শেষ আপডেট: 10th June 2023 10:42
ভারতে ১০ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছে, গোয়ায় সর্বাধিক, কেন বাড়ছে এই রোগ?
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চুপিসারে আসে। নীরবে বাড়ে। তারপর একেবারে ফণা তুলে ছোবল বসায়। ডায়াবেটিস (Diabetes) অতি ভয়ঙ্কর। টাইপ ২ আরও। এর ঘায়ে ঘায়েল প্রাপ্তবয়স্করাই। পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে। এই রোগকে তো সাইলেন্ট প্রোগ্রেসিভ ডিসঅর্ডারও বলেন ডাক্তারবাবুরা। ভারতে এখন ঘরে ঘরে ডায়াবেটিসের রোগী। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর সমীক্ষা বলছে, এ দেশে অন্তত ১০ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছে। গোয়ায় এই সংখ্যা সর্বাধিক।
আইসিএমআরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ভারতে ডায়াবেটিস (Diabetes) রোগীর সংখ্যা ছিল ৭ কোটি। দিনে দিনে এই রোগ ডালপালা মেলছে। রিপোর্টে আরও ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, দেশের অন্তত ৩০ কোটি মানুষ হাই ব্লাড প্রেশারে ভুগছে। হাইপারটেনশন রয়েছে বহুজনের। ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে ৬৭ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ডায়াবেটিসে। ওই বছরই ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৩.৭ কোটি। গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬৪ কোটি ছাড়িয়ে যাবে, ২০৪৫ সালে তা হতে পারে ৭৮ কোটির বেশি।

ভারতে ঘরে ঘরে ডায়াবেটিস, কেন বাড়ছে এই রোগ?
ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ যেখানে রক্তে শর্করা বা সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিন নামে একটি হরমোন যা প্যানক্রিয়াসের বিটা সেল থেকে নিঃসৃত হয়। সাধারণত, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে সেটি লিভারে গিয়ে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। ইসুলিন এই গ্লুকোজকে দেহকোষের মধ্যে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। কোষের ভেতরে গ্লুকোজ অক্সিডাইজড হয়ে অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট (এটিপি) তৈরি করে যার থেকে শক্তি আসে। এই শক্তিই কোষের পুষ্টি জোগায়।

কিন্তু যদি বিটা কোষ নষ্ট হয়ে যায় এবং ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায় তাহলে এই প্রক্রিয়াটা বাধা পায়। ইনসুলিন কোষের মধ্যে প্রবেশের জন্য যে রিসেপ্টরটি লাগে, সেটি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ইনসুলিন আর ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ইনসুলিন কোষের মধ্যে গ্লুকোজকে প্রবেশ করাতে পারে না। রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যায়। একে বলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস।সমীক্ষা বলছে, শিশু থেকে ১৯ বছর বয়সি ১০ লাখের বেশি টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ভুগছে। সদ্যোজাতরা রেহাই পাচ্ছে না। বাচ্চাদের অনেকের মধ্যেই টাইপ ১ ডায়াবেটিসের লক্ষণ ধরা পড়েছে। অর্থাৎ তাদের অগ্ন্যাশয় সম্পূর্ণভাবে ইনসুলিন ক্ষরণ বন্ধ করে দিয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, টাইপ টু ডায়াবেটিসের উপসর্গও ধরা পড়েছে বাচ্চাদের মধ্যে।
জীবনযাত্রার ধরন বদলালেই কাবু হবে ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিসও লাইফস্টাইল ডিজিজ। রোজকার জীবনে অনিয়ম অনেক বিপদ ডেকে আনে। আলস্য বেড়েছে। এক্সারসাইজে ইতি দিয়েছেন অনেকেই। তার ওপর অনিয়মিত ডায়েট তো রয়েছেই। স্থূলত্ব বা ওবেসিটি কিন্তু ডায়াবেটিসের অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর। নিয়মিত শরীরচর্চা ও খাদ্যাভাসে সামান্য অদলবদল করলেই রক্তে বাড়তি শর্করা বশে রাখা যায়।

প্রথমে আসা যাক খাওয়ার কথায়। একটা কথাই এখন চালু হয়েছে, ডায়াবেটিক ডায়েট। আসলে এমন কোনও নিয়ম নেই। ডায়াবেটিস হলেও সাধারণ ব্যালেন্সড ডায়েটই মেনে চলতে বলা হয়। সারাদিনে যে খাবার আমরা খাই তাই নিয়ম মেনে ও সময়ে সময়ে খাওয়া। সঠিক পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট খেতে হবে। ভাজাভুজি, তেল জবজবে খাবার এক্কেবারে চলবে না।
ফ্যাট কম খাওয়াই ভাল। অ্যামন্ড, আখরোট, তিসি, সূর্যমুখী–চালকুমড়ো বীজ মাপমতো খেতে পারেন। আমন্ডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক রাখতে সাহায্য করে। খিদে পেলে অল্প করে আমন্ড খেয়ে নিন। এতে খিদে যাবে। কিন্তু ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণেই। প্রোটিন যুক্ত এই বাদাম খেলে সুগার লেভেলও ঠিক থাকবে।

প্রোটিন খেতে হবে মাপমতো, সারা দিনে ১০০ গ্রামের মতো মাছ খেতে পারেন। চিকেন চলবে ভালমতোই। রেড মিট একেবারে বাদ দিতে হবে না। কম চর্বির (লিন) মাংস মাসে দু’ মাসে এক–আধ বার খাওয়া যেতেই পারে।
ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে অন্তত দিনের এক ঘণ্টা সময় নিজের জন্য রাখতে হবে। ওষুধের থেকেও বেশি কার্যকরী হাঁটা। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটতে হবে। ডায়াবেটিস না থাকলেও এই অভ্যাস রাখতে হবে। ডায়াবেটিস যাতে না হয় সেই জন্যও কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিৎ। দিনের এক ঘণ্টা সময়ের কিছুক্ষণ যোগাসন করা যেতে পারে।
ধূমপানের নেশা ছাড়তে হবে। একবারে হবে না, ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে হবে। সিগারেট এবং অ্যালকোহল পাল্লা দিয়ে চললে, মাঝ বয়সে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কুনজরে পড়তেই হবে।
অ্যামিলয়ডোসিসে আক্রান্ত হচ্ছে কমবয়সিরা, পাক প্রেসিডেন্ট মুশারফের মৃত্যু হয়েছিল এই রোগেই
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাত করে খাবার না খাওয়াই ভাল। এই অভ্যাস শুধু ডায়াবেটিস নয়, অন্যান্য রোগেরও কারণ হতে পারে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস যাঁদের আছে তাঁদের শরীরে লাইপোপ্রোটিন ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স (LPIR) বেড়ে যায়। যে কারণে প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিসের কারণে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ে। এই খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কোলেস্টেরল হার্টের রোগের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।
ডায়াবেটিস ধরা পড়লে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে সন্ধের দিকে পায়ের পাতা ফুলছে কিনা। এই সমস্যা দেখা দিলে সময় না নষ্ট করে নিউরোপ্যাথি ও ভ্যাসকুলোপ্যাথির সাহায্য নিতে হবে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রাথমিক পর্যায় ধরা পড়লে, সঠিক ট্রিটমেন্ট ও নিয়ম মেনে চললে পরবর্তী কালে চোখ, কিডনি, নার্ভ, হার্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের বড়সড় ক্ষতি রোখা সম্ভব।