শেষ আপডেট: 12th July 2023 14:31
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৩! বাংলার মসনদে পালা বদলের পর এই তিনটি সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন (WB Panchayat Election) হয়েছে। অনেকেই ভেবেছিলেন, পঞ্চায়েত ভোটে বাম জমানায় যে হিংসার ছবি দেখা গিয়েছিল, সেটা হয়তো পাল্টাবে! আদৌ কি 'পরিবর্তন' হয়েছে, বন্ধ হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে রক্তগঙ্গা বওয়া? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা, এক বাক্যে বলছেন, না!
২০০৩ ও ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা এখনও অনেকের মনে আছে। সে সময় বাংলার (West Bengal) শাসকের আসনে ছিল বামেরা, বিরোধী ছিল তৃণমূল। এই দুই নির্বাচনে অনেক মা তাঁর সন্তান হারিয়েছেন, স্ত্রী স্বামী হারা হয়েছেন, সন্তানরা পিতৃহারা হয়েছে! কিন্তু বদলায়নি পঞ্চায়েত নির্বাচনের ছবি! ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট হিংসায় মৃত্যু (Death toll) হয়েছিল ৮০ জনের। যদিও সরকারি হিসেবে সেই সংখ্যাটা ১৭। ২০০৩ সালের মতো বিভীষিকা হয়তো দেখা যায়নি ২০০৮-এ। তবে ওই বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মারা গিয়েছিলেন ১০ জন (সরকারি হিসেবে)। তবে একাধিক সংবাদমাধ্যাম সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, সে বছর ভোটে মৃত্যু হয়েছিল ৪৫ জনের।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩১। যদিও খাতায়-কলমে সেই সংখ্যাটা ছিল ১৩। ২০১৮ সালে হিংসা বেড়েছিল আরও বেশি। অসমর্থিত সূত্রের দাবিতে, ওই সালের পঞ্চায়েতে মৃত্যু হয়েছিল ৭৫ জনের। খাতায়-কলমে সেটাই ছিল ১৪। আর ২০২৩?
শনিবার পঞ্চায়েত ভোট মিটলেও হিংসার ধারা এখনও অব্যহত বাংলায়। ৮ জুন পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার দিনই প্রথম লাশ পড়েছিল। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে এক কংগ্রেস কর্মীর খুনের ঘটনা ঘটে। সেই থেকে বাংলায় চলছে অশান্তি। গুলি চলছে, বোমা পড়ছে, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। মনোনয়ন পর্ব থেকে ধরলে, রবিবার দুপুর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৬। শুধু ভোটের দিনই মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের! যদিও সরকারিভাবে এখনও মৃতের সংখ্যা জানানো হয়নি।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও রক্ত ঝরেছে বাংলায়। কিন্তু ২০২১ সালের ছবিটা একটু অন্যরকম ছিল। ভোটের আগের থেকে, ভোট পরবর্তী হিংসায় বলি হয়েছেন অনেকে।
২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে (Panchayat Election 2023) হিংসা নিয়ে আগে থেকেই আতঙ্কিত ছিলেন রাজ্যবাসী। সুষ্ঠু ও অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবি ছিল সর্বত্র। হাইকোর্ট বারবার বিভিন্ন পঞ্চায়েত মামলার রায় দেওয়ার সময় বলেছিল, নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব নিতেই হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে ভোট করাতে হবে।
হাইকোর্টের নির্দেশের পরই কেন্দ্রের থেকে মোট ৮২২ কোম্পানির কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। অনেক টালবাহানার পর সেই চাহিদা মতো বাহিনী মঞ্জুরও করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কিন্তু ভোটের দিন কোথায় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী?
বহু বুথেই দেখা যায়নি বাহিনীদের। যা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে কমিশনও। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন, যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং এক দফায় নির্বাচন হওয়াই ভোটের দিনে হিংসার মূল কারণ।
সেই নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'সব মৃত্যুই যন্ত্রণাদায়ক। তৃণমূল কংগ্রেস প্রত্যেক মৃত্যুতেই দুঃখিত। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই বাংলাকে নেতিবাচক দেখানোর চিত্রনাট্য লেখা হয়েছিল। যা ছিল বিরোধী দলগুলির পরিকল্পনা।'
কুণাল যেখানে ভোট হিংসায় মৃত্যুর জন্য বিরোধীদের কাঠগড়ায় তুলছে, সেখানে বিরোধীদের অভিযোগের তির শাসক দল ও নির্বাচন কমিশনের দিকেই। প্রশ্ন তুলছেন নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার ভূমিকা নিয়েও।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, 'ভোট মানেই রক্তপাত, এই ধারণা পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার বা রাজ্য নির্বাচন কমিশন কেউই এই ধারণা পাল্টানোর পথে হাঁটেনি।' শুধু রাজ্য সরকার নয়, সুজনের নিশানায় ছিল কেন্দ্র সরকারও। তিনি বলেন, 'হাইকোর্টের নির্দেশ মতো যদি সময়মতো কেন্দ্র, বাহিনী পাঠাত তবে সহিংসতা কমানো যেত।' বিজেপি যদিও রাজ্য সরকারকে এই হিংসার জন্য দায়ী করছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ তো চলবেই। রাজনীতির তো এটাই নিয়ম। কিন্তু যেসব মায়ের কোল শূন্য হয়ে গেল, তা কি আর ভর্তি হবে? দোষ যারই হোক না কেন, ভুগতে হল সাধারণ মানুষকেই। রক্তগঙ্গার রাজনীতি কবে বন্ধ হবে, সেই প্রশ্নই রয়েছে বাংলার মানুষের মনে।
শনিবার বিকেল ৫টার পর ১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে, কোন জেলায় কত