শেষ আপডেট: 21st June 2023 15:18
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পরশু শুক্রবার পাটনায় হতে চলেছে বিজেপি বিরোধী দলগুলির মহা-সম্মেলন। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে নাম করেই কংগ্রেসকে নিশানা করলেন শরদ পাওয়ারের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির সদ্য নির্বাচিত কার্যকরী সভাপতি প্রফুল প্যাটেল। নাম না করে তীব্র আক্রমণ শানালেন সনিয়া গান্ধীকে। পাটনার সম্মেলনে সনিয়া উপস্থিত থাকবেন না। কিন্তু পাওয়ার যেমন থাকবেন, তেমনই কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের সঙ্গী হবেন রাহুল গান্ধী।
পঁচিশ বছর আগে জুন মাসেই পাওয়ারের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করেছিল এনসিপি। বুধবার মুম্বইকে দলের ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে পাওয়ার, তাঁর মেয়ে এনসিপির আর এক কার্যকরী সভাপতি সুপ্রিয়া সুলে এবং ভাইপো তথা মহারাষ্ট্র বিধানসভার বিরোধী দলনেতা অজিত পাওয়ারের উপস্থিতিতে প্রফুল পুরনো ঘটনা টেনে আনেন। সরাসরি কংগ্রেসের নাম করে আক্রমণ শানালেও তিনি মূলত নিশানা করেন সনিয়া গান্ধীকে।
মহারাষ্ট্রে বিরোধী জোট মহা বিকাশ আগাড়ির অন্যতম শরিক এনসিপি এবং কংগ্রেস। শরিক দলের শীর্ষ নেতা প্রফুলের বক্তব্য নিয়ে কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে ঘরোয়াভাবে অনেকেই মনে করছেন, পাটনার সম্মেলনের আগে এই প্রসঙ্গ না এলেই ভাল হত। তবে কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের মত স্বয়ং শরদ পাওয়ার বা তাঁর দলের অতীত বিবাদ খুঁচিয়ে তোলা এজেন্ডা নয়। প্রফুল আবেগতাড়িত হয়ে পুরনো প্রসঙ্গ টেনেছেন।
এনসিপির সদ্য দায়িত্ব প্রাপ্ত কার্যকরী সভাপতি বলেন, ‘কংগ্রেসের অভিভাবক পরিবারের (পড়ুন গান্ধী পরিবার) আপত্তিকে দেশের সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি শরদ পাওয়ার দু-দু’বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। পারেননি কংগ্রেসের সভাপতি হতেও। তাই পঁচিশ বছর আগে প্রিয় দল ছেড়ে এনসিপি গড়তে হয়েছিল এই নেতাকে।’
পাওয়ারের সঙ্গে তখন হাত মিলিয়েছিলেন কংগ্রেসের মাত্র দু'জন প্রথমসারির নেতা মেঘালয়ের পিএ সাংমা এবং বিহারের তারিক আনোয়ার। সাংমা পরবর্তীকালে লোকসভার স্পিকার হন।
শরদ পাওয়ার কংগ্রেস ছেড়ে নিজের দল গড়ার গোটা পর্বের পিছনেই ছিল সনিয়া গান্ধীকে ঘিরে বিবাদ। আগের বছর অর্থাৎ ১৯৯৮-এ সনিয়া কংগ্রেসের সভাপতি হওয়া মাত্র অটল বিহার বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদবানীদের নেতৃত্বে বিজেপি বিদেশিনী ইস্যুতে নয়া কংগ্রেস সভাপতিকে নিশানা করা শুরু করে। পদ্ম শিবির দাবি তোলে কংগ্রেসকে ঘোষণা করতে হবে যে জন্মসূত্রে বিদেশি কাউকে তাঁরা দেশের প্রধানমন্ত্রী করবে না।
দলের মধ্যে বিজেপির এই দাবির সমর্থনে আওয়াজ তোলেন পাওয়ার, সাংমারা। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির একটি বৈঠকে সনিয়ার উপস্থিতিতেই পাওয়ার বলে বসেন, ‘দলের উচিৎ এই মর্মে প্রস্তাব নেওয়া যে জন্মসূত্রে বিদেশি কেউ দলের সভাপতি এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।’
সনিয়া সেদিন পাওয়ারের কথায় রা না কাড়লেও ওয়ার্কিং কমিটির বাকি সদস্যদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়েন মারাঠি নেতা। এর ক’দিন পরেই কংগ্রেস তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিস ধরায় কেন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না জানতে চেয়ে। পাওয়ার সেই চিঠি উপেক্ষা করলে কংগ্রেস তাঁকে বহিষ্কার করে। তিনিও বহিষ্কারের তোয়াক্কা না করে নিজের দল গড়েন। যদিও পাওয়ার এরপরও পুরনো দলের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে গিয়েছেন বরাবর। মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের কৃষি ও সমবায় মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন পাওয়ার। প্রফুল ছিলেন অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী।
তাঁর বিশ্বস্ত সৈনিক প্রফুল এদিন আরও পিছিয়ে গিয়ে দাবি করেন, ১৯৯১-এ রাজীব গান্ধী এলটিটিই জঙ্গিদের হাতে নিহত হওয়ার পর কংগ্রেস সরকার গড়ার সুযোগ পেলে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সহমত তৈরি হয়েছিল শরদ পাওয়ারের নামে। কিন্তু কংগ্রেসের ক্ষমতাবান পরিবারটি তা চায়নি। তাই নরসিংহ রাওকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার এগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
১৯৯৬-এর লোকসভা ভোটের পর কংগ্রেস সবচেয়ে বেশি আসনে জিতলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দল সরকার গঠনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। প্রফুলের দাবি, সেই সিদ্ধান্তও করা হয়েছিল কংগ্রেসের ক্ষমতাবান গান্ধী পরিবারের তরফে। কারণ, সেবারও দলের অনেকেই চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হোন শরদ পাওয়ার।
মোদীকে ভারতে মানবাধিকার নিয়ে সতর্ক করুন, বাইডেনকে আর্জি ৭০ আইন প্রণেতার