কৃষ্ণচন্দ্র দে'র কাছে নাড়া বেঁধে গান শিখেছিলেন শচীনদেব বর্মন
সুদেব দে
গান শেখার ক্ষেত্রে শ্রুতি ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, গুরুজনেরা বলেন গাওয়ার থেকেও শোনা জরুরি। এই শোনার পাশাপাশি যদি জন্মগত প্রতিভায় শ্রোতার কণ্ঠস্বর ভালো হয়, আর বেসিক ইনটেলিজেন্স থাকে তাহলে শুনে শুনেই সঙ্গীতের অনেকখানি আয়ত্ত করে ফে
গান শেখার ক্ষেত্রে শ্রুতি ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, গুরুজনেরা বলেন গাওয়ার থেকেও শোনা জরুরি। এই শোনার পাশাপাশি যদি জন্মগত প্রতিভায় শ্রোতার কণ্ঠস্বর ভালো হয়, আর বেসিক ইনটেলিজেন্স থাকে তাহলে শুনে শুনেই সঙ্গীতের অনেকখানি আয়ত্ত করে ফেলা যায়। সেজকাকুর ক্ষেত্রেও শুনেছি তেমনটাই হয়েছিল৷ আমি তো জন্মাইনি তখনও, পরে শুনেছি স্কুল জীবনেই কাকার গানের অনেক অনুরাগী তৈরি হয়েছিল। একদিন স্কটিশ স্কুলের প্রিন্সিপাল সেজকাকুকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, 'এত ভালো গলা তোমার, বাড়িতে নিশ্চয়ই গান শেখ'! সেজকাকু গান শেখেন না শুনে খুব অবাক হয়েছিলেন তিনি। সেসময় স্কটিশ চার্চে প্রতিবছর একটা গানের কম্পিটিশন হত। প্রিন্সিপাল সেজকাকুকে বললেন সেই কম্পিটিশনে নাম দিতে। কিন্তু গুরুজনদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন সেজকাকু। কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে'র সম্মতি না পেলে তিনি কম্পিটিশনে গান গাইতে রাজি হলেন না। শেষমেশ স্কুল থেকে লোক পাঠানো হল সেজকাকুর 'বাবুকাকা' মানে কৃষ্ণচন্দ্র দে'র কাছ থেকে পারমিশন নেওয়ার জন্য। সব শুনে কৃষ্ণচন্দ্র দে বললেন, 'ও কি গান গাইবে কমপিটিশনে! ও তো গানবাজনা কিছু জানে না!' তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের নাছোড়বান্দা আগ্রহ দেখে কৃষ্ণচন্দ্র দে সম্মতি দিলেন প্রতিযোগিতায় গান গাওয়ার। কিন্তু তার আগে তিনি এক-দুমাস সময় চেয়ে নিলেন ভাইপো'কে তালিম দেওয়ার জন্য।
এই একমাস দাদু কাকাকে নিজের হাতে তালিম দিয়ে তৈরি করলেন। এমনিতেই ভেতরে গানবাজনা থাকলে প্রথাগত শিক্ষালাভের সময় কিছুটা সুবিধে হয়! ধরুন, শুনে শুনে একটা বন্দিশ আমি গলায় তুলে নিয়েছি, সেটা আমার কণ্ঠস্থ হয়ে আছে। না জেনেই কিন্তু তখন একটা খেয়াল কি ধ্রুপদ গাইছি। এরপর সচেতন শিক্ষালাভের সময়, মানে প্রথাগত তালিম নিতে গিয়ে যখন জানতে পারছি সেটা ইমন, বা টোড়ি, বা ভৈরোঁ, পূর্বী বা মারোয়া- তখন রাগের চরিত্রটা চট করে ধরে ফেলা যায়। কারণ শুনে শুনে নিজের অবচেতনেই তো সেসব বন্দিশ সিনেমার গানের মতো মুখস্ত ততদিনে। কাকার ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই এমনটাই হয়েছিল৷
