শেষ আপডেট: 27th August 2022 15:12
চেতলায় চার নম্বর পেয়ারি মোহন রোড থেকে ১৮৮ হরিশ মুখার্জি রোডের দূরত্ব (Distance) ঠিক দেড় কিলোমিটার। গাড়িতে গেলে লাগে ৮ থেকে ৯ মিনিট। কিন্তু তৃণমূলের অনেকেই এখন ফিতে ফেলে মাপছেন, সত্যিই দেড় কিলোমিটার! নাকি দেড়শো?
চেতলায় পেয়ারি মোহন রোডে থাকেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। আর ১৮৮ হরিশ মুখার্জি রোড তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) স্থায়ী ঠিকানা। কৌতূহলের মূল বিষয় হল, অভিষেক-ফিরহাদের দূরত্ব এখন কতটা? বাইরে থেকে যা দেখা যাচ্ছে, অন্তরঙ্গেও কি তাই!
বস্তুত সংঘাতের শিকড় খুঁজতে গেলে ফিরে যেতে হবে ৬ বছর আগে। ২০১৬ সালে ভোটে জেতার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মন্ত্রিসভা গড়ছেন, তখনই বিড়ম্বনার একটা ছবি ফুটে উঠেছিল। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অভিষেক শুধু অনুপস্থিত ছিলেন তাই নয়, টুইট করে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে ডায়মন্ডহারের সাংসদ লিখেছিলেন, “মরালিটি অব প্রিন্সিপলস ভার্সেস মরালিটি অব লয়ালটি, টাফ কল! (“Morality of Principles Vs Morality of Loyalty!!! Tough Call!!!!!.”) অর্থাৎ আনুগত্য আর নৈতিকতার সংঘাত, কঠিন সিদ্ধান্ত!
ববির কথার দায় নিল না তৃণমূল, উনিই ব্যাখ্যা দিতে পারবেন, বললেন কুণাল
ওই নির্বাচনের আগেই নারদ স্টিং অপারেশন ফাঁস হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, সরকারের একাধিক মন্ত্রী টাকা নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে ফিরহাদ হাকিম অন্যতম। শুধু তা নয়, ভোটের প্রচারে বেরিয়ে দিদি বলেছিলেন, আগে জানলে টিকিট দিতাম না। কিন্তু ভোটের পর তাঁদেরই মন্ত্রী করাটা অভিষেকের নাপসন্দ ছিল বলেই অনেকের মত। অন্তত টুইটে সেটাই অভিষেক বোঝাতে চেয়েছিলেন বলে তাঁরা মনে করেন। অর্থাৎ সংঘাতের শুরু তখন থেকেই।
ঘটনাচক্রে সেই নারদ-নারদ এখন ফের মাথা তুলেছে। ওই স্টিং অপারেশন নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন ফিরহাদ হাকিম। শুভেন্দু বলেছিলেন, নারদ স্টিং ছিল ষড়যন্ত্র। কেডি সিংকে দিয়ে তা করানো হয়েছিল। তার নেপথ্যে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু-ববির সুর এভাবে মিলে যাওয়াতেই তৃণমূলের মধ্যে জল্পনার স্রোত বয়ে গেছে।
এমনিতে হালফিলে অভিষেকের সঙ্গে ফিরহাদ হাকিমের মতান্তর বারবার প্রকট হয়েছে। অভিষেক যখন দলে এক ব্যক্তি এক পদ নীতি বাস্তবায়নের কথা বলেছেন, তখন পাঁচিল খাড়া করার চেষ্টা করেছেন ববি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্ধৃত করে বলেছেন, এই নীতি বাস্তবায়িত হবে না। পুরভোটে প্রার্থী বাছাই নিয়েও মতান্তর ঘটেছে বলেই দলীয় সূত্রের দাবি। অনেকের মতে, এ বার ব্যাপারটা আরও সরাসরি হয়ে গেল।
এহেন পরিস্থিতিতে শনিবার কুণাল ঘোষের সাংবাদিক বৈঠক ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। নারদ প্রসঙ্গে ববির মন্তব্য নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি অভিষেক ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূল মুখপাত্র। শুধু বলেছেন, এর ব্যাখ্যা উনিই দিতে পারবেন।
আরও তাৎপর্যপূর্ণ হল, ব্যাপারটা কেবল এখানেই থেমে নেই। ইদানীং সিবিআই-ইডির তৎপরতার প্রেক্ষিতে ফিরহাদ হাকিম যে সব কথা বলছেন, তা নিয়েও ঘরোয়া ভাবে প্রশ্ন তুলছেন অভিষেক ঘনিষ্ঠরা। শুক্রবারও ববি বলেছেন, জেলে যেতে ভয় পাই না, শুধু সামাজিক গ্লানি নিয়ে ভয় লাগে। যাঁরা সিবিআই লেলিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন, তাঁদেরও স্ত্রী আছে, মেয়ে আছে, ইত্যাদি।
অভিষেক ঘনিষ্ঠদের মতে, ফিরহাদের এই সব কথায় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। বরং আত্মসমর্পণের আকুতিই বেশি বলে তাঁদের মত। যদিও পুরমন্ত্রীর কাছের লোকেরা তা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, দাদা সোজা কথার মানুষ। ওঁর মধ্যে প্যাঁচ নেই, তাই সহজ কথা সহজ ভাবে বলেন।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, অভিষেক-ববি যে দূরত্ব বাড়ছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে ফিরহাদ হাকিম দিদির অনেক পুরনো দিনের সৈনিক। এঁদের প্রতি দিদির স্নেহও রয়েছে। সেটাই ফিরহাদ হাকিমদের বর্ম। তাই ১৮৮ হরিশ মুখার্জি রোডের সঙ্গে দূরত্ব বাড়লেও সরকার বা দলে ফিরহাদ হাকিমের অবস্থান এখনই লঘু হওয়ার আশঙ্কা নেই।