শেষ আপডেট: 1st March 2024 10:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নিউ ইয়র্ক, অস্ট্রেলিয়া, কুইনসল্যান্ডের প্রত্যন্ত জঙ্গল এলাকা থেকে দু’চারটে ডাইনোসরের হাড়গোড় পাওয়া গেল সেটা ঠিক আছে। প্রাগৈতিহাসিক দানবেরা সেসব এলাকায় একসময় দাপিয়ে বেড়াত এমন কথা সকলেই শুনেছে। তাই বলে বাংলার বুকে ডাইনোসর?
ভাবুন তো, খাস পুরুলিয়া জেলায় হাঁটাহাঁটি করছে কোনও বিশালাকায় ডাইনোসর! তেমনটা হয়েছিল কিনা জানা নেই, তবে পুরুলিয়ার ‘অস্থি’ পাহাড়ে ডাইনোসরের প্রচুর হাড়গোড় পাওয়া গেছে যা নিয়ে রীতিমতো হইহই রইরই চলছে। এতদিন বিদেশের মাটিতেই ডাইনোসরের অস্থি, জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা, এবার বাংলার বুকে ডাইনোসরের জীবাশ্মের খোঁজ পাওয়ার পর থেকে বেশ একটা অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভেঞ্চার আবহ তৈরি হয়েছে পুরুলিয়ায়।
পুরুলিয়ার অস্থি পাহাড়জুড়ে ছড়িয়ে ডাইনোসরের অস্থি
জলপাইগুড়িতে ৬ কোটি বছর আগের ডাইনোসরের ডিম উদ্ধার হওয়ার পরে সে নিয়ে তুমুল হইচই হয়েছিল। আর পুরুলিয়ায় খাস ডাইনোসরের শরীরের নানা অংশের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। ঝালদা ২ নম্বর ব্লকের চিতমুগ্রাম পঞ্চায়েতের তাহেরবেড়া গ্রাম সংলগ্ন মাড়ামু মৌজায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য হল অস্থি পাহাড়। কারণ এই পাহাড়ে আগে বহুবার বিভিন্ন প্রাণী, বিলুপ্তপ্রায় জীবের অস্থি পাওয়া গিয়েছিল। তাই নাম ‘অস্থি পাহাড়’। ২০০ ফুট উঁচু এই পাহাড়ে বিশালাকার ডাইনোসরের লেজের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সেখানকার আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ।
ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড এই ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের জীবাশ্মবিদদের সঙ্গে কথা বলছে। পুরুলিয়া প্রশাসন কিন্তু কোনওভাবেই আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের দাবিকে উড়িয়ে দেয়নি।
পুরুলিয়ার অস্থি পাহাড় বৈচিত্র্যময়। একানে যেমন নানা প্রাণীর জীবাশ্ম আগেও পাওয়া গেছে, তেমনই সন্ধান মিলেছে পৃথিবীর অনেক প্রাচীনতম শিলার। এই পাহাড়ে অনুসন্ধান চালালে আরও অনেক রহস্যের খোঁজ পাওয়া যাবে বলেই মনে করে আনন্দমার্গ সংঘ। জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে অস্থি পাহাড়ের ব্যাপারে জানানোও হয়েছে। আনন্দমার্গের সদর দফতরের রেক্টর মাস্টার আচার্য নারায়ণানন্দ দাবি করেছেন, অস্থি পাহাড়ে সত্যি সত্যিই ডাইনোসরের অস্থি পাওয়া গেছে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে সেগুলো বৃহদাকার কোনও ডাইনোসরের জীবাশ্ম। সেই ডাইনোসরের লেজের অংশ কলকাতার লেক গার্ডেন্স-এ গুরুদেব আনন্দ মূর্তিজীর বাসভবন মধুমালঞ্চর সংগ্রহশালায় নিয়ে আসা হয়েছে। এই জীবাশ্মের কার্বন ডেটিং করলেই তা পুরনো বোঝা যাবে।
৯ কোটি বছর আগে এরা পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াত। কেউ বিশাল লম্বা গলা, উঁচু পিঠ, হাতির মতো পা, সুবিশাল শাকাহারী টিটানোসর বা সেই গোত্রীয়, কারও আবার তীক্ষ্ম দাঁত, নখ, টি-রেক্স বা সেই গোত্রীয় শিকারি বা প্রিডেটর ডাইনোসর। ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষের দিকে এই প্রজাতির ডাইনোসররা ছিল পৃথিবীর দীর্ঘতম সরীসৃপ। আদিম পৃথিবীর সরীসৃপদের নিয়ে মানুষের কৌতুহল কম কিছু নয়। পৃথিবীর যত্রতত্র খুঁড়ে হারিয়ে যাওয়া এই সরীসৃপদের জীবাশ্ম টেনে বের করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। এখনও অবধি ডাইনোসরদের যত রকমের জীবাশ্ম বা ফসিল পাওয়া গেছে, তাদের কম্পিউটার মডেলে ফেলে হাড়ের ওপর মাংস-চামড়ার প্রলেপ বসিয়ে যে আকার ও গঠন পাওয়া গেছে তাই বইয়ের পাতায়, সিনেমার পর্দায় ফুটে উঠেছে। পুরুলিয়ায় ডাইনোসরের জীবাশ্মের খোঁজ নিঃসন্দেহে বড় আবিষ্কার বলেই মনে করছেন জীবাশ্মবিদরা। জীবাশ্মের অংশ পরীক্ষা করলেই আরও অনেক নতুন তথ্য পাওয়া যাবে বলেই মনে করছেন তাঁরা।