মাত্র দু'একমাস তাঁর 'বাবুকাকা' কৃষ্ণচন্দ্র দে'র কাছে তালিম নেওয়ার পর সেজকাকু মান্না দে ইন্টারকলিজিয়েট কম্পিটিশনে যে'কটি বিষয়ে প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছিলেন তার মধ্যে ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল,ভজন, কীর্তন, বাউল, ভাটিয়ালি-সহ প্রায় প্রতিটি বিভাগে তিনি প্রথমস্থান অধিকার করেন। শুধু ঠুংরি আর আধুনিকে দ্বিতীয় স্থান পান। এখান থেকেই 'সেজকাকু'র প্রসিডিওর ট্রেনিং বা তালিম নেওয়ার শুরু। এই প্রসঙ্গে বলি ভাইপো হিসাবে 'বাবুকাকা' কৃষ্ণচন্দ্র দে'র কাছে প্রথম তালিম নিতে শুরু করেছিলেন আমার বাবা প্রণব দে৷ উস্তাদ দবির খাঁ'র কাছেও কাছাকাছি একইসময়ে তালিম নিতে শুরু করেন বাবা।
[caption id="attachment_2218288" align="aligncenter" width="600"]'বসন্তবাহার' ছবিতে ভীমসেন যোশী আর মান্না দে'র ডুয়েট[/caption]
নীলু আর মানা দুই ভাইপোকেই একসঙ্গে তালিম দিতে শুরু করেন কৃষ্ণচন্দ্র দে। দাদু তখন খুবই ব্যস্ত কোলকাতায়। এমন সময় বম্বে থেকে সঙ্গীত পরিচালনার একটা অফার আসে দাদুর কাছে। দাদু অন্ধ মানুষ, একা একা তো বম্বে যেতে পারেন না! সঙ্গে একজন নিজের মানুষ দরকার। তাই প্রথমবার দাদু যখন বম্বে শিফট করেন সহযোগী হিসাবে সঙ্গে নিয়ে গেছিলেন বড়ভাইপো প্রণব দে মানে আমার বাবা'কে। দাদু সেসময় যা সুর করতেন, সঙ্গে সঙ্গে তার নোটেশন করত বাবা। সেভাবেই তিনি তালিম দিয়েছিলেন ভাইপো মানা'কে। কিন্তু তারপরই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় কোলকাতায় ফিরে আসেন কৃষ্ণচন্দ্র দে। দাদুর সঙ্গে বাবাও ফিরে আসেন বাড়িতে। কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে যখন দ্বিতীয়বারের জন্য বম্বে শিফট করার সময় এল, তখন নানাকারণে বাবা আর বম্বে যেতে রাজি হলেন না। সেই প্রথম বাবার বদলে বম্বে গেলেন সেজকাকু মানা।
সেটা ১৯৪২ সাল। আগেও বলেছি, দাদু অন্ধ মানুষ ছিলেন। তাঁর সর্বক্ষণের দেখাশোনার জন্য একজন সহযোগী বা নিজের মানুষ দরকার পড়ত। এছাড়া দাদুর মিউজিক্যাল এসিস্ট্যান্ট হিসাবেও একজন গান জানা মানুষ দরকার ছিল। এই দুটো কাজই করতেন সেজকাকু।
