শেষ আপডেট: 20 May 2023 09:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তাঁরা আগে একাধিকবার ফোনে কথা বলেছেন। একে অপরকে বার্তা পাঠিয়েছেন। পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন। অবশেষে, পরমাণু বোমার স্মৃতি আঁকড়ে থাকা শহরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের নেতার সঙ্গে প্রথমবার সামনাসামনি দেখা করলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সর্বাধিনায়ক। (PM Modi met President Zelenskyy)
হিরোশিমায় (Hiroshima) এবারের জি৭ সম্মেলন (G7) শুরু হবার আগে থেকেই তাঁকে ঘিরে আগ্রহ তুঙ্গে ছিল। জানিয়ে দিয়েছিলেন, স্বয়ং উপস্থিত হবেন জাপানে। অবশেষে, জাপান টাইমসের খবর, দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ হিরোশিমা বিমানবন্দরের মাটি ছোঁয় তাঁর ফরাসি যুদ্ধবিমান। জলপাই জ্যাকেটে নেমে আসেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আর সন্ধ্যেতেই প্রথমবার তাঁর মুখোমুখি হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সংবাদসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, রবিবার জেলেনস্কি দু'টি আলাদা বৈঠকে অংশ নেবেন। একটিতে শুধুমাত্র জি৭ সদস্যরা থাকবেন এবং সেখানে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। দ্বিতীয়টিতে জি৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশের রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে আমন্ত্রিত দেশের সদস্যরাও যোগ দেবেন এবং আলোচনা হবে 'শান্তি ও সুস্থিতি'-কে ঘিরে।
ভারত এবং ইউক্রেন কেউই জি৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশ নয়। তবে বরাবরই দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উদীয়মান শক্তি হিসেবে ভারত সসম্মানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকে। এবারেও ভারতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল জি৭ আহ্বায়ক জাপান। সাড়া দিয়ে জাপান সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। পাশাপাশি রুশ হামলার পর থেকেই বিশ্বজোড়া জনমত গঠনে উদ্যোগী ইউক্রেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভাসমিতিতে নিয়মিতভাবে উপস্থিত থেকেছে। তবে জেলেনস্কি বেশিরভাগ সময়েই থাকতেন 'ভার্চুয়ালি'। কিন্তু এবারে জাপানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সশরীরে জাপান এসেছেন তিনি।
সূত্রের খবর, দুই দেশের কূটনীতিকদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনার পরে অবশেষে হিরোশিমায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। মোদী বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ শুধুমাত্র আর্থিক বা রাজনৈতিক লড়াইতে আটকে নেই। তাঁর কাছে এটি একটি মানবতাবিরোধী ঘটনা। আশ্বাস দিয়েছেন, 'ভারত সরকার বা আমি নিজে এর দ্রুত অবসানের জন্য যা যা করা সম্ভব তার সবই করব।'
পরে দুই দেশের শীর্ষকর্তারা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও বসেন। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীর করা এক টুইটে দেখা যায়, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-সহ একাধিক শীর্ষকর্তাকে নিয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসেন মোদী। জেলেনস্কির সঙ্গে ছিলেন ইউক্রেনের একাধিক সামরিক ও কূটনৈতিক কর্তা। মোদী জেলেনস্কিকে বলেন, 'যুদ্ধের যন্ত্রণা যে কী, সেটা তো আপনি আমাদের থেকে অনেক বেশি জানবেন। কিন্তু গত বছর যখন আমাদের ছাত্ররা ইউক্রেন থেকে ফিরে এল, তারা এসে যা বিবরণ আমাদের শুনিয়েছে, তাতে আপনাদের যন্ত্রণা যেন অনেক বেশি করে উপলব্ধি করতে পারছি।' অরিন্দম নিজেও সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাকরঁর সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলেছেন। দুই রাষ্ট্রনেতাই শুরু থেকে চূড়ান্তভাবে ইউক্রেনের পাশে থেকেছেন, সমর্থন জুগিয়েছেন। বরিস জনসন এবং ঋষি সুনক দু'জনেই ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত রাজধানী কিভে গিয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছেন। জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসেও ঘুরে এসেছেন। সম্প্রতি রাজা চার্লসের অভিষেকে উপস্থিত ছিলেন ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে জেলেনস্কির সাক্ষাৎকার নিয়ে শুরু থেকেই জল্পনা ছিল। ভারত বরাবরই ভারসাম্য রেখে চলছে। রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়াকে নিন্দা করে আনা প্রস্তাবেও ভোট দেয়নি। মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক বহুদিনের। অথচ সরাসরিভাবে রাশিয়ার পক্ষ নিতেও অস্বীকার করেছে ভারত। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথেই সওয়াল করে গিয়েছে সাউথ ব্লক। ফলে জাপানি সংবাদমাধ্যমে জল্পনা ছিল, শেষ অবধি জেলেনস্কি প্রধানমন্ত্রী মোদীর মুখোমুখি হবেন তো? কিন্তু শেষ অবধি জল্পনার মেঘ কাটিয়েই দুই নেতা সাক্ষাৎ করেছেন।
এবারের জেলেনস্কির জাপান সফর নানাভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ বলেই দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, রাশিয়াও আগে এই গোষ্ঠীতে ছিল। গোষ্ঠীর নাম ছিল জি৮। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া আগ্রাসনের প্রতিবাদে রাশিয়াকে এই গোষ্ঠী থেকে বহিষ্কার করা হয়। এবার সেই জি৭ গোষ্ঠীর বৈঠকে জেলেনস্কির যোগদান নিঃসন্দেহে পশ্চিমী বিশ্বকে শক্তিশালী বার্তা দিতে সাহায্য করবে।
পাশাপাশি, রাশিয়া ও চিনের নেতৃত্বে থাকা শক্তিশালী 'ব্রিকস' জোটের দুই সদস্য ভারত ও ব্রাজিল এই বৈঠকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত। ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুলা দা সিলভাও এসেছেন। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত পরবর্তী জি২০ সম্মেলনের আয়োজক। ফলে জেলেনস্কির সঙ্গে মোদীর সাক্ষাৎ কূটনৈতিক অঙ্কে কতটা বদল ঘটায়, আন্তর্জাতিক মহলে সেটাই কৌতূহল বাড়াচ্ছে।
এরদোয়ান বিদায় নেবেন, নাকি আবার আসবেন: তুরস্কের ভোট নিয়ে সারা বিশ্ব টালমাটাল