শেষ আপডেট: 18th September 2024 18:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিগত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন রাজ্যের একাধিক জেলা। তার উপরে ডিভিসি লাগাতার জল ছাড়ায় দক্ষিণবঙ্গের একাধিক প্রান্তে রীতিমতো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে জলবন্দি মানুষদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ। স্পিডবোট, নৌকো নিয়ে বানভাসি এলাকাগুলিতে চলছে লাগাতার টহল। জায়গায় জায়গায় বিলি হচ্ছে ত্রাণ। মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে এলাকাবাসীদের। বন্যার্তদের বাঁচাতে পুলিশ-প্রশাসনকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষও।
আজ বুধবার সকাল থেকে দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলা পুরোপুরি প্লাবিত। হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ার বহু এলাকা আক্ষরিক অর্থেই জলের নীচে। জলে ভেসে মারা গেছে কেশপুরের ১০ বছর বয়সি এক শিশু। দাসপুরে ভেঙে পড়েছে বাড়ি।পাশে আছি
— West Bengal Police (@WBPolice) September 18, 2024
বন্যায় প্লাবিত হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ার বহু এলাকা। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে জলবন্দি মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ। বন্যার্ত মানুষকে বাঁচাতে পুলিশ-প্রশাসনকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন… pic.twitter.com/ErSSijvEmh
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখতে সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখেছেন তিনি। কথাও বলেছেন পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার এবং জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরির সঙ্গে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলিতে ত্রাণ ঠিকমতো পৌঁছেছে কিনা, সেই খোঁজও নেন তিনি। আজ রাতে তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরেই থাকবেন।
গত কয়েকদিনের টানা বৃ্ষ্টি এবং মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ছাড়া জলের ফলে হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বর্ধমান-সহ দক্ষিণবঙ্গের বহু জেলায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরপরই বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। হাওড়া, হুগলির একাধিক জায়গা পরিদর্শন করেন। টেলিফোনে কথা বলেন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। কোন কোন এলাকা প্লাবিত, জলবন্দি কত মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের ত্রাণের ব্যবস্থা-সবকিছুরই খোঁজ নেন।
এদিন বেলা ১২টা নাগাদ হাওড়া হয়ে হুগলিতে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। পুরশুড়ায় যাওয়ার পথে একটি সেতুর ওপরে বহু বানভাসি মানুষকে দেখে গাড়ি থামান। কথা বলেন বন্যা কবলিত মানুষজনের সঙ্গে। এরপরই ডিভিসির বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "আমি নিজে মঙ্গলবার ডিভিসির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছিলাম। ডিভিসি আরও ২ লক্ষ কিউসেক জল ধরে রাখতে পারতো। তবু পরিকল্পিতভাবে জল ছেড়ে বাংলাকে ডোবাল! এটা ম্যান মেড বন্যা।"
সূত্রের খবর, সোমবার থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ডিভিসি প্রায় দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ে। এর ফলে কুরচি শিবপুর, কানুপাট মনসুকা এবং সিংটি শিবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কমপক্ষে ১৬টি গ্রাম ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গতকাল, মঙ্গলবারই এই নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার আলাপন জানান, প্রবল বৃষ্টির কারণে মাইথন, পাঞ্চেত ও দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে লাগাতার জল ছাড়া হচ্ছে। এর ফলে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, সিনিয়র অফিসারেরা সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
তিনি জানান, দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা থেকে মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নিম্নলিখিত জেলাগুলিতে নজরদারির জন্য বিশেষ সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একথা জানানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বন্যা বেড়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এবং পরিকল্পনামতোই উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পুলিশ-প্রশাসন। একাধিক শিবির করে সরানো হচ্ছে দুর্গতদের, বিলি হচ্ছে ত্রাণ।
সোমবার রাতেই রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতি কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণের কথাও ঘোষণা করেছিলেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই রাজ্যের এমন পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।