সি এম ত্রিবেদী নামক একজন প্রোডিউসার তার কিছুদিন আগে কলকাতায় এসেছিলেন দাদুর সঙ্গে দেখা করতে। তিনিই দাদুকে অনুরোধ করেন বম্বে যাওয়ার জন্য। এরপর ১৯৪২এ বম্বে যান দাদু আর সেজকাকা। ফণী মজুমদারের পরিচালনায় একটি ছবিতে সেসময় সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব নিলেন দাদু। আর দাদুর সহযোগী হিসাবে সেখানেই প্রথম কাজ শুরু করলেন আমার সেজকাকু মান্না দে।
এইসময় বম্বেতে 'তামান্না' বলে একটি হিন্দি ছায়াছবিতে দাদুর মিউজিক ডিরেকশনে প্রথম প্লে-ব্যাক করার সুযোগ পেলেন সেজকাকু। গানটি দাদু নিজেই শিখিয়েছিলেন সেজকাকুকে। তখন নিজে নিজে নোটেশন করা অনেকটাই আয়ত্ত করে ফেলেছেন সেজকাকু। 'তামান্না' ছবির এই গানটা ছিল ডুয়েট। কাকার সঙ্গে ডুয়েট গাওয়ার জন্য একটা নতুন মহিলা কণ্ঠ খুঁজছিলেন দাদু। কমবয়েসী এক আনকোরা মহিলাকে কাকাই তালিম দিয়ে গানটা তোলান, আর তারপর রেকর্ড হয় সেই গান। এই মহিলাই 'সুরাইয়া'। গায়িকা-নায়িকা দুই ভূমিকাতেই পরবর্তীকালে ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিলেন সুরাইয়া।
[caption id="attachment_2227703" align="aligncenter" width="449"]গায়িকা-নায়িকা সুরাইয়া[/caption]
কাকার মুখে শুনেছি, প্রথম প্লে-ব্যাক করে তখন বেশ আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলেন কাকা। বম্বেতে প্রথমবার গান রেকর্ড করেছেন, বেশ ভালোই গেয়েছেন, সব মিলিয়ে মনও খুশি। কিন্তু সেই রেকর্ডিং শোনার পর প্রথমেই নাকচ করে দিলেন দাদু। দাদু কৃষ্ণচন্দ্র দে শুধু সেই গানের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তাই নয়, তাঁকে বলা হত 'ডিফিকাল্ট টাস্ক মাস্টার'। গানের গায়কিতে হয়তো ভুল ছিল, অথবা ঠিক যেমনটি চাইছিলেন, তেমনটি হয়নি, মোট কথা সে গান এককথায় বাতিল করে দিলেন কৃষ্ণচন্দ্র দে। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবে খুব মনখারাপ হয়ে গেছিল কাকার। তখনকার দিনে তো এখনকার মতো ডাবিং চালু হয়নি। কাকাকে একটা সেকেন্ড চান্স দিতে আবার গোড়া থেকে পুরো গান রেকর্ড করা হল। গানটি ছিল 'জাগো আয়ি ঊষা'। দ্বিতীয়বারে সেজকাকু আর সুরাইয়া জি'র যুগলবন্দিতে গাওয়া সেই গান কৃষ্ণচন্দ্র দে'র মনে ধরে, এবং গানটি এপ্রুভ হয়। বলতে গেলে এটাই আমার সেজকাকু মান্না দে'র প্রথম প্লেব্যাক গানের সূচনা।
