শেষ আপডেট: 4th May 2020 14:04
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কাল মঙ্গলবার থেকে সাময়িক ভাবে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করে দিল পিয়ারলেস হাসপাতাল। সোমবার বিকেলে হাসপাতালের তরফে এক বিবৃতিতে এ কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কোভিড আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে হাসরপাতালের অনেক স্বাস্থ্য কর্মীই তাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন। ফলে হাসপাতালের অনেক কর্মী কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন, অনেকে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন, আবার অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে হাসপাতালে কাজে যোগ দিচ্ছেন না। এই অবস্থায় বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে একই সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এও জানিয়েছেন, জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখে প্রসূতি বিভাগ, ডায়ালিসিস, ল্যাবরেটরি, রেডিওলজি সার্ভিস এবং ক্যান্সার রোগীদের কেমোথেরাপি চলবে। সেই সঙ্গে বহির্বিভাগের রোগীদের জন্য টেলিমেডিসিন ব্যবস্থায় চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। পিয়ারলেস হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুজিত কর পুরকায়স্থ ওই বিবৃতিতে বলেছেন, “মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। তা অনুমোদনও করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে আমাদের ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিক, স্বাস্থ্য কর্মীরা তাঁদের সংস্পর্শে চলে আসেন। এর পর থেকেই রোগী, হাসপাতাল কর্মী এবং এলাকার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।” রবিবার সন্ধেয় জানা যায়, পিয়ারলেস হাসপাতালে আরও দু’জন চিকিৎসকের করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়েছে! এই নিয়ে ওই হাসপাতাল থেকে মোট চার জন চিকিৎসক, এক জন নার্স এবং দু’জন কর্মীর আক্রান্ত হওয়ার খবর এল। যদিও এ নিয়ে স্বাস্থ্য ভবন কিছুই জানায়নি এখনও। সূত্রের খবর, আজ দুই চিকিৎসকের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে খুবই চিন্তায় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের সংক্রমণের উৎস কী, সেটাই এখন দেখার বিষয়। মার্চ মাসে রাজ্যে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার সময়েই করোনা আক্রান্ত এক রোগীকে বাইপাসের ধারে পঞ্চসায়রের পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই মারা যান তিনি। তার পরে কোনও খবর আসেনি ওই হাসপাতালে অন্য কারও সংক্রামিত হওয়ার। কিন্তু বুধবার হঠাৎই জানা যায়, পিয়ারলেস হাসপাতালের দু’জন চিকিৎসক, এক জন নার্স এবং দু’জন স্বাস্থ্যকর্মীর করোনাভাইরাস পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। স্বাভাবিক ভাবেই খানিকটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতাল জুড়ে। আক্রান্ত দুই চিকিৎসককে সল্টলেক আমরি হাসপাতালে এবং নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টালিগঞ্জ এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা যায়, আক্রান্ত চিকিৎসকরা চিকিৎসা করার সময়ে পিপিই পরেই ছিলেন। তার পরেও কী করে তাঁরা সংক্রামিত হলেন, তা ভাবাচ্ছে সকলকে। পিয়ারলেস হাসপাতালের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্র বলেন, "আমরা সরকারকে জানিয়েছি, আমাদের প্রচুর রোগী, প্রচুর চিকিৎসক। এই অবস্থায় হাসপাতাল খোলা রাখাটা ঝুঁকি হয়ে যাবে। আমরা স্তরে স্তরে গোটা হাসপাতালকে জীবাণুমুক্ত করব। কোভিড রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডও তৈরি হচ্ছে। সেটা তৈরি না হওয়া অবধি পরিষেবা চালু করব না। তবে যে ১৫০ রোগী ভর্তি আছেন, তাঁদের দায়িত্ব আমাদেরই।" বস্তুত, পিয়ারলেসের ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। গত মাস দুয়েক ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নানা সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে একের পর এক চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। মেডিক্যাল কলেজে তো এই সংখ্যাটা মাত্রা ছাড়িয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের চিন্তা ক্রমেই বাড়ছে। এই দেশে এখনও পর্যন্ত ৯ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই চিকিৎসক-নার্সরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।