শেষ আপডেট: 12th June 2020 03:15
গ্রামবাসীদের বাধায় বাড়িতে ঢুকতে না পেরে হাতি তাড়ানোর টঙ ঘরে কোয়ারেন্টাইন দুই ভাইয়ের
দ্য ওয়াল ব্যুরো, জলপাইগুড়ি : স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে করোনা ঠেকাতে পরিযায়ীদের বাড়ি ঢোকা নিয়ে চুড়ান্ত নিদান দিল গ্রামের মাতব্বররা। তারই জেরে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার বদলে গ্রামবাসী দুই ভাইয়ের ঠাঁই হল হাতি তাড়ানোর টঙ ঘরে।
বৈকন্ঠপুর জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম মালিভিটা। সেই গ্রামের যুবক অমর বাহাদুর রাই হোটেলে কাজ নিয়ে বছরখানেক আগে গিয়েছিল আন্দামানে। লকডাউনের জেরে সেখানে আটকে যান তিনি। অবশেষে গত ৪ তারিখ জাহাজে চেপে আন্দামান থেকে মুম্বই আসেন। সেখান থেকে প্লেনে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে গত ১০ তারিখ বাসে করে শিলিগুড়ি পৌঁছন। দাদা ফিরেছে খবর পেয়ে মোটরবাইক নিয়ে শিলিগুড়ি চলে যান অমরের ভাই জীবন বাহাদুর রাই। এরপর দুই ভাই মোটরবাইকে করে সোজা চলে যান হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়।
কিন্তু গ্রামে ঢুকতে গেলে এলাকার মানুষের বাধার মুখে পড়ে দুই ভাই। বাড়িতে ঢুকতে না পেরে তাঁরা চলে যান তাঁদের জমিতে থাকা হাতি তাড়াবার টঙ ঘরে। ১০ তারিখ থেকে এই টঙ ঘরকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার বানিয়ে সেখানেই রয়েছেন তাঁরা।
পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা নিয়ে ইতিমধ্যে নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সেই নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা আছে মহারাষ্ট্র-গুজরাট সহ পাঁচ রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকা বাধ্যতামূলক। বাকিরা থাকবেন হোম কোয়ারেন্টাইনে। কিন্তু এই গ্রামে মাতব্বরদের নির্দেশই শেষকথা।
অমর বাহাদুর রাই বলেন, ‘‘এখানে আসার পর প্রথমেই হাসপাতালে যাই। আমাদের দেহে তেমন কোনও উপসর্গ না দেখা দেওয়ায় হাসপাতাল থেকে আমাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়। কিন্তু গ্রামের কিছু মানুষের বাধায় টঙ ঘরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হই।’’ যুবকের কাকা হরি বাহাদুর রাইও জানান, টঙ ঘরেই ওদের খাওয়া দাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিকারপুর গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান রঞ্জিতা রায় অবশ্য বলেন, ‘‘আন্দামান থেকে ওই যুবক গ্রামে আসবে এইটুকু আমাদের জানানো হয়েছে। ও যে এসে গেছে তা আমাদের জানা নেই। নিশ্চই ওদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঘটনায় বেলাকোবার রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এক শ্রেণির মানুষের মনুষ্যত্ব লোপ পাচ্ছে। যেখানে স্বাস্থ্য দফতর লিখে দিচ্ছে হোম কোয়ারেন্টাইন। সেখানে গ্রামের এক শ্রেণির মাতব্বর পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। এরফলে একদিকে যেমন তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকার জায়গা পাচ্ছেন না, তেমনই বাড়িতে ঢুকতে না পেরে গ্রামের এক কোণে কোনওরকম ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। আমি খবর পেয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। যত তাড়াতাড়ি ওঁদের থাকার সুব্যবস্থা হয় ততই ভালো।’’