এক ইস্যুতে যুযুধান দু'পক্ষকে শেষ কবে এভাবে নামতে দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারছেন না অনেকেই।
গ্রাফিক্স- দ্য ওয়াল।
শেষ আপডেট: 14 May 2025 16:08
সন্ত্রাসবাদ দমনে সেনাবাহিনীর অপারেশন সিঁদুর (Operation Sindoor) অভিযানকে সম্মান জানাতে এবার পথে নামছে শাসক-বিরোধী (BJP-TMC)। এক ইস্যুতে যুযুধান দু'পক্ষকে শেষ কবে এভাবে নামতে দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারছেন না অনেকেই।
অনেকের মতে, রাম নবমীর সময় শাসক-বিরোধী দু'পক্ষই কিছু এলাকায় পথে নেমেছিল ঠিকই, তবে সামগ্রিকভাবে তা দেখা যায়নি। সেদিক থেকে পাকিস্তানের জঙ্গি মদত ইস্যুতে সেনার পদক্ষেপ নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলের এই কর্মসূচি নজিরবিহীন বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের।
গত ২২ জুলাই কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গিরা নৃশংসঙভাবে ২৬ জন মানুষকে খুন করে। এরপরই সীমান্তে তল্লাশি অভিযান জোরদার করে বিএসএফ। গত ৭ মে সেনাবাহিনীর 'অপারেশন সিঁদুরে'র দাপটে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি ধুলিসাৎ হয়ে যায়। এই অভিযানের মাধ্যমে ভারতীয় সেনা শুধু নিজেদের শক্তি প্রদশর্নই করেনি একই সঙ্গে সন্ত্রাসের প্রশ্নে পাকিস্তানের মদতের মুখোশটাও বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে।
ইতিমধ্যে সেনার বীরত্বএবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সম্মান জানাতে দেশজুড়ে বিজেপির তরফে তেরঙ্গা যাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে দলের পতাকার পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে দেশের পতাকা।
আগামী ১৬ তারিখ, শুক্রবার বিকেল ৫টায় শহরের কলেজ স্কোয়ার থেকে শ্যাম বাজার পর্যন্ত তেরঙ্গা যাত্রার কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। শুভেন্দু বলেন, "মোদীজি ছিল বলে, পাকিস্তান চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে। পাকিস্তানের বিমানবন্দরগুলি শেষ হয়ে গেছে। কাশ্মীরের নিরীহ পর্যটকদের হত্যার প্রতিবাদে আমরা ২৬০টা মুন্ডু চেয়েছিলাম, সেখানে হাজারের বেশি মুন্ডু পাওয়া গেছে। এবারে কলকাতা দেখবে রিয়েল তেরঙ্গা যাত্রা।"
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, সেনাবাহিনীকে সম্মানের জন্য আয়োজন করা এই মিছিল থেকে বিজেপি এই বার্তা স্পষ্ট করতে চায় যে মোদীর হাতে দেশ কতখানি নিরাপদ।
শুভেন্দুর ওই ঘোষণার কিছু পরেই এদিন নবান্নের সাংবাদিক বৈঠক থেকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগামী শনিবার ও রবিবার আমাদের দল সেনাবাহিনীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্য বিকাল তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত মিছিল করবে। দেশের সম্মান রক্ষা করার জন্য যে সব জওয়ান জীবন দিয়েছেন যাঁরা লড়াই করছে তাদেরকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা ও সম্মান জানানো আমাদের কর্তব্য। তাই এই কর্মসূচি।
সাধারণত, নবান্ন থেকে দলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন না মুখ্যমন্ত্রী। স্বভাবতই, তাঁর এই ঘোষণা নিয়েও বিভিন্ন মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। অনেকের মতে, অপারেশন সিঁদুর হিসেবে সেনাবাহিনীর কাজের কৃতিত্বকে ভোট ব্যাঙ্ক পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে চাইছে বিজেপি।
বছর ঘুরলেই বাংলায় বিধানসভা ভোটের নির্বাচন। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই দলের ঘোষিত কর্মসূচি নিয়েও এদিন শুভেন্দুকে জোর গলায় বলতে শোনা গিয়েছে, 'কলকাতা দেখবে রিয়েল তেরঙ্গা যাত্রা'। অর্থাৎ শুভেন্দু বোঝাতে চেয়েছেন, সেদিনের মিছিল থেকে বিজেপি দেশপ্রেমীদের কলকাতার প্রকৃত ছবিটা তুলে ধরবে।
এর কিছু পরেই তৃণমূলের তরফে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে পরোক্ষে এই বার্তা স্পষ্ট করেছেন, সেনা বাহিনীর সদস্যরা দেশের জন্য যে কাজ করেছে তা যথেষ্ট গর্বের। তবে সেনার কৃতিত্ব বিজেপি নিজেদের পকেটে ঢোকাতে চাইলেও বাংলায় অন্তত সেই ভুল বার্তা খণ্ডন করবে তৃণমূল।