অনির্বাণ সেনগুপ্ত ।
শেষ আপডেট: 19th October 2024 12:43
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একেনবাবু ওরফে একেন্দ্রনাথ লালবাজারের দুঁদে গোয়েন্দা। অথচ দেখে বোঝার উপায় নেই। তিনি ভুলভাল প্রবাদ বলেন, খেতে ভালবাসেন, স্ত্রী খুকুকে ইনিয়েবিনিয়ে মিথ্যে বলে তাঁর বায়নাক্কা এড়িয়ে যেতে চান।
তাঁর মগজাস্ত্র ফেলুদা বা ব্যোমকেশের মতো ধারালো হলেও, উপস্থাপনায় ছাপোষা মধ্যবিত্ত, পেটে গ্যাস, ঢেকুর তোলা একটা চরিত্রকে দেখা যায়। গোটা ব্যাপারটায় একটা কমিক রিলিফ রয়েছে।
হইচই-তে এহেন একেন্দ্রনাথ বলতে গেলে একা টেনে নিয়ে গিয়েছেন পরপর পাঁচটা সিজন। বাপিবাবুর চরিত্রে সুহোত্র মুখোপাধ্যায় তবু পরিণত অভিনেতার মতো ধরা দিয়েছেন। কিন্তু প্রমথ চরিত্রে সোমক ঘোষের অভিনয় দুর্বল শুধু নয়, বলতে গেলে শিশু শ্রেণির।
তবু একেনবাবু সুপারহিট। হইচইয়ের অ্যানালিটিক্সের হদিশ না থাকলেও বলা যায়, একেন চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তীকে বাঙালি দর্শকের পছন্দ হয়েছে। অনির্বাণকে তা উচ্চতাও দিয়েছে।
সদ্য বাজারে এসেছে আরও একটি বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ফ্রাইডে। ঘটনাচক্রে সেখানেও শুরুতেই এক ধারাবাহিক থ্রিলারে গোয়েন্দা চরিত্রে রয়েছেন অনির্বাণ। সিরিজের নাম মিসিং লিঙ্ক। সে গল্পেও অনির্বাণ রয়েছেন পুলিশ অফিসারের ভূমিকায়।
তবে এই অনির্বাণ অ্যাপিয়ারেন্সে একেনের মতো নন। তিনি যেমন চৌখস অফিসার, চলনবলনেও বলিষ্ঠভাব রয়েছে। ট্রাউজার্সের সঙ্গে পায়ে অফ হোয়াইট ট্রেনার স্নিকার্স পরেন, উপরে টি শার্ট বা শার্ট। অধস্তন সাব ইনস্পেক্টর বসুকে আড়ালে যেভাবে ঘাড় ঘুরিয়ে বাঁ*টা বলেন, তাতে টিপিকাল অফিসারের ভাবটা রয়েছে এক্কেবারে আঁটোসাটো ভাবে।
তবে ঘটনা হল, মিসিং লিঙ্ককে একা টেনে নিয়ে যেতে হল না এসডিপিও অনির্বাণ সেনগুপ্তকে। বরং যোগ্য সঙ্গত করে গেলেন বাকিরাও। তাঁদের মধ্যে অবশ্যই নাম করতে হয় লোকনাথ দে ওরফে লোকা-র।
প্রৌঢ় জীবনকিশোর সাহা চরিত্রে গল্পের শুরুতে তিনি ধরা দেন। তাঁর স্ত্রী বিয়োগের পর ঘরবাড়ি ছেড়ে তিনি নিরুদ্দেশ হয়েছেন। বসিরহাটের বাড়ির মায়া কাটিয়ে, বুকে পাথর চাপা দিয়ে স্নেহের নাতি ‘ভীমরুল’কেও ছেড়ে চলে এসেছেন বাঁকুড়ার পঞ্চসায়রে।
সেই প্রত্যন্ত জনপদে ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার হলেন সত্যম ভট্টাচার্য। ঘটনাচক্রে তাঁর মেয়েকে আবার জলে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচান জীবনকিশোর। ওদিকে বসিরহাটে তখন তোলপাড় চলছে একটা খুনের ঘটনা নিয়ে। তিনি আবার শাসক দলের একেবারে নিচুতলার কর্মী। একদা একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে তিনি জীবন কিশোরের সহকর্মী ছিলেন। অবসরের পর পার্টি করতেন এবং সুযোগ পেলেই বাংলা খেয়ে বেহেড হয়ে যেতেন।
এর পর মূল গল্পে ঢুকে পড়াটা অনর্থক। তা নিয়ে রহস্য থাক। তবে ঘটনা হল, সমষ্টির অভিনয় গুণে, বাঁকুড়া থেকে বসিরহাট স্থানীয় ডায়ালেক্টের নির্ভুল উচ্চারণে ও টানটান কাহিনির কারণে মিসিং লিঙ্ক ছাপ রেখে গেল।
সিরিজের শেষে অনির্বাণের প্রায় কান ঘেঁষে পরপর দুটো গুলি যেভাবে দেওয়ালে ফুটো করে দিল। এবং ফিরতি গুলিতে এসডিপিও অনির্বাণ সেনগুপ্ত যেভাবে যবনিকা ফেললেন, তাতে বোঝা গেল মিসিং লিঙ্কের সেকেন্ড সিজনও আসবে।