দিব্যেন্দু ভৌমিক, কোচবিহার: করোনা আবহে ২০ মার্চ থেকে বন্ধ ভোগ-অঞ্জলি। বন্ধ দর্শনার্থীদের প্রবেশ। চলছে শুধু নিত্য পুজো। এবার সেই বন্ধ মন্দির চত্বরেই শুক্রবার সকাল আটটা পনেরো মিনিটে নিজের গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে এলেন মদনমোহন দেব। বিশেষ স্নানের জন্য। সামাজিক দূরত্ব রাখতে ভক্তহীন মন্দির প্রাঙ্গন। মন্দিরের বারান্দায় ঘি, মধু, চিনি, দুধ ও ডাবের জলে সম্পন্ন হল রাজপ্রথা মেনে স্নানযাত্রা। সহস্র বারিধারায় স্নান করলেন মদনমোহন দেব। অর্থাৎ শুরু হয়ে গেল রথযাত্রার প্রস্তুতি।
রাজার শহর কোচবিহার প্রথম দু’ মাস করোনা প্রকোপহীন থাকলেও গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা দেড়শো ছুঁই ছুঁই। বৃহস্পতিবারও শহরের এক কিশোরের লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। ফলে ওলটপালট হয়ে গেছে সামাজিকতার পাশাপাশি ধর্মীয় রীতিনীতিও। মসজিদে না গিয়ে মানুষ নমাজ পড়ছেন নিজের বাড়িতে বসে। বন্ধ জেলার সব গির্জাও। দরজা খোলেনি মন্দিরগুলোরও। কোচবিহারের মহারাজাদের কুলদেবতা মদনমোহন মন্দিরের দরজাও বন্ধ সেই পথ ধরেই।
স্নানযাত্রার পুণ্যতিথিতে এ দিন বেজে ওঠে মদনমোহন মন্দিরের কাঁসর ঘণ্টা। রাজ পুরোহিত হীরেন্দ্র নাথ ভট্টাচার্য ও মদনমোহন দেবের পূজারী হরগৌরী মিশ্র শূন্য মন্দিরে প্রথা মেনে স্নান করান কোচবিহারের মানুষের প্রাণের ঠাকুর বড়বাবা মদনমোহনকে। রাজ আমলের সাবেক পুঁথি থেকে উচারিত হয় বৈদিক মন্ত্র। পাঁচ রকমের ভাজা,অন্ন, পায়েস ইত্যাদি রান্না করেন ভোগ পাচক অভিজিৎ চক্রবর্তী। সাজিয়ে দেন ভোগ বাড়িয়া সুজিত চক্রবর্তীরা।
হীরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘রাজআমলের প্রথা মেনে রথযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয় এই স্নানযাত্রার মধ্যে দিয়ে। তবে করোনার দাপটে এবার সবই অন্যরকম। প্রতিবার বহু মানুষের ভিড় করে আসেন স্নানযাত্রা দেখতে। এ বার শুনশান মন্দিরে হল বড়বাবার স্নান।
তবে এ বার মদনমোহন দেবের রথ কোচবিহারের রাজপথে নামবে কি না তা এখনও পরিষ্কার নয়। ‘‘কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাষ্ট বোর্ড এবং ট্রাষ্টের সভাপতি জেলাশাসক পবন কাদিয়ান করোনা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ বললেন কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের বড়বাবু জয়ন্ত চক্রবর্তী।
এবার ইতিহাসে প্রথমবার বাংলার নববর্ষে বন্ধ ছিল ঠাকুরবাড়ির দরজা। এর আগে ১৯২৩ সালে কলেরার প্রকোপের জন্য রাসমেলা বন্ধ রাখা হয়েছিল। প্রতিবার মদনমোহন রথে চেপে নিজের আবাস থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গুঞ্জবাড়ি এলাকায় মাসির বাড়ি ডাঙরাই মন্দিরে যান। সাত দিন সেখানেই থাকেন তিনি। মেলা বসে গুঞ্জবাড়িতে। এবার কি আদৌ মদনমোহনের রথপথে নামবে কি না জানা নেই কারও। ইতিহাসবিদ ডা: নৃপেন্দ্রনাথ পাল বলেন, ‘‘দীর্ঘ রাজ ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে মদনমোহন ঠাকুরের রথের সঙ্গে। প্রশাসন ও ট্রাস্ট সব দিক ভেবে সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন।’’