প্যারামাউন্ট
শেষ আপডেট: 1 May 2024 10:47
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সপ্তাহের শুরুতে হঠাৎ করে রোদের পারদ চড়ায় এক পড়ন্ত বিকেলে দ্য ওয়াল পৌঁছে গেছিল বইপাড়াতে। থিকথিকে ভিড় ঠেলে কলেজস্ট্রিট পৌঁছে পিপাসায় যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত তখন প্যারামাউন্টের সরবত ছাড়া তো চলবে না। সুতরাং যেতেই হল মহাবোধি সোসাইটির ঠিক পাশেই ১০০ বছরের পুরনো প্যারামাউন্টে (Paramount has its own charm since 105 years )। ডাবের সরবত, ম্যাংগো মেনিয়া, কোকো মালাই, টারমারিন্ড সরবত, রোজ সরবত আরও নানা রকমের সরবত, লস্যির (sherbet or lassi) সমাহার এই প্যারামউন্টে।
এখনকার কর্ণধার পার্থপ্রতিম মজুমদার এই ১০০ বছরের পুরনো দোকানের তৃতীয় প্রজন্ম। তিনি জানান, দোকানটি চালু হয় তাঁর স্বর্গীয় দাদু নীহাররঞ্জন মজুমদারের হাত ধরে। তখন অবশ্য দোকানের নাম ছিল ‘প্যারাডাইস’। ১৯১৮ সালে চালু হওয়া এই একমাত্র সরবতের দোকানের নাম প্যারামাউন্ট হয় ১৯৩৭ সালে। ওপার বাংলার বরিশাল থেকে কলকাতাতে এসে সরবতের দোকান চালু করার আইডিয়াটা কীভাবে এল জানতে চাইলে উনি বলেন, বাঙালিদের মধ্যে সরবত দিয়ে আপ্যায়ন করা বহুদিনের প্রথা। নীহাররঞ্জন মজুমদার কলকাতার মানুষদের আপ্যায়নের জন্যই এই দোকান চালু করেন।
পার্থপ্রতিম বাবু জানান, তাঁর দাদু ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি ছিলেন বরিশাল অনুশীলন সমিতির একজন সদস্য। ফলে দোকানের সামনের দিকে সরবতের পসরা থাকলেও পিছনের দিকটা এখন যেখানে সরবত তৈরি করা হয় সেটা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গোপন আস্তানা। কোন কোন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এখানে আগমন ঘটেছে জিজ্ঞেস করলে উনি বলেন, পুলিনবিহারী দাস, বিপ্লবী শচীন সেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস, কাজী নজরুল ইসলাম সহ আরও অনেকেই এসেছেন। নেতাজির প্রিয় সরবত নাকি ছিল গ্রিন ম্যাংগো।
প্যারামউন্টের ডাবের সরবতের কথা আমরা সবাই জানি। সেই ডাবের সরবতের পিছনেও যে একটা ইতিহাস আছে সেটা হয়ত অনেকেই জানেন না। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সঙ্গে নীহাররঞ্জন মজুমদারের ভাল সম্পর্ক ছিল। আচার্য একদিন নীহাররঞ্জন বাবুকে বলেন, এমন কোনও একটা সরবত বানাতে যেটার জন্য ছাত্রদের বেশি খরচ হবে না অথচ পেট ভরবে। সেই থেকেই প্যারামাউন্টে শুরু হল ডাবের সরবত। ডাবের সরবতের জন্য কিন্তু খাটনিও কম নয়। প্যারামাউন্টের এই বিখ্যাত ডাবের সরবতের ডাব আসে বসিরহাট থেকে। পাতলা শাঁসের ডাবের মিষ্টি জল দিয়েই তৈরি হয় তাঁদের ডাবের সরবত।
কলেজ স্ট্রিট মানেই যেমন বইপাড়া, কফিহাউস, তেমনই কলেজস্ট্রিট মানেই প্যারামাউন্টের সরবতও। যাঁরা তার স্বাদ পেয়েছেন, তাঁরাই জানেন কোথায় লুকিয়ে রয়েছে প্যারামাউন্টের জাদু।