শেষ আপডেট: 2 February 2024 09:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো, জলপাইগুড়ি: কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে রাজগঞ্জ ব্লকের মানতাদারি গ্রামের বাতাস। হাহাকার করছেন দাস পরিবারের সদস্যরা। চোখের জলে ভেসে যাচ্ছেন অর্জুন দাসের বাবা-ঠাকুমা। ফের মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হল যে।
গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিন বাবার মোটরবাইকে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন পাতিরাম নাহাটা স্কুলের ছাত্র অর্জুন দাস। নিজের স্কুলেই মাধ্যমিক পরীক্ষার সিট পড়েছিল তার। আচমকাই বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসা একটি বুনো দাঁতাল তাঁদের পথ আটকে দাঁড়ায়। মোটরবাইকে বাবার পিছনে বসে থাকা অর্জুনকে শুঁড়ে জড়িয়ে আছড়ে মাটিতে ফেলে। ঘটনার অভিঘাত বুঝতে যে সময়টুকু লেগেছিল বাবা বিষ্ণু দাসের, তারমধ্যেই জঙ্গলের পথে মৃত্যু হয় ১৬ বছরের কিশোরের।
মর্মান্তিক সেই ঘটনায় শোকের ছায়া নামে গ্রামে। বিষ্ণুবাবুর বড়ছেলে ছিল অর্জুন। নিজে চাষের কাজ করেন। ছেলেটা লেখাপড়া শিখে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেই স্বপ্নে মশগুল ছিলেন। একলহমায় সেই স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছিল। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতেই ফের ঘুরে ফিরে আসছে সেই স্মৃতি। শুধু দাস পরিবার নয়, চোখের জলে ভিজছেন গোটা গ্রামের মানুষ।
এই ঘটনার থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার হাতির হামলা বাঁচিয়ে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিতে প্রথম থেকেই সচেষ্ট প্রশাসন। উত্তরবঙ্গ তো বটেই বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়েও জঙ্গলমহল। শীতের মরশুমে দলমা থেকে যেমন হাতির পাল নেমে আসে, তেমনই এখানকার জঙ্গলে সারাবছরের বাসিন্দা হাতির সংখ্যাও কম নয়। মাঝেমধ্যেই খাবারের খোঁজে জঙ্গল লাগোয়া লোকালয়ে ঢুকে পড়ে তারা। তাণ্ডব চালিয়ে ফিরে যায় জঙ্গলে। আবার এই জঙ্গলের পথ পেরিয়েই দূরবর্তী এলাকার অনেক পড়ুয়াকে স্কুলে যেতে হয়। তখনও হাতির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় এমন কোনও অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির মধ্যে যাতে পরীক্ষার্থীদের পড়তে না হয় তার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয় জেলা প্রশাসন ও বন দফতর। শুক্রবার সকাল থেকেই জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় হাতির হামলা ঠেকিয়ে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিতে হাতির গতিবিধির উপর নজরদারি শুরু করে বনদফতর। জঙ্গল লাগোয়া রাস্তায় যেখানে হাতি থাকতে পারে তা চিহ্নিত করে সেখানে হাতি তাড়ানোর গাড়ি ঐরাবত এবং হুলাপার্টি মজুত রাখা হয়। প্রয়োজনে ঐরাবৎ-এ পরীক্ষার্থীদের পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জঙ্গলের ছোট রাস্তা এড়িয়ে বড় রাস্তা দিয়ে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।