অভিরামপুরে শীতের সকাল কিন্তু এখনও নস্টালজিক! খেজুর রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন পাসিরা
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: মনে পড়ে নরেন্দ্রনাথ মিত্রের সেই বিখ্যাত গল্প ‘রস’? যারা খেজুরগাছ কেটে রস বের করেন সেই পাসিদের জীবন আর রসের ভিয়েন চিত্রিত সেই গল্পে। এই গল্পকে ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছিল অমিতাভ বচ্চন আর নুতন অভিনীত ‘সওদাগর’ ছবিটি
শেষ আপডেট: 12 December 2020 00:23
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: মনে পড়ে নরেন্দ্রনাথ মিত্রের সেই বিখ্যাত গল্প ‘রস’? যারা খেজুরগাছ কেটে রস বের করেন সেই পাসিদের জীবন আর রসের ভিয়েন চিত্রিত সেই গল্পে। এই গল্পকে ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছিল অমিতাভ বচ্চন আর নুতন অভিনীত ‘সওদাগর’ ছবিটি। এক পাসির ভূমিকায় অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন অমিতাভ।
রসের জোগাড় করা পাসিদের জীবন কিন্তু শুকিয়ে গেছে এখন। এ বঙ্গে শীতের অন্যতম অনুসঙ্গ কুয়াশামাখা সকালে খেজুররস আর মেলে না তেমন। খেজুর গাছের সংখ্যাই যে কমে এসেছে অনেক। প্রাকৃতিকভাবে যেমন সংখ্যা কমেছে, তেমনই কেউ আর এ গাছ বসিয়ে বাড়িয়ে দেয় না যত্নের হাত। রসের দেখা না মেলায় মুখ লুকোচ্ছে নলেন গুড়ও।

পূর্ব বর্ধমানের অভিরামপুরে শীতের সকাল কিন্তু নস্টালজিক। মানকর সংলগ্ন সভাহরণ পুলের কাছে এলে দেখা যাবে বেশ কিছু পাসি এখানে তাঁদের অস্থায়ী সংসার পেতেছেন। এরা কেউই পূর্ব বর্ধমান জেলার লোক নন। কিন্তু বিশ বছর ধরে প্রতি মরসুমে সাজ সরঞ্জাম নিয়ে চলে আসেন এখানে। গাছ পালি নিয়ে রস ভরে আনেন। তারপর জ্বাল দিয়ে গুড় বা পাটালি তৈরি করেন। যাঁরা জানেন তেমন অনেক ক্রেতাই খাঁটি গুড়ের সন্ধানে চলে আসেন এখানে।
এবারেও এখানে এসেছেন প্রবীণ মইজ্জুদ্দিন শেখ। তিনি জানান ৭০ টি গাছ লিজ নিয়েছেন এবার। তাঁর কথায়, ‘‘এক একটা গাছে রস পাওয়ার জন্য প্রায় একমাস করে অপেক্ষা করতে হয়। বারবার গাছ কাটা আর বিরতির একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। তারপর রস পাওয়ার পালা।’’ আর একজন নবীন রসিক মিন্টু শেখ। তিনি জানান ভোর থেকে উঠে কাজে লাগতে হয় তাঁদের। রস নামিয়ে প্রায় চার পাঁচ ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে তবে ঝোলাগুড় পাওয়া যায়। আবার সেই গুড়কে আবার জ্বাল দিয়ে কাপড়ে মেলে ছাঁচ দিয়ে তৈরি হয় পাটালি।
এখানে প্রায়ই গুড় কিনতে আসেন রাধারমন ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে ভালো এবং খাঁটি গুড় মেলে। দামও কিছুটা কম। অনেক জায়গায় পাঠাই আমি নিজেও।’’ পাসিদের সাথে কথা বলে জানা গেল এবারের গুড়ের বাজারদর ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজির আশেপাশে আছে। এবারে ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদাও ভাল। শীত পড়তে না পড়তেই নলেন গুড়ের রসে মজেছেন ওই এলাকার মানুষ।