শেষ আপডেট: 5th October 2024 16:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো, মালদহ: তখন অবিভক্ত বাংলা। পাবনা জেলার বাদাই গ্রামের জমিদার ছিলেন তরফদাররা। বিপুর পরিমাণ চাষের জমি ছিল তাঁদের। পরিবারের তিন ভাই চন্দ্রনাথ, দুর্গানাথ ও যজ্ঞেশ্বরের দাপট ছিল পাবনা জুড়ে। জমিদার চন্দ্রনাথ তরফদার এই দুর্গাপুজোর পত্তন করেন। কখন মহামরী, কখন হামলা শিকার হয়েও পুজোয় কোনও ছেদ পড়েনি। দীর্ঘ ১৭৮ বছর ধরে চলে আসছে। লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে, বাড়িতে বিবাহযোগ্যা মেয়ে থাকলে শাঁখা দিয়ে মানতে নাকি খুব তাড়াতাড়ি পাত্রের সন্ধান মেলে।
এখন সেই পুজো হয় পুরাতন মালদহ ব্লকের মোহনবাগান গ্রামে। এই গ্রামে এক কিলোমিটার মধ্যে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে টাঙন নদী। এই নদীর একটি অংশ বাংলাদেশে পড়েছে। ১৭৭৯ সাল থেকে তরফদার পরিবারের দুর্গাপুজো মোহনবাগান গ্রামে হয়ে আসছে। প্রথমে টিনের ছাউনির দেওয়া মন্দির ছিল। এখন সেখানে পাকা মন্দির গড়েছে।
পবিরারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে থাকার সময়ে বহু দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছিল পরিবার। এক বছর সেখানে স্ম পক্স মহামারী আকার নিয়েছিল। সেই রোগে পরিবারের ৮ সদস্য মারা যান। তখনও দেবীর পুজো বন্ধ হয়নি। তাছাড়াও ১৯৭১ সালে বাড়িতে দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছিল। গোটা বাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়। সেই সময়ে পুজোর হয়েছিল তরফদার বাড়িতে। তারপরে একে একে পরিবারের সদস্য এপার বাংলায় চলে আসেন। ১৯৭৯ সালে বাড়ি শেষ সদস্য মালদহে চলে আসার পরে সেখানেই পুজোর আয়োজন করা হয়।
পরিবারের সদস্য রবীন্দ্রনাথ তরফদার বলেন, ১৯৭৯ সালে দেবীর সমস্ত জিনিসপত্র এপারে নিয়ে আসা হয়েছিল। তখন কোনও দেশের সীমান্তরক্ষীরা বাধা দেয়নি। সেবছর থেকে এখানে পুজো শুরু হয়। এখন আমরা চতুর্থ প্রজন্ম এই পুজো করছি।
তরফদার পরিবারের ছোটো বৌ বীণা। তাঁর কথায়, "এই পুজোর শুরু করেন চন্দ্রনাথ তরফদার। তিনি দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। স্বপ্নাদেশে দেবী বলেছিলেন বাড়ির পুকুরপাড়ে পুজোর সমস্ত সামগ্রী রাখা আছে। সেই সামগ্রী দিয়ে পুজোর শুরু করতে। এছাড়াও একবার এক বাচ্চা মেয়ে শাঁখারি কাছ থেকে শাঁখা কিনেছিল। দাম চাওয়াতে শাঁখারিকে বলে, সে চন্দ্রনাথের মেয়ে। শাঁখারি যেন চন্দ্রনাথের কাছ থেকে দাম নিয়ে নেয়। শাঁখারি কথা চন্দ্রনাথকে বললে তিনি ভাবনায় পড়ে যান। কারণ চন্দ্রনাথে কোনও কন্যা সন্তান ছিল না। চন্দ্রনাথে বুঝতে পারে স্বয়ং দেবী এমন করেছেন। তখন থেকেই শাঁখা দিয়ে দেবীর কাছে মানত করেন সাধারণ মানুষ ৷ প্রতিবছর পুজোয় প্রচুর শাঁখা দেবীকে উৎসর্গ করেন ৷ মানুষ বিশ্বাস করেন, ঘরে বিবাহযোগ্যা মেয়ে থাকলে শাঁখার মানতে নাকি খুব তাড়াতাড়ি পাত্রের সন্ধান মেলে ৷"
বীণা জানিয়েছেন, পুজোর তেমন বিশেষ আচার না থাকলেও তাঁদের পুজোর হয় বৈষ্ণবমতে। দশমী তিথিতে কীর্তন আর ঢাকঢোল বাজিয়ে গ্রামের পুকুরে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। যদিও প্রথম থেকে তরফদার বাড়িতে দেবীমূর্তি গড়ে চলেছেন মুচিয়া বারুইপাড়ার শিল্পী প্রভাত পাল। বয়সের ভারে শরীর ঝুঁকে পড়লেও ১৯৭৯ সাল তিনি তরফদার বাড়ির প্রতিমা শিল্পী। প্রথম থেকেই মহাষষ্ঠীর দু'দিন আগে দেবীর চক্ষুদান হয় ৷