সেজকাকুর দীর্ঘ প্লেব্যাক জীবন শুরু হয়েছিল তাঁর কাকা, মানে আমার দাদু কৃষ্ণচন্দ্র দে'র ছত্রছায়ায়। কিন্তু তা বলে যদি কেউ ভাবেন, ব্যাপারটা খুব সহজ তাহলে ভুল ভাববেন। খুব বিস্তারে বলার দরকার নেই যদিও,তবু এটুকু বলব, বম্বেতে প্লেব্যাক গায়ক হিসাবে কাকার জীবনটা ছিল স্ট্রাগলে ভরা। গান শেখানোর সময় কথাপ্রসঙ্গে তিনি আমাকে বারবার বলতেন, "বম্বেতে যখন আমি জীবন শুরু করেছি, তখন হয়তো এখনকার মতো এত ভিড় ছিল না, কিন্তু লাইফ ওয়াজ নট সো ইজি এট অল।" প্রতিদিন নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে থাকতে হত বম্বেতে। কাজের লোক না হলে, সেখানে থাকার কোনও অধিকার ছিল না। এতটাই স্ট্রাগলিং ছিল সে জীবন। এমনিতেও আমাদের শিকড় ছড়িয়ে আছে কলকাতাতেই, সেদিক থেকে বম্বেটা আমাদের কাছে 'পরদেশ'। সেখানে টানা কাজ করে যাওয়া, কাজ পাওয়া অনেকটা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ের মতো।
লক্ষ্মী প্রোডাকশনের টাকায় সেসময় প্রফুল্ল রায়ের পরিচালনায় 'মেরা গাঁও' বলে একটা ছবি হয়েছিল, যার সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন আমার দাদু কৃষ্ণচন্দ্র দে। সেই ছবিতেও দাদুর সহকারী হিসাবে কাজ করেন সেজকাকু। এইভাবেই একটার পর একটা ছবিতে দাদুর এসিস্ট্যান্ট হিসাবে পরিচিতি বাড়ছিল সেজকাকুর। কাজের বিনিময়ে সামান্য কিছু টাকার একটা মাসিক ভাতাও পেতেন। কিন্তু শর্ত ছিল, এসব কিছুর পাশাপাশি নিজের গানবাজনার তালিম চালিয়ে যেতে হবে। সেখানে ফাঁকি চলবে না।
সেই ৪২ সালে গেছেন বম্বেতে, ছোট-বড় নানান কাজ করেছেন, এতসবের মধ্যেও কিন্তু একটা দিনের জন্য বন্ধ থাকেনি গানবাজনার তালিম। 'আমার কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে। তাঁর কাছে তালিম নিয়েছি, ব্যাস, আমার গান শেখা হয়ে গেছে'- এরকম ভাবার সুযোগ ছিল না। বম্বের জীবনে কাজকর্মের পাশাপাশি আরও বৃহত্তর ক্ষেত্রে, সঙ্গীতের আসল খাজানা বা ঐশ্বর্যের সন্ধান পেতে বিভিন্ন ঘরানায় বিভিন্ন ওস্তাদজী'র কাছে গানও শিখেছেন সেজকাকু।
[caption id="attachment_2227720" align="aligncenter" width="600"]কাকা-ভাইপো[/caption]
দাদু কৃষ্ণচন্দ্র দে সেজকাকুকে গান শেখানোর জন্য একদিন নিয়ে গেলেন আমন আলি খাঁ সাহেবের কাছে। তখনই তাঁর বয়স ৭০এর কাছাকাছি৷ বিরাট বড় মাপের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী, পাশাপাশি একটু উন্নাসিকও। কলকাতায় যে কৃষ্ণচন্দ্র দে' নামে একজন প্রসিদ্ধ ও বিদগ্ধ সঙ্গীতশিল্পী আছেন, সেসব খবর রাখতেন না আমন আলি খাঁ। স্বয়ং কৃষ্ণচন্দ্র দে নিজে অনুরোধ জানাচ্ছেন, তাঁর ভাইপো'কে গান শেখানোর জন্য, কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করে আমন আলি খাঁ সাহেব বলে বসলেন, 'এত ছোটো ছেলেকে কেন গান শেখাব! তুমি আমাকে কী মনে কর!'
