শেষ আপডেট: 5th September 2023 09:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পশ্চিম বর্ধমান: জীবনে বড় হওয়ার পথে কোনওদিনই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। জন্মান্ধ হয়েও অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও সাহসিকতাকে ভর করে 'আদর্শ শিক্ষক' (Teacher Day 2023) হয়ে উঠেছেন বর্ধমানের (Bardhaman) সঞ্জয় কুমার গোস্বামী।
জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন হওয়ায় ছেলের জন্য প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনদের অবহেলার শিকার হতে হয়েছে সঞ্জয়বাবুর বাবা-মাকে। বাবা-মায়ের এই অপমান সহ্য করতে না পেরে এক সময় মানসিক অবসাদেও ভুগেছেন সঞ্জয়। সে সময় ছেলেকে ভরসা জুগিয়ে গেছেন সঞ্জয়বাবুর বাবা-মা। সামাজিক অবজ্ঞা সহ্য করে ছেলেকে জীবনে স্বনির্ভর করার জন্য কলকাতার ব্লাইন্ড স্কুলে ভর্তি করেছিলেন সঞ্জয়বাবুর বাবা। সেখানে থেকেই শুরু হয় তাঁর আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই।
কলকাতার ব্লাইন্ড স্কুলেই মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন সঞ্জয়। কর্মসূত্রে বাবা বিবেকানন্দ গোস্বামী আসানসোলের কুলটিতে থাকতেন। তাই মাধ্যমিক পাশ করার পর কুলটি স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। পরে আসানসোলের বিবি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক হন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করার পর পুরুলিয়া থেকে বিএড করেন তিনি। ২০০৫ সালে স্কুল সার্ভিসের পরীক্ষায় পাশ করে পানাগড় রেলওয়ে কলোনি হাইস্কুলে ইংরেজি শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। আরও এক নতুন লড়াই শুরু হয় তাঁর।
সঞ্জয়বাবু জানান, 'আর পাঁচজন সহকর্মীর মতো তিনি স্বাভাবিক নন। দৃষ্টিহীন হওয়ায় অনেক সংশয় নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলাম। প্রথম দিকে কিছুটা মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়েছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে সব বাধা কাটিয়ে উঠি।'
এখন তিনি ছাত্রছাত্রীদের কাছে একজন আদর্শ শিক্ষক। পড়ানোর পাশাপাশি গান, আবৃত্তি ও কম্পিউটার চালানোয় দক্ষতা রয়েছে তাঁর। ক্লাস চলার সময় বোর্ডে কোনও কিছু লেখার জন্য নিজের রাস্তা বের করে ফেলেছেন সঞ্জয়। ক্লাসের পড়ুয়াদের বোর্ডে লেখার দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। মুখে বলেই ইংরাজি গদ্য বা পদ্যের অন্তর্নিহিত অর্থ ছাত্র ছাত্রীদের সুন্দর করে বুঝিয়ে দেন।
শুধু তাই নয়, ক্লাসের প্রত্যেক পড়ুয়ার নাম, বাড়ির ঠিকানা সবই মুখস্থ রয়েছে তাঁর। স্কুলের কোনও পড়ুয়ার পড়াশোনায় সমস্যা হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারে টাইপ করে ইংরেজিতে নোট তৈরি করে একেবারে বাড়িতে দিয়ে আসেন।
এক ছাত্র জানায়, 'সঞ্জয় স্যার দৃষ্টিহীন হলেও পড়াশোনা বুঝতে আমাদের কোনও অসুবিধা হয় না। তাঁর কাছে পড়া বুঝতে অসুবিধা হলে বারে বারে তা বুঝিয়ে দেন।'
এরই সঙ্গে গান বাজনাও শিখেছেন তিনি। দুরদর্শনে প্রতিবন্ধী শিল্পী হিসেবে গানের অনুষ্ঠানও হয়েছে তাঁর। বিদ্যালয়ে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলেই পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে সঞ্জয়বাবুর কাঁধে।
তাঁর পান্ডিত্যে মুগ্ধ স্কুলের প্রধান শিক্ষকও। তিনি জানিয়েছেন, 'এমন এক সহকর্মীকে পেয়ে আমি গর্বিত। স্কুলের সকলের কাছে সঞ্জয়বাবু এক অনুপ্রেরণা। তাঁর শান্তশিষ্ট, সহানুভূতিশীল স্বভাবে সকলেই মুগ্ধ। শিক্ষাঙ্গনে তাঁর মতো শিক্ষকদের খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর।'
আরও পড়ুন: দুটি হাত নেই, পায়ে লিখেই ভবিষ্যৎ গড়েন বর্ধমানের শিক্ষক জগন্নাথ