দু’পায়ে ঠিক মতো সাড় নেই, মনের জোর অদম্য, সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে উচ্চমাধ্যমিকে দশম বর্ধমানের সাগর
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিশেষ ভাবে সক্ষম কথাটা একেবারেই পছন্দ নয় বর্ধমানের সাগর চন্দের। উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় তার নাম রয়েছে দশমে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনওই স্বপ্নের মাঝে বাধা তৈরি করতে পারে না, এটাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করে সাগর। তাই বিশেষ ভাব
শেষ আপডেট: 26 May 2019 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিশেষ ভাবে সক্ষম কথাটা একেবারেই পছন্দ নয় বর্ধমানের সাগর চন্দের। উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় তার নাম রয়েছে দশমে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনওই স্বপ্নের মাঝে বাধা তৈরি করতে পারে না, এটাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করে সাগর। তাই বিশেষ ভাবে সক্ষমদের তালিকায় রাজ্যে প্রথম হলেও, নিজেকে মেধাতালিকার দশ নম্বর স্থানে দেখতেই বেশি খুশি বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ স্কুলের এই মেধাবী ছাত্র।
জন্ম থেকেই দু’পায়ে ঠিক মতো সাড়া জাগে না। চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। শারীরিক ভাবেও সুস্থ নয়। সাগরের মা জয়শ্রী দেবী জানিয়েছেন, শারীরিক অক্ষমতার জন্য কোনও অভিযোগ-অনুযোগ নেই সাগরের। বরং তার মনের জোর অদম্য। কোনও কিছুর জেদ চেপে গেলে সেটা করেই ছাড়ে সে। আর এই জেদের কারণেই উচ্চমাধ্যমিকে এই সাফল্য পেয়েছে সাগর।
পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের সগড়াইয়ের বাসিন্দা সাগর। তার বাবা তাপস চন্দ রেলে কর্মরত। মা সংসার সামলান। মা-বাবার একমাত্র সন্তান সাগর। মা জয়শ্রীদেবী জানিয়েছেন, ছেলের চলাফেরার অসুবিধার জন্যই তাঁরা বর্তমানে বর্ধমান শহরের শাঁকারীপুকুর এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। সাগরের এই সাফল্যে শুধু তার পরিবার নয়, খুশি তার পাড়া-প্রতিবেশীরাও। গোটা এলাকায় আজ সাগরকে নিয়ে আনন্দের বন্যা।
উচ্চমাধ্যমিকে সাগরের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৬। শতাংশের হিসেবে ৯৭.২। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শম্ভুনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, মনের জোরেই সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছে তাঁর ছাত্র। বিশেষ ভাবে সক্ষমদের তালিকায় রাজ্যে প্রথম হলেও, সে চায় তার রাজ্যে দশম হিসেবেই তাকে চিনুক সবাই। প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘স্কুলের একতলা হোক বা দোতলা, যেখানেই ক্লাস পড়ুক না কেন কোনও দিনও মুখে বিরক্তি দেখা যায়নি সাগরের। কষ্ট হলেও অন্যদের সাহায্য ছাড়াই সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করেছে সে। বরাবরই মেধার পরিচয় দিয়েছে ক্লাসে। তাই সাগরের সাফল্যে খুশি স্কুলের সকলেই।’’
মাধ্যমিকে সাগরের স্থান ছিল দ্বাদশে। সেই ঘাটতি সে মিটিয়েছে উচ্চমাধ্যমিকে। দিনে টিউশন পড়িয়ে, রাত জেগে পড়াশোনা করাটা ছিল সাগরের অভ্যাস। মাধ্যমিকের সময়তেও এই ভাবেই পড়াশোনা করত সে। উচ্চমাধ্যমিকের পরে পরবর্তী লক্ষ্য কী হবে, সেই নিয়ে এখন ভাবিত সাগর। প্রতিবন্ধী কোটায় নয়, বরং স্বাভাবিক ভাবেই জীবনের পথে এগিয়ে যেতে আগ্রহী সাগর। সকলকে সে দেখিয়ে দিতে চায়, শারীরিক বাধা লক্ষ্যপূরণের পথে অন্তরায় নয়, বরং মনের জোর নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই দস্তুর।
আরও পড়ুন:
https://www.four.suk.1wp.in/news-west-bengal-higher-secondary-result-209-first-shovan-mondal-and-second-tanmoy-maikap/