাছি থাকা থানার রিসিভার ডিভাইসে । বিপদ সংকেত যাওয়া মাত্রই বাজতে শুরু করবে অ্যালার্ম । সঙ্গে সঙ্গে তাঁর তৈরী ওয়েব অ্যাপের মাধ্যমে পুলিশ সেই ডিভাইসের লাইভ লোকেশন ট্র্যাক করে পৌঁছে যাবে বিপদে পড়া ব্যক্তির কাছে।" এই হিউম্যান সিকিউরিটি অ্যালার্ট অ্যান্ড রেসকিউ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের নাম দেওয়া হয়েছে আরএল ডিভাইস ।
কেন এমন যন্ত্র তৈরির কথা ভাবল ইমন, সেই গল্পও শোনাল সে। এক বছর আগে তার বোন রাজলক্ষীর জন্ম হয়। বোনের নিরাপত্তার কথাটি তারপর থেকেই মাথায় ঘুরত ইমনের। সে বলে, "ছোট্ট বোনের জন্মের পর আমি ভাবি ও যদি কখনও বিপদে পড়ে, কীভাবে তখন বাঁচাব ওকে! তখনই আমার মাথায় এই ডিভাইস তৈরির ভাবনা আসে। গত সাত মাস আগে থেকে এই ডিভাইস তৈরি করা শুরু করি। এখন তা তৈরি হয়ে গিয়েছে।"
বাবা মুক্তিস্বর মজুমদার জানান, যখন মাত্র ছয় বছর বয়স তার, তখন থেকেই ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির মতো বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সে কথা বলত। তিনি বলেন, "আমরা এই বিষয়গুলো না জানায় প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শিক্ষক এবং অধ্যাপকদের কাছে ওকে যখন নিয়ে যাই তখন সেই শিক্ষকরা আমায় বলেন এইটুকু বাচ্চা, স্নাতক স্তরের ছাত্রদের পড়াশোনার বিষয় গড় গড় করে সঠিক ভাবে বলছে। তখন থেকেই আমরা তাকে উৎসাহ দিতে শুরু করি । ইমনের মা কম্পিউটারের শিক্ষিকা হওয়ায় সেও বিভিন্ন কোডিং করে তাকে সাহায্য করতে থাকে। এক বছর আগে আমাদের একটি মেয়ে হওয়ার পরেই আমাদেরকে এই ডিভাইসটির কথা বলে ও। গত ডিসেম্বর মাস থেকে এই ডিভাইসটি বানানো শুরু করে।"
লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিনহা ইমনের এমন মেধার পরিচয় পেয়ে তাঁকে জেলাশাসকের কাছে নিয়ে যান। এবং জেলাশাসক বিধান রায়ও সব জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "আজ একটা অদ্ভুত বিষয়ের সাক্ষী থাকলাম ।এবং আমি গর্বিত যে আমি জেলাশাসক থাকাকালীন এমন একটা বিষয়ের সম্মুখীন হলাম । এই শিশুকে বিস্ময় বালক বলা হলেও কম বলা হবে। জীবনবিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিততো রয়েছেই তার প্রতিটা শাখা-প্রশাখাতেও ওর অবাধ বিচরণ রয়েছে। এছাড়াও সে মানব কল্যাণ নিয়ে ভাবছে। ক্যান্সারের সেলকে কীভাবে নষ্ট করা যায় সেটা নিয়েও সে ভাবছে এবং তার একটা তথ্যসম্ভার তৈরি করেছে।"
তিনি জানান, ইমন কোনও কলেজের ল্যাবরেটরি ব্যবহার করতে ও লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করতে চায়। তার জন্য তাঁরা স্থানীয় লাভপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সঙ্গে কথা বলে সমস্ত ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এছাড়াও বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজি মিউজিয়ামের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন যাতে তার উদ্ভাবন করা জিনিসগুলো সে মেলে ধরতে পারে।