শেষ আপডেট: 7th June 2022 10:39
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীল ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন রোদ্দুর রায় (Roddur Roy)। সেই সঙ্গে দৃশ্যত কদর্য অঙ্গভঙ্গীও করেছিলেন তিনি। শুধু মমতা নন, রোদ্দুদের ভাষার বর্শা থেকে বাদ যাননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেসবের পরে কলকাতা থেকে জেলা—একাধিক থানায় এই ভ্লগারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে গোয়া থেকে রোদ্দুরকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ। এ নিয়ে শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দিলেন, রোদ্দুর রায়রা একটা প্রজন্মকে শেষ করে দিচ্ছেন। আরও আগে গ্রেফতার করা উচিত ছিল রোদ্দুরকে।
রোদ্দুর রায়ের (Roddur Roy) আসল নাম অনির্বাণ রায়। রোদ্দুর তাঁর ছদ্মনাম। ফেসবুক, ইউটিউবে ওই নামেই পরিচিত তিনি। গত কয়েক বছর ধরে তাঁর কথা, বক্তৃতা, নাচ-গান বারে বারে ভাইরাল হয়েছে। কখনও হাতে তামাকের জয়েন্ট নিয়ে অঙ্গভঙ্গি করে কখনও বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে তির্যক কথা বলে কিংবা নেতানেত্রীদের উদ্দেশে কুকথায় ভরা সমালোচনা করে তিনি অনেকের নজর কাড়ার চেষ্টা করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সভা চলাকালীনই অসুস্থ ছাত্রী! নিজে হাতে শুশ্রূষা করলেন 'মানবিক' মমতা
তাঁর ফলোয়ার সংখ্যাও নেহাত কম নন। আবার সমালোচকও অনেক। এদিন পুরনো প্রসঙ্গ টেনে অনন্যা বলেছেন, “রবীন্দ্রনাথ আমাদের মননে। তিনি চিরকালীন। সেদিনই যদি রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে আজকে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে সে এই কুৎসিত ভাষা প্রয়োগ করার সাহস পেত না।”
অনন্যার কথায়, “অনেকে বলেন, রোদ্দুর রায় (Roddur Roy) নাকি প্রচুর শিক্ষিত। সে নাকি গবেষণা করছে। কিন্তু যে কায়দায় উনি কথা বলেন তা কোনও রুচিশীল মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।”
১০ বছর আগের কথা। ২০১২ সালে তখন দীনেশ ত্রিবেদীকে সরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী করেছিলেন মুকুল রায়কে। সেইসময়ে সোনার কেল্লার একটি সংলাপ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায় এবং দীনেশের ছবি সম্বলিত একটি কার্টুন ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন অম্বিকেশ মহাপাত্র। ‘দুষ্টু লোক, ভ্যানিস’—এই তিনটি শব্দ নিয়েই অভিযোগ উঠেছিল অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। বলা হয়েছিল, তিনি নাকি খুনের কথা বলেছিলেন। অম্বিকেশকে গ্রেফতার করে এক রাত লকআপে রেখেছিল যাদবপুর থানা। তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক কম হয়নি। আরও একবার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তির্যক মন্তব্য করার জেরে গ্রেফতারির ঘটনা ঘটল।
অম্বিকেশ আর রোদ্দুরের গ্রেফতার কি এক পঙক্তিতে ফেলা যায়? এ ব্যাপারে শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সনের স্পষ্ট কথা, “দুটো ঘটনাকে কোনও ভাবেই, কোনও দিক থেকে এক করা যায় না।”
অনন্যার কথায়, “অম্বিকেশবাবুর ঘটনা যখন ঘটেছিল তখন সদ্য বামফ্রন্ট গিয়েছে, তৃণমূল এসেছে। উনি বাম মনোভাবাপন্ন একজন অধ্যাপক। সম্ভবত রাজনৈতিক মতাদর্শের ফারাক ওই ঘটনায় নেপথ্য কারণ হয়ে উঠেছিল। কেন না, এটা সামাজিক সিস্টেম হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে যখন শাসক থাকে সে তখন এমনই করে। তার মানে এই নয় আমি বর্তমান শাসকের বিরুদ্ধে বলছি। এটা চলে আসছে। তবে অম্বিকেশবাবু যা করেছিলেন সেটার সঙ্গে রোদ্দুর রায়ের বিষয় কোনও ভাবেই এক করা যায় না। রোদ্দুর রায় দিনের পর দিন ধরে বাঙালির মনন, চিন্তা, রুচিবোধকে কলূষিত করে চলেছেন। তা আমাদের একটা প্রজন্মকে প্রভাবিত করছে। আমাদের রুচিশীলতা, শালীনতা, সৌজন্যের আবহকে নষ্ট করতে চাইছে। ওঁকে আগে গ্রেফতার করলেই ভাল হত”।