শেষ আপডেট: 11th October 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আজই প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণ উপকূলে চুসুল সেক্টরে চিন-ভারত সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠক রয়েছে। লাদাখ সীমান্তে শান্তি ফেরাতে এই নিয়ে সপ্তমবার আলোচনায় বসতে চলেছে দুই দেশ। কিন্তু তার আগেই খবর মিলেছে উত্তর প্যাঙ্গং লেকে নতুন করে সেনা মোতায়েন করছে চিন। পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকায় সেনার বিন্যাস বদলাচ্ছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। দক্ষিণ প্যাঙ্গং উপকূলেও তৎপর চিনের বাহিনী। ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা সরানো (ডিসএনগেজমেন্ট) অথবা সেনা পিছনোর (ডি-এসক্যালেশন) কোনও সদিচ্ছাই নেই লাল সেনার। তাদের হাবভাবেই এটা স্পষ্ট। উল্টে শীতের আগে পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকার দখল নিতে মরিয়া চিনের বাহিনী। ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ এলাকার দুই দিকেই ১৮ হাজার ফুট উচ্চতায় নতুন করে সেনা মোতায়েন শুরু করেছে চিন। প্রায় ২০০ সেনাকে তারা সরিয়ে এনেছে ফোর-ফ্রন্টে। ভারতীয় বাহিনীর মুখোমুখি যুদ্ধ-ট্যাঙ্ক বসিয়ে সেনার সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে চিন। গত ২৯-৩০ অগস্ট থেকে শুরু করে ৭ সেপ্টেম্বর অবধি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা তথা এলএসি বরাবর চারটি চিনা আগ্রাসনের ঘটনা ঘটেছে। সেনা সূত্র জানাচ্ছে, ৪৫ বছরের রীতি ভেঙে শূন্যে প্রায় ২০০ রাউন্ট গুলিও ছুড়তে দেখা গেছে চিনের সেনাকে। প্যাঙ্গং লেকের উত্তরে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৩ ও ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ এর মাঝে এই ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীম পাহাড়ি এলাকা দখলের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে লাল সেনা। প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণে চুসুল সেক্টরে এখন দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে ব্যবধান ৩০০ মিটারেরও কম। ফিঙ্গার ৪ থেকে ফিঙ্গার ৮ পর্যন্ত চারটি পয়েন্টে এখনও চিনের বাহিনী বসে রয়েছে। ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ এর উঁচু পাহাড়ে ভারতীয় সেনা মোতায়েন থাকলেও পাহাড়ের পাদদেশে যুদ্ধ-ট্যাঙ্ক নিয়ে এগিয়ে এসেছে চিনের বাহিনী। মস্কোয় সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের আলোচনা টেবিলে ভারত ও চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মুখোমুখি কথাবার্তাতেও বরফ গলেনি। শেষবার চুসুল সীমান্তে দুই দেশের সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের পরেও প্যাঙ্গং লেক ও সংলগ্ন এলাকা থেকে সেনা সরানো (ডিসএনগেজমেন্ট) ও সেনার সংখ্যা কমানো (ডিএসকেলেশন) কোনওটাই করেনি চিনের সেনা। এখন আবার নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে ফাইবার কেবল বসাতে শুরু করেছে তারা। ভারতের সেনা সূত্র জানাচ্ছে, এই ধরনের কেবল মারফৎ খুব দ্রুত গোপনে খবর আদানপ্রদান করা যায়। রেডিও যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা ধরা পড়বে ভারতীয় সেনার সিস্টেমে। কিন্তু ফাইবার কেবলে সেই ভয় নেই। দক্ষিণ প্যাঙ্গং লেকের ৭০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে মুখোমুখি যুদ্ধট্যাঙ্ক সাজিয়ে বসে গেছে ভারত ও চিনের বাহিনী। দক্ষিণে চুসুল, মলডোর কাছে ফের লাল সেনার তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। প্যাঙ্গং হ্রদের উত্তর সীমায় ৩ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্টের কাছে নতুন করে সামরিক কাঠামো তৈরিতে লেগে পড়েছে লাল ফৌজ। ট্রাকে চাপিয়ে সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে এসে মজুত করা হচ্ছে। ভারতীয় সেনা জানাচ্ছে, দক্ষিণ ও উত্তর প্যাঙ্গংয়ের দখল নিতে মরিয়া লাল সেনা। কিন্তু ভারতের দক্ষ স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সকে টপকে তাদের পক্ষে সেনা নিয়ে এগোনো তেমনভাবে সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা তাদের সেনাদের মধ্যে কথাবার্তা চালানোর জন্য যোগাযোগের তেমন ব্যবস্থাও নেই। কোন এলাকায় সেনা মোতায়েন করতে হবে, কোন পাহাড়ি ঢাল বেয়ে যুদ্ধট্যাঙ্ক নিয়ে যেতে হবে ইত্যাদি খবর লেনদেনের জন্য ফাইবার কেবলের মতো নিরাপদ যোগাযোগের মাধ্যমকেই বেছে নিচ্ছে তারা। দক্ষিণ প্যাঙ্গং শুধু নয়, উত্তর প্যাঙ্গংয়েও এমন ফাইবার কেবল চোখে পড়েছে ভারতীয় সেনার। তবে শীতের আগে প্রস্তুতি সেরে রেখেছে ভারতও। নর্দার্ন কম্যান্ড জানিয়েছে, চিনের সেনা সমতলভূমিতেই যুদ্ধের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। লাদাখের মতো এবড়ো খেবড়ো পাহাড়ি খাঁজে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করার মতো ক্ষমতা তাদের নেই। পাহাড়ি এলাকায় কী ধরনের রণকৌশল নিতে হবে, সে জ্ঞানও ঠিকমতো নেই চিনের সেনার। অন্যদিকে, পাহাড় হোক বা সমতলভূমি, যে কোনও প্রতিকূল পরিবেশে যুদ্ধ করার মতো প্রশিক্ষণ আছে ভারতীয় সেনার। আবহাওয়ার বদল হোক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কোনও কিছুই টলাতে পারবে না ভারতের বীর জওয়ানদের। মাউন্টেন ফোর্সকে গেরিলা যুদ্ধের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, পাহাড়ি এলাকার সীমান্ত পাহারা দেওয়ার জন্য তাদের কাছে আধুনিক অস্ত্রও আছে। তাই চিনের সেনা আগ্রাসন দেখানোর চেষ্টা করলে তা বরদাস্ত করা হবে না।