শেষ আপডেট: 13th November 2021 09:58
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পাহাড়প্রমাণ অভিযোগ। এফআইআরের সংখ্যাই বলে দিচ্ছে, বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসার (Post poll Violence) ঘটনা ঘোরতর বাস্তব। বাংলায় ভোট মিটতেই বিরোধী দল, বিশেষত বিজেপির উপর বল্গাহীন সন্ত্রাস চলছে বলে অভিযোগ করেছিল গেরুয়া শিবির। খুন, ধর্ষণ, লুঠপাট, ঘরছাড়া করা, মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়া—নানাবিধ ঘটনার অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত। কিন্তু গোড়া থেকেই রাজ্য সরকারের তরফে বলা হচ্ছিল, দু’চারটে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া তেমন কিছু হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় বার শপথ নেওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন, দু’চারটে যা ঘটনা ঘটেছে তখন আমাদের হাতে প্রশাসন ছিল না। ছিল নির্বাচন কমিশনের হাতে। সেই হিংসার ঘটনার তদন্তের আর্জি নিয়ে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। আদালতই সিবিআই-কে তদন্তভার দিয়েছিল। তবে ভাগ করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। বলা হয়েছিল, খুন-ধর্ষণের মতো বড় ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে তদন্ত করবে সিবিআই এবং ছোটখাট অন্য যে ঘটনাগুলির অভিযোগ আসছে, তার তদন্ত করবে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম তথা সিট। সেই তদন্ত এখনও চলছে। শনিবার পর্যন্ত সিট সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত তাঁরা ৬,৯০০টি এফআইআর দায়ের করেছে। এখনও পর্যন্ত ভোট পরবর্তী হিংসায় বড় ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে মোট ৫০টি এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ৩০ জন। অন্যদিকে সিট শুরুর দিকে তদন্তে সে ভাবে গা লাগায়নি। পরে আদালতের গুঁতোতেই নড়েচড়ে বসতে হয় তাদের। তবে পরে শুরু করেও এসআইটি যে পরিমাণ এফআইআর করেছে তা বেশ চোখে লাগার মতো। বিজেপির অনেকের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত যে সংখ্যায় এফআইআর হয়েছে তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এর অনেক বেশি হিংসার ঘটনা গ্রাম-বাংলায় ঘটেছে। যার দাগ এখনও দগদগে। বহু এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও শাসকদলের চাপে মানুষ খুলছেন বলেও অভিযোগ করছে বিজেপি। সিটের দায়ের করা এফআইআরের সংখ্যা নিয়ে এক বিজেপি নেতা বলেন, “এতদিন মুখ্যমন্ত্রী-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্ত নেতা বলছিলেন কিচ্ছু হয়নি। আর সিট যে এফআইআর করেছে তাতেই স্পষ্ট, কী অরাজক পরিস্থিতি বাংলায় রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, উত্তরবঙ্গের একাধিক এলাকা থেকে বিজেপি কর্মীরা গিয়ে পাশের রাজ্য অসমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আদালত বলার পরে কিছু মানুষ বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন। এখনও অনেকে ভিটেহীন। যাঁরা ফিরেছেন তাঁরাও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, সিটের মাথায় তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ অফিসাররাই রয়েছেন। এতেই বোঝা যাচ্ছে, তাঁরাও চাপতে পারছেন না বাস্তবতা। এই এফআইআরের সংখ্যা আসলে মমতার নৈরাজ্যের শাসনকেই বেআব্রু করে দিয়েছে। এরমধ্যেই আবার তদন্ত রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দিয়েছে সিবিআই এবং সিট। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চ দুই সংস্থাকেই নির্দেশ দিয়েছে আরও স্পষ্ট করে রিপোর্ট দিতে হবে। তা জমা করতে হবে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে। আগামী ২৩ ডিসেম্বর এই মামলার শুনানি হবে হাইকোর্টে। পড়ুন দ্য ওয়ালের সাহিত্য পত্রিকা 'সুখপাঠ'