শেষ আপডেট: 4th August 2023 15:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বেহালার মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় (Behala Accident) সাত বছরের শিশুর মৃত্যুতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে ওই এলাকার ট্র্যাফিক পুলিশের ভূমিকা। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের তরফে অভিযোগ উঠেছে, বারবার বলেও পুলিশের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি, হাজার বাচ্চা ঝুঁকি নিয়েই স্কুলে আসে রোজ।
এমনই পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার জন্য হকারদের একাংশকেই দায়ী করলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। বেহালার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, “এটা ঠিক যে কিছু কিছু জায়গায় হঠাৎ করে হকার বসে যাচ্ছে। বারবার বলার পরেও তারা সরছে না। পুলিশকে বলব ব্যবস্থা নিতে।”
রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মহানাগরিকের (Firhad Hakim) মুখে এমন মন্তব্য শুনে অভিভাবক মহলে তো বটেই তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে নাগরিক সমাজেও। শুক্রবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বেপরোয়া লরি পিষে দেয় একরত্তি সৌরনীল সরকারকে। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের একাংশের প্রশ্ন, সকাল সাড়ে ছ’টায় কোথায় হকার বসেন? তাঁরা বলছেন, “ভোর সাড়ে ছ'টায় প্রায় ফাঁকা রাস্তায় ঘটেছে দুর্ঘটনা। কোনও হকার তখন ছিল না, ছিল না খুব বেশি গাড়িও। স্কুলের বাচ্চারাই ঢুকছিল তখন।”
দুর্ঘটনার পর ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রকাশ্যে বুকভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়ে অভিযোগ করছেন, তাঁর স্কুলের পাশেই অবস্থিত অন্য দু'টি বেসরকারি স্কুলের কাছে ট্র্যাফিক পুলিশ থাকলেও এই সরকারি স্কুলের সামনে বারবার বলা সত্ত্বেও ট্র্যাফিক পুলিশের সাহায্য মেলেনি। এই প্রসঙ্গেই এদিন ফিরহাদের ব্যাখ্যা, “বেসরকারি স্কুলে ভিড় বেশি হয় বলে পুলিশ থাকে। সেখানে গাড়ি বেশি আসছে। তাই ট্র্যাফিক পুলিশ থাকে।”
পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকদের একাংশ। ক্ষোভে ফেটে পড়ে তাঁরা বলছেন, “ এটা একটা কথা? যে স্কুলে গাড়ি নিয়ে যায় ছাত্ররা, তাঁদের প্রাণের দাম আছে, এই স্কুলে যে এলাকার নিম্নবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের হাজার খানেক বাচ্চা পড়ে, তাদের প্রাণের দাম নেই?” তাঁদের মতে, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সরকার ভুল ব্যাখ্যা সামনে আনছে। এভাবে দোষ ঢাকার চেষ্টা না করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন তাঁরা। তাঁদের মতে, ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
অন্যদিকে, এই দুর্ঘটনার জন্য পুলিশের তোলাবাজিকে দায়ী করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা হিসেবে ববির যুক্তি, “কথায় কথায় বলেন, পুলিশ টাকা তুলছে। যদি অভিযোগ থাকে আপনারা ছবি তুলুন। একটা লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে দিলে হবে না। একটা প্রাণ গেছে সেটা ঠিকই। কিন্তু এটাও আমাদের দেখতে হবে। পৌর সংস্থার নিজের পুলিশ নেই। আইনশৃঙ্খলা দেখা পৌর সংস্থার হাতে নেই।"
নাগরিক সমাজের মতে, আইনশৃঙ্খলা দেখা পুরসভার কাজ নয় ঠিকই। কিন্তু পুরসভা চাইলে এই বিষয়ে পুলিশকে পরামর্শ তো দিতেই পারে! তা না করে সাফাই গাওয়াটাও নিশ্চয়ই কাজের কথা নয়! উপরন্তু, ৭ বছরের একটা প্রাণ চলে যাওয়ার পরেও মহানাগরিকের এহেন যুক্তি 'ঔদ্ধত্য' বলেই মনে করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: ধর্মতলায় মাল্টি লেভেল কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, হাইকোর্টে জানাল রাজ্য