শেষ আপডেট: 2 September 2023 13:01
‘এক দেশ-এক নির্বাচন’ একটি ভাল প্রস্তাব (One nation one election)। এই ব্যবস্থা চালু হওয়া অবশ্যই দরকার। বিশেষ করে খরচ এবং সময় ইত্যাদির কথা বিবেচনায় রাখলে প্রতি বছর ভোটের বাদ্যি শোনা মোটেই কারও ভাল লাগার কথা নয়।
তবে এই ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হবে। অনেকেই মনে করছেন ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংসদের যে বিশেষ অধিবেশন চলবে সেখানে ‘এক দেশ-এক নির্বাচন’ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি পাশ করানো হবে। আমার যদিও তা মনে হয় না। সরকারের অধিকার আছে। কিন্তু আমার মনে হয় এই ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করা মোটেই সঠিক কাজ হবে না। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। বিশেষ করে ভারতবর্ষের মতো একটি দেশ যা আসলে একাধিক রাজ্যের সমষ্টি।
‘এক দেশ এক নির্বাচন’ ব্যবস্থা যখনই চালু করার চেষ্টা হোক না কেন, তার জন্য কিছু রাজ্য সরকারের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। আবার অনেক রাজ্য সরকারকে মেয়াদ পূর্তির আগেই নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে। যেমন কথার কথা, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের সঙ্গে যদি সব রাজ্যের বিধানসভার ভোট করাতে হয় তাহলে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড়, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা ইত্যাদি রাজ্যের সরকার ও বিধানসভার মেয়াদ মাস ছয় বৃদ্ধি করতে হবে। তার জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। কারণ, সংবিধান পাঁচ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকার অধিকার দেয়নি।
সরকারের মেয়াদ বৃদ্ধিতে হয়তো বেশিরভাগ রাজ্য অরাজি হবে না। কিন্তু একত্রে ভোট করানোর জন্য যে রাজ্যগুলিকে মেয়াদ শেষের আগেই ভোটের মুখোমুখি হতে হবে, তারা কি রাজি হবে?
ভারতের বহু রাজ্যে আঞ্চলিক দল ক্ষমতায়। তারা সহমত না হলে এই ব্যাপারে অগ্রসর হওয়া কঠিন। সংবিধান, আইন সংশোধন করে একটা ব্যবস্থা চালু করেই দেওয়া যায়। কিন্তু পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত সরকারগুলি মেয়াদ শেষের আগে নির্বাচনের মুখোমুখি হতে চাইবে কি না সে প্রশ্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন ধরা যাক, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরলের মতো বেশ কিছু রাজ্যের সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬-এর মাসে। সেখানকার সরকার কি দু-আড়াই বছর আগে নির্বাচনের (assembly election) মুখোমুখি হতে রাজি হবে?
অর্থাৎ বিষয়টি শুধু আইন-সংবিধান সংক্রান্ত নয়। রাজনৈতিক সহমত তৈরিও জরুরি। প্রথম যখন এই প্রস্তাব কার্যকরের চেষ্টা হবে তখন যে রাজ্য সরকারগুলিকে মেয়াদ শেষের আগে ভোটের মুখোমুখি হতে হবে তারাই ফের ক্ষমতাসীন হবে, এটা কি কোনওভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব? আমি কোনও উপায় দেখতে পাচ্ছি না। আর তা যদি না হয় তাহলে সেই সরকারগুলির ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভোট হবে। আঞ্চলিক দলের সরকারের ক্ষেত্রে সেটাই হবে ভোটে তাদের জোরালো নির্বাচনী ইস্যু। বিরোধী দল শাসিত সরকার তো বলতেই পারে, আমরা ভাল কাজ করছিলাম বলে ভোটের মুখে ঠেলে দেওয়া হল।
প্রশ্ন হল, তাতেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় সেক্ষেত্রে কী হবে। সাধারণভাবে আমরা দেখেছি, সরকার গড়ার মতো পরিস্থিতি না থাকলে কেন্দ্রীয় বা রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হয়ে থাকে। আমার মতে, রাষ্ট্রপতি শাসন খুব বেশি হলে এক মাসের জন্য বলবৎ করা যেতে পারে। তার বেশি নয়। কারণ তা যুক্ত-রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী হবে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনই একমাত্র রাস্তা। বলা হচ্ছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনে জিতে আসা সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আগের সরকারের বাকি মেয়াদটুকুই অন্তবর্তী নির্বাচনে জিতে আসা দল ক্ষমতায় থাকতে পারবে। এই সব অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আছে যেগুলির নিয়ে বিশদ আলোচনা জরুরি।
'এক দেশ এক ভোট' কমিটির সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান অধীরের, শাহকে চিঠি পাঠালেন কংগ্রেস সাংসদ