আমন আলি খাঁ সাহেবের কাছে দাদু অনুরোধ করেছিলেন অন্তত একবার সেজকাকুকে গান শোনানোর সুযোগ করে দিতে। প্রথমদিকে 'না' 'না' করলেও সেজকাকুর গান শুনে ভালো লেগে গেছিল খাঁ সাহেবের। যতই কমবয়েস হোক, গান গাইছেন মান্না দে, মেজাজী হলেও প্রতিভার সেই চাপা আগুন চিনতে ভুল করেননি আমন আলি খাঁ। পরবর্তীতে তিনি রাজি হয়েছিলেন সেজকাকুকে গান শেখাতে। এসময় বেশ কিছু দিন আমন আলি খাঁ'র কাছে রাগসঙ্গীতের তালিম নেন সেজকাকু। সেই সাধনায় ছেদ পড়ল খাঁ সাহেবের মৃত্যুর পর।
তালিমের পাশাপাশি বম্বেতে কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে'র সহকারী হিসাবে কাজটাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন সেজকাকু। এসময় কলকাতা থেকে হরিপ্রসন্ন দাস নামের একজন সঙ্গীত পরিচালককে ডেকে পাঠালেন ফণী মজুমদার। দাদুকেও অনুরোধ করেন কাকাকে আবার বম্বেতে নিয়ে আসার জন্য। সেসময় 'রামরাজ্য' নামে একটা ডবল ভার্সন ছবিতে অনবদ্য প্লেব্যাক করলেন সেজকাকু। মারাঠি আর বাংলা দুটি ভাষাতেই গান গেয়েছিলেন তিনি। কাকার ছত্রছায়া থেকে সরে এসে স্বাধীনভাবে টুকটাক সঙ্গীত পরিচালনার কিছু কাজও করেন এসময়। আমার বাবার কাছ থেকে গানের নোটেশন করার একটা সহজ পদ্ধতি শিখেছিলেন সেজকাকু। বম্বেতে তখনও শর্টহ্যান্ড নোটেশন নেওয়ার চল ছিল না৷ কাকুকে ওভাবে নোটেশন নিতে দেখে চমকে গেছিলেন অনেকেই। বয়স কম হলেও গানবাজনা নিয়ে সেজকাকুর পাণ্ডিত্য আর মিউজিক্যাল স্কিলের কথা বম্বের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। সুযোগ আসছিল স্বাধীনভাবে কাজ করার। কিন্তু ভাগ্যের দোষেই হোক, বা যেকারণেই হোক, সেজকাকুর গাওয়া সেসময়কার গানগুলো তেমন জনপ্রিয় হয়নি। সেটা নিয়ে একটা চাপা আপশোসও ছিল কাকার মধ্যে। এরপর ১৯৪৭ সালে অসুস্থ হয়ে দাদু ফিরে আসেন কলকাতায়। কিন্তু কাকা থেকে গেলেন বম্বেতে। সেখানে দিকপাল সব পণ্ডিত লোকজনের মাঝখানে টিঁকে থাকার জন্য কম লড়াই করতে হয়নি সেসময় সেজকাকুকে।
[caption id="attachment_2227721" align="aligncenter" width="450"]আমার খাতায় কাকার সেই বিখ্যাত নোটেশন[/caption]
পরবর্তীকালে ১৯৫০ সালে শচীন দেব বর্মন নিজের কাছে ডেকে নিলেন মান্না দে'কে। একসময় আমাদের ন'নম্বর মদন ঘোষ লেনের বাড়িতে এসে দাদুর কাছে নাড়া বেঁধে গান শিখেছিলেন শচীন দেব বর্মন। সেদিক থেকে পূর্বপরিচয় তো ছিলই। তাছাড়া সেসময় দাদুর মতো একজন সহযোগীর বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল তাঁর। আমি যদ্দূর শুনেছি, নিজে নিজে নোটেশন করতে পারতেন না শচীনকর্তা। ধরুন, একটা নতুন সুর তৈরি হল, তক্ষুনি যদি নোটেশন করে না রাখা হয়, পরবর্তীতে স্রষ্টা নিজেও সুর ভুলে যেতে পারেন। নোটেশন করা থাকল, মানে, একটা পাকাপাকি লিখিত রূপ থাকল সুরটার। এবার ভুলে গেলেও সুরটা থাকবে। প্রাথমিকভাবে এসব কাজের দরকারেই ডাক পড়েছিল মান্না দে'র। এর পরই শচীন দেব বর্মন মান্না দে'কে দিয়ে গাওয়ালেন সেই বিখ্যাত গান 'উপর গগন বিশাল'। মশাল ছবির এই গানটি কাকার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট। আজও দেশে-বিদেশে গান গাইতে গেলে আমার কাছে অনুরোধ আসে কাকার কণ্ঠে গাওয়া এই গানটির। সেই কবেকার, ১৯৫০ সালে গাওয়া গান, তা আজও ভুলতে পারেনি মানুষ।