শেষ আপডেট: 21st April 2020 10:57
পুরুলিয়ায় গ্রামের বাইরে খেজুর গাছের নীচে কোয়ারেন্টাইনে সাত শ্রমিক, ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন জেলাশাসক
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পুরুলিয়া: ৩৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে নিজেদের গ্রামে পৌঁছেছিলেন তাঁরা। কিন্তু করোনা সতর্কতায় তাঁদের থাকতে দেননি গ্রামের বাসিন্দারা। সেই থেকে গ্রামের বাইরে খেজুর গাছের নীচে আশ্রয় নিয়েছেন ওঁরা সাতজন। গাছের তলায় আজ ১১ দিন। আর তিনটে ভোরের প্রত্যাশায় আছেন রামপুর গ্রামের সাত ঠিকে শ্রমিক। তাহলেই আকাশের নীচে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন সেরে ফেরা যাবে ঘরে। নরেশ সহিস, রাজু সহিসরা কাজ করতে গিয়েছিলেন পুরুলিয়ারই সাতুড়ি ব্লকের মধুকুণ্ডায়। ঠিকাদারের অধীনে কাজ। লকডাউন হয়ে যেতেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় আয়ও। তাই ঘরের পথ ধরেন তাঁরা। রেলপথ ধরে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গত ১১ এপ্রিল পাড়া ব্লকের রামপুর গ্রামে পৌঁছন তাঁরা। কিন্তু বাড়িতে ঢুকতে যেতেই করোনা সতর্কতায় স্বাভাবিকভাবেই পথ আটকান গ্রামের মানুষ। কারণ অন্য জায়গা থেকে আসছেন তাঁরা। নরেশ সহিস, রাজু সহিস জানান, গ্রামের মানুষের কথা শুনে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। সেখান থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে আসার পরেও তাঁদের গ্রামের মানুষ বলেন সরকারি নিয়ম মেনে বাইরে ১৪ দিন কাটিয়ে তবেই গ্রামে ঢুকতে। রাজু বলেন, ‘‘১৪ দিন গ্রামের বাইরে থেকে তবে গ্রামে ঢুকতে পারব বলে ওঁরা জানিয়ে দেন। তারপর থেকেই আমরা সাতজন গ্রামের বাইরে এই খেজুর গাছের নীচে এসে রয়েছি।’’ নরেশ সহিস বলেন, ‘‘গ্রামের লোক এসে রাস্তার উপর খাবার রেখে যাচ্ছে। সেখান থেকে নিয়ে এসে খাচ্ছি। তাই খাবারের অসুবিধা হচ্ছে না। রোদে আমাদের কিছু হয় না, কিন্তু ঝড়–বৃষ্টি হলে খুব অসুবিধায় পড়ে যাচ্ছি। তবে আর তো মাত্র দু’দিন।’’ বাড়ির কাছাকাছি আছেন, এতেই শান্তি তাঁদের। নরেশের কথায়, ‘‘ঘরের কাছেই আছি, এখানে যদি মরি, তাতেও শান্তি।’’ দীর্ঘ ১১ দিন এ ভাবে গাছের তলায় কেটে গেল তাঁদের। গ্রামের বাসিন্দা অমৃত সহিস অবশ্য বলেন, ‘‘গ্রাম থেকে ওদের বার করে দেওয়া হয়েছে এই অভিযোগ ঠিক নয়। ওরা বাইরে থেকে এসেছেন। সরকারি নিয়ম মেনেই তাই ১৪ দিন আলাদা থাকতে হবে। ওঁদের জন্য খাটিয়া আর বিছানার ব্যবস্থা করে দিয়েছি আমরা। খোঁজখবরও রাখছি। খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ এর জন্য প্রশাসনকে দোষ দিতেও নারাজ তিনি। কারণ তাঁর কথায় প্রশাসনকে কেউ এঁদের ব্যাপারে জানায়নি। জেলা প্রশাসনকে যে জানানো হয়নি মেনে নিয়েছেন এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য শুকদেব হাঁসদাও। তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি ওঁরা বাইরে থেকে এসেছেন। হাসপাতালে পরীক্ষার পর গ্রামের বাইরে আছেন। প্রশাসনকে জানিয়ে দেব।’’ পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার মঙ্গলবার ওই শ্রমিকদের ব্যাপারে জানতে পেরে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘অন্য জায়গা থেকে আসছেন বলে বিভিন্ন জায়গায় অসুবিধায় পড়ছেন এই পরিযায়ী শ্রমিকরা। এ ব্যাপারে সরকারের সতর্ক নজর রয়েছে। এই শ্রমিকদের ব্যাপারে আমি অবশ্যই খোঁজ নেব।’’