শেষ আপডেট: 24 July 2023 03:33
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একুশের বিধানসভা ভোটে বাংলায় প্রায় প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়ে যাওয়া কংগ্রেসকে তিনিই মরীচিকা দেখিয়েছেন। সাগরদিঘির উপনির্বাচনে বামেদের সমর্থনে কংগ্রেসের প্রার্থীকে জেতানোর বারো আনা কৃতিত্ব অধীর চৌধুরীরই (Adhir Chowdhury)। শুধু তা নয়, সাগরদিঘি মডেলকে সামনে রেখে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দিনাজপুর, পুরুলিয়ার মতো জেলায় শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছেন কংগ্রেস কর্মীরা। গত পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় কংগ্রেসের (Congress) আসন অনেকটাই বেড়েছে।
কিন্তু এহেন অধীর চৌধুরীই এখন সাঁড়াশি সমস্যায় পড়েছেন। বাংলায় নিচুতলায় কংগ্রেস কর্মীদের দাবি, রাহুল গান্ধীরা জাতীয় রাজনীতিতে যতই সমঝোতা করুন, বাংলায় অধীর চৌধুরী যে তৃণমূল (TMC) বিরোধিতার অবস্থান নিয়ে চলছেন, সেটাই বজায় থাকুক। কংগ্রেস কর্মীদের আবেগের কথা মাথায় রেখে অধীর চৌধুরীকে সে কথায় বলতেই হচ্ছে। কিন্তু তিনি শুধু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নন, লোকসভায় কংগ্রেস নেতাও বটে। তাই দিল্লি গেলেই সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম তাঁকে ঘিরে ধরতে চাইছে।
বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোট তথা ‘ইন্ডিয়া'র’(INDIA) বৈঠকে সনিয়া-রাহুলের (Sonia Gandhi Rahul Gandhi) মধ্যিখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক ফ্রেমে দেখা গিয়েছে। তা নিয়ে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম অধীরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইছে। কিন্তু মুশকিল হল, দিল্লিতে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে কৌশলগত সমস্যা রয়েছে অধীরের। কারণ তিনি লোকসভায় কংগ্রেস নেতা। তাঁর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূলের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করলে বিরোধী জোটের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তাতে সনিয়া গান্ধীকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলা হবে। বস্তুত সেই কারণেই নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতে চাইছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
এমনকি অধীরের ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, দিল্লিতে একটি হিন্দি সংবাদ চ্যানেলের সম্পাদকের জনপ্রিয় টক শোতে অধীরকে আমন্ত্রণ করা হলেও তিনি অপরাগতার কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
এহেন অবস্থায় আবার বাংলা কংগ্রেসের অনেকেই তৃণমূলের সঙ্গে জোটে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। তার পুরোধায় রয়েছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ ছিলেন প্রদীপবাবু। ২০১৭ সালে একপ্রকার তৃণমূলের তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, জোটের গন্ধ পেতেই প্রদীপ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এমনকি অধীরের পরিবর্তে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হতে চাইছেন তিনি।
কিন্তু প্রদীপ ভট্টাচার্যের ব্যাপারে অনেকের আপত্তি রয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদক রবিবার দ্য ওয়াল-কে বলেন, প্রদীপদার বয়স হয়েছে। সোমেন মিত্রও ওনাকে প্রদীপ দা বলতেন। বরং নেপাল মাহাতোকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করে দিলে ভাল হবে। দলের মধ্যে থেকে অন্য নামও উঠছে। এহেন পরিস্থিতিতে কংগ্রেস হাইকমান্ডের তরফে রাজ্য কংগ্রেসের কিছু নেতাকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
উনিশের লোকসভা ভোটের আগেও অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছিল। তখন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি করা হয়েছিল সোমেন মিত্রকে। অধীর তাতে খুশিই হয়েছিলেন। কারণ, তাঁর লক্ষ্য ছিল বহরমপুরে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে জেতা। তৃণমূল সে সময়ে আবার শুভেন্দু অধিকারীকে বহরমপুর জেতানোর দায়িত্ব দিয়েছিল। অধীরের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যক্তি আক্রমণে নেমে পড়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু শেষমেশ প্রায় ৯০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন অধীর।
প্রদেশ কংগ্রেসের অনেকের মতে, এবারও তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে সরালে অধীর অখুশি হবেন না। কারণ, সেক্ষেত্রে লোকসভা ভোটে গোটা রাজ্যের দায় তাঁর মাথায় থাকবে না। তিনি শুধু বহরমপুর-মুর্শিদাবাদে ফোকাস করার সুযোগ পাবেন।
তবে সর্বভারতীয় কংগ্রেস তথা এআইসিসি-র এক সাধারণ সম্পাদক রবিবার জানান, বাংলায় সাংগঠনিক কোনও পরিবর্তন করতে গেলে বা তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতার মতো ভাবনাচিন্তা হাইকমান্ডের থাকলে, অধীর চৌধুরীর মতামত অবশ্যই নেওয়া হবে। কারণ, সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী দুজনেই অধীরকে পছন্দ করেন। এমনকী প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর সঙ্গেও এখন অধীরের তালমিল বেশ ভাল। গত পাঁচ বছর ধরে অধীরকে লোকসভায় কংগ্রেস নেতা ও পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করে রেখেছেন সনিয়া-রাহুল। আনন্দ শর্মা, কে সি বেনুগোপাল, মণীশ তিওয়ারির মতো নেতারা বহুবার অধীরকে লোকসভার নেতার পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে খবর। কিন্তু সনিয়া-রাহুল তাতে আমল দেননি। তা ছাড়া আহমেদ পটেলরা যেভাবে দল চালাতেন রাহুল সেভাবে দল চালানোর পক্ষে নন। দিল্লি থেকে রাজ্যের উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার পক্ষে নন তিনি।
এখন দেখার, অধীর নিজে থেকেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন কিনা।
জ্বলে না পথবাতি, বর্ধমানের চেয়ারম্যানকে ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর