সুকমল শীল
কর্মীদের দাবি–দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভের নির্ধারিত জায়গা ছিল নীচে ক্যান্টিন লাগোয়া অংশ। কিন্তু একদিন আচমকাই কর্মীদের বিক্ষোভ শুরু হয় রাইটার্স বিল্ডিংসের ছাদে। তখন ক্ষমতায় বামেরা। পূর্তমন্ত্রী তখন ক্ষিতি গোস্বামী। চারতলা ছিল মূলত অধস্তন
কর্মীদের দাবি–দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভের নির্ধারিত জায়গা ছিল নীচে ক্যান্টিন লাগোয়া অংশ। কিন্তু একদিন আচমকাই কর্মীদের বিক্ষোভ শুরু হয় রাইটার্স বিল্ডিংসের ছাদে। তখন ক্ষমতায় বামেরা। পূর্তমন্ত্রী তখন ক্ষিতি গোস্বামী। চারতলা ছিল মূলত অধস্তন কর্মীদের দফতর। তাঁদের দাবি ছিল, ঠা ঠা রোদে ছাদ গরম হয়ে চারতলায় কাজ করা তো দূরের কথা, টেকাই দায় হয়ে উঠছে তাঁদের। কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা।
দীর্ঘদিনের সেই সমস্যাই পাকাপাকিভাবে মেটানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহাকরণ ঠান্ডা রাখতে ছাদে পাতা হয়েছে বিশেষ ধরণের মোটা শিট ‘সার্নাফিল’।
জানা গেছে, এসি ছাড়াই মহাকরণের ঘরগুলি ঠাণ্ডা রাখার পাশাপাশি ওই শিট ছাদকে রক্ষা করবে রোদের ক্ষতি থেকে। কারণ ওই শিট ভেদ করে অতিবেগুনি রশ্মিও ঢুকতে পারবে না।
সাংহাই থেকে আনা হয়েছে ওই শিট। সুইস প্রযুক্তিতে তৈরি চীনের ‘সিকা সার্নাফিল ওয়াটার প্রুফিং সিস্টেমস সাংহাই লিমিটেড’ তৈরি করছে এই শিট।
পলাশির যুদ্ধে জিতে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ তখন বেশ জাঁকিয়ে বসেছে এদেশের শাসকের গদিতে। শাসনকার্যে সাহায্য করার জন্য গাদা গাদা ‘জুনিয়র সিভিলিয়ন’ বা কেরানি আমদানি হচ্ছে বিলেত থেকে। তাদের থাকার জায়গা হিসেবে পুরনো কেল্লার পাশে ১৬ বিঘা ১৭ কাঠা ৮ ছটাক জমিতে টমাস লায়ন নামে এক সাহেব ১৭৭৬ থেকে ’৮০–র মধ্যে তৈরি করেন এই ‘কোম্পানি কা কেরানি কা বাড়ি’ বা রাইটার্স বিল্ডিং।
পরে লেফট্যনেন্ট গভর্নর স্যার অ্যাসলে ইডেনের উদ্যোগে ১৮৭৭ নাগাদ সে যুগের বিখ্যাত স্থপতি মার্টিন–এর পরিকল্পনায় রাইটার্স বিল্ডিংস-এর সামনে বিভিন্ন রকম স্থাপত্যগত পরিবর্তন আরম্ভ হয়। বসানো হয় করেন্থিয়ান রীতির কারুকার্য করা থাম। থামের মাথায় রাজকীয় মুকুটের প্রতীক ত্রিকোণ চূড়া ও তার ঠিক উপরে গ্রিক দেবী মিনার্ভার মূর্তি। এ ছাড়াও অন্যান্য মূর্তি দিয়ে অলঙ্করণের কাজ আরম্ভ হয়েছিল ওই সময়েই।
মূর্তিগুলি শাসন, বাণিজ্য, কৃষির প্রতীক। প্রথম ভাগে দুই দাঁড়ানো নারীমূর্তির মাঝে এক বসা নারীমূর্তি। আর তার নীচে ইংরেজিতে লেখা ‘জাস্টিস’। তার পরের ভাগে চারটি দাঁড়ানো পুরুষমূর্তি। এর নীচে লেখা ‘কমার্স’। তৃতীয় ভাগের মাঝে এক দাঁড়ানো নারীমূর্তি আর তার দু’পাশে বসা দুই নারীমূর্তি। এর নীচে লেখা ‘এগ্রিকালচার’ শব্দটি। ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রতীক সিংহমূর্তি। যেগুলি এখনও রয়েছে।
পরে অনেরবারই ছোটোখাটো পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রায় তেরোটি ব্লক রয়েছে এই প্রশাসনিক ভবন চত্বরে। মূল ভবনের তেমন কোনও বড় পরিবর্তন না হলেও কাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে তলবৃদ্ধি, ঘরগুলির আয়তন কমানো–বাড়ানো সহ বিভিন্ন পরিবর্তন হয়েছে। জেমস অগাস্টাস হিকি তাঁর ‘হিকিস গেজেট’–এ লিখে গেছেন, বিরাট বিরাট লোহার বরগা আর বার্মা–সেগুনের কাঠামোর উপর পেটাই করে তৈরি হয়েছিল রাইটার্সের জলছাদ। চুন, সুড়কি, চিটেগুড়ের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছিল। ছাদ পেটাই গানের প্রচলিত সুরে দল বেঁধে কাজ করেছিলেন দেশীয় পুরুষ–মহিলা শ্রমিকরা। এখন যা ঢাকা পরেছে বহুমূল্য বিদেশী চাদরে।