বাঘ ঢুকেছে এলাকায়। ধানখেতে নাকি গুটিসুটি মেরে লুকিয়ে রয়েছে সেই বাঘ! লাঠিসোঁটা নিয়ে সেই ধানখেত ঘিরে রাখল জনতা। যাতে বাঘ কোনওভাবে ধানখেত থেকে বেরিয়ে গ্রামে ঢুকে অনিষ্ট করতে না পারে। খবর গেল বন দফতরে। বন দফতরের লোকজন বাঘ ধরতে কোমর বেঁধে আসরে নামলেন। কিন্তু দিনভর বিস্তর খোঁজাখুঁজির পরেও দেখা মিলল না রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের। কিন্তু বাঘের পায়ের ছাপ তো রয়েছে। তাই কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে চড়া আলো আর রাতপাহারার ব্যবস্থা করেছে বন দফতর। অত্যুৎসাহী জনতাকে সামলাতে রয়েছে পুলিশও।
ঘটনা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কুলতলি ব্লকের ভুবনেশ্বরী গ্রামের নস্করঘেরি এলাকার। মঙ্গলবার সকালে গ্রামের ভেতর বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়ে গ্রামবাসীদের ভিরমি খাওয়ার যোগাড়। তখনও পায়ের ছাপ রীতিমতো টাটকা। নিমেষে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। অল্পসময়ের মধ্যে জড়ো হয়ে যান গ্রামের মানুষ। বাঘ তো এসেছিল কিন্তু তারপর গেল কোথায়? শুরু হল সরেজমিন তদন্ত, যাকে বলে গোরুখোঁজা।
দক্ষিণরায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সন্তর্পণে এগতে থাকেন গ্রামবাসীরা। তারা দেখেন সেই পায়ের ছাপ শেষ হয়ে গিয়েছে ধানখেতে এসে। আর বুঝতে কারও বাকি থাকে না যে সেখানেই ঘাপটি মেরে রয়েছে বাঘ! ততক্ষণে খবর গিয়েছে বন দফতরে। তারপর লাঠিসোঁটা নিয়ে ধানখেত ঘিরে ফেলল জনতা। যাতে কোনওভাবেই বাঘটি গ্রামের ভেতরে আর হানা দিতে না পারে, সেদিকে সতর্ক নজর রাখেন সকলে। কোথায় যে ঘাপটি মেরে বসে আছেন দক্ষিণরায়, ঠাঠা রোদে ধানখেত পেরিয়ে যতদূর চোখ যায় সব ভোঁ-ভাঁ! বাঘবাবাজির দেখা আর মেলে না।
এদিকে বাঘ ঢোকার খবর পেয়ে বন দফতরের রায়দিঘি রেঞ্জের বনকর্মীরা নদীপথে জাল, ঘুমপাড়ানি বন্দুক নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। জাল দিয়ে গোটা ধানখেত এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। বাঘের পায়ের ছাপ দেখে দেখে বাঘ খুঁজে বের করার চেষ্টাও চলে। বাঘ ধরা দেখতে আসা জনতার উৎসাহেও বিরাম নেই। বাধ্য হয়ে জনতার ভিড় সামলাতে ঘটনাস্থলে আসে স্থানীয় মৈপীঠ উপকূল থানার বিশাল পুলিশবাহিনী।
সকাল গড়িয়ে সন্ধে নামলেও নট নড়নচড়ন। কোথায় বাঘ, কোথায় কী! সুন্দরবনের বাঘ কি তবে লুকোচুরি খেলছে? নাকি বাঘ বেমালুম উবে গেল! শেষ পর্যন্ত বন দফতরের কর্মীরা সারারাত ধানখেত পাহারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চড়া আলোর ব্যবস্থা করতে ধানখেতে জেনারেটর আনানো হয়েছে। বাঘবন্দি খেলা দেখতে অধীর প্রতীক্ষায় সবাই। বাঘও কোথাও ঘাপটি তাদের খেলা দেখছে কিনা কে জানে!