মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এদিন বিজেপি ও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যে তীক্ষ্ণ সমালোচনা করেছেন, তাকে হয়তো সার্জিকাল স্ট্রাইক বললেও অতিশয়োক্তি হয় না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদী।
শেষ আপডেট: 10 June 2025 22:29
পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের (Pahalgam Terror Attack) জবাব ভারতীয় সেনা যেভাবে দিয়েছে, মঙ্গলবার তা নিয়ে ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হয় বিধানসভায়। সেই আলোচনার সুযোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এদিন বিজেপি ও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যে তীক্ষ্ণ সমালোচনা করেছেন, তাকে হয়তো সার্জিকাল স্ট্রাইক বললেও অতিশয়োক্তি হয় না।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতার মধ্যে তিন চারটি কথা ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, এক-পুলওয়ামার ঘটনা থেকে কেন শিক্ষা নিল না দেশের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি? দুই, কেন চার জন জঙ্গিকে এখনও ধরা গেল না? নিশ্চয়ই কোনও গ্যাপ আছে, সেই ফাঁক গলে জঙ্গিরা ঢুকে পড়েছে। তিন, এটা কি সরকারের ব্যর্থতা নয়? চার, এটাই তো বড় সুযোগ ছিল পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করে নেওয়ার, পারল না কেন? পাঁচ, ভোট এলেই একটা পুলওয়ামা করতে হবে, এটা যেন না হয়।
এখন প্রশ্ন হল, মমতার এই প্রশ্নমালাকে কেন সার্জিকাল স্ট্রাইকের সঙ্গে তুলনা করা যায়? তার কারণ পরিষ্কার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন যেন প্রিসিশন অ্যাটাক করতে চেয়েছেন। পহেলগামের ঘটনার পর সরকার ও কেন্দ্রে শাসক দলের সবচেয়ে দুর্বলতম স্থান যেটি, সেখানেই আঘাত করেছেন তিনি। ঘটনা হল, অপারেশন সিঁদুরের পর জাতীয়তাবাদের কারণে কোনও বিরোধী দলই এখনও সেভাবে সরকারের সমালোচনা করছেন না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ধার ধারেননি। তার ক্ষেত্র প্রকারান্তরে আবার তৈরি করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই। অপারেশন সিঁদুরকে সামনে রেখে মোদী যেভাবে গোটা দেশে রাজনৈতিক সভা করে বেড়াচ্ছেন, সেই সুযোগেই তাঁকে ও সরকারকে পাল্টা আঘাত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে।
এর আরও কারণ রয়েছে। ছাব্বিশ সালের গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট আসন্ন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘর পোড়া গরু। পুলওয়ামার ঘ়টনার পর তিনি দেখেছিলেন, কীভাবে বালাকোটে সার্জিকাল স্ট্রাইককে রাজনৈতিক মঞ্চে ব্যবহার করেছিল বিজেপি। মমতার সঙ্গত কারণেই্ হয়তো মনে হয়েছে, ছাব্বিশের ভোটের আগে অপারেশন সিঁদুরকে নিয়ে সেই খেলাটাই খেলতে চাইবে বিজেপি। তাই আগে ভাগেই তিনি ভেস্তে দিতে চেয়েছেন।
বড় কথা হল, পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করা সঙ্ঘ পরিবার তথা আরএসএসের অ্যাজেন্ডা ছিল। নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে বিজেপি এতদিন এমনটা হাওয়া গরম করে রেখেছিল যে মোদীই পারেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করতে। এদিন সেই বেলুনটাই চুপসে দিতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও একটা মজার ব্যাপার এখানে রয়েছে। অপারেশন সিঁদুরের পর বহুদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধি দলকে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছিল মোদী সরকার। তাতে সামিল ছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কূটনৈতিক সফরে গিয়ে অভিষেক পাকিস্তানের উদ্দেশে যে কট্টর কথা বলেছেন, তা এখনও অনুরণিত হচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে। তা আবার বিজেপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা তারিফ করেছেন। মঙ্গলবার রাতে ওই সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজের বৈঠক হওয়ার কথা।
অর্থাৎ ওদিকে যখন অভিষেক মোদীর সঙ্গে নৈশভোজে থাকবেন, এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে পহেলগামের ঘটনা নিয়েই সরব। সার্বিক ভাবে এই পরিস্থিতি রাজ্য বিজেপিকেই যেন কিছুটা হতাশার মুখে ঠেলে দিয়েছে। হয়তো তাঁরাও মমতার কৌশলী পদক্ষেপ বুঝতে পারছেন। কারণ, অভিষেক যেভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, তার পর জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে বাংলায় তৃণমূলকে প্যাঁচে ফেলা কঠিন হয়ে গেল। সব মিলিয়ে এ যাত্রার অপারেশনে আপাত নজরে অ্যাডভান্টেজেই থাকলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।