শেষ আপডেট: 23rd December 2022 12:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো, বীরভূম: এবারেও বিশ্বভারতীর তত্ত্বাবধানে হচ্ছে না ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা (Poushmela)। বদলে সরকারি (government) উদ্যোগে মেলা হচ্ছে বিশ্বভারতী থেকে এক কিলোমিটার দূরে। তাই বদলে গেল মেলার রংও। পৌষমেলার চিরাচরিত রঙ গেরুয়া-কালচে লাল। কিন্তু বিকল্প পৌষমেলার রং নীল-সাদা। তবু বিকল্প মেলা হওয়ায় খুশি সবাই। বোলপুর (Bolpur) ডাকবাংলো মাঠে এই বিকল্প মেলার উদ্বোধন হল শুক্রবার। মেলা না হলেও প্রথা মেনে এদিনই বিশ্বভারতীতে (Visvabharati) তিনদিনের পৌষ উৎসবের সূচনা হয় বৈতালিক, ব্রহ্ম উপাসনা, বৈদিক মন্ত্রপাঠ, রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। অংশ নেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী৷
২০১৯ সালে শেষবার বিশ্বভারতী ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা আয়োজন করে। ২০২০ সালে কোভিড পরিস্থিতির জন্য বন্ধ ছিল মেলা। তারপর থেকেই মেলা করা হবে না বলে জানিয়ে দেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী৷ পৌষমেলা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে উপাচার্যের সংঘাত তীব্র হয়। এ বছর মেলার প্রস্তুতি নিয়ে প্রশাসনের কর্তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়েও আসেননি উপাচার্য। পরে রাজ্য সরকারে উদ্যোগে আয়োজিত মেলায় বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রতুত্যরে বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। আর তাতেই বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানায়, “দূর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে এক মঞ্চে বসবেন না উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী!” শুক্রবার বিকল্প পৌষমেলার উদ্বোধনে এসে বিশ্বভারতীর প্রেস বিজ্ঞপ্তি নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বললেন, “উপাচার্যকে যারা নিয়োগ করেছেন তারা গুজরাট দাঙ্গার কারণে জেলে ছিলেন। পরে ক্লিনচিট পেয়েছেন৷ যতক্ষণ না কেউ দোষী প্রমাণিত হচ্ছে, ততক্ষণ কেউ অপরাধী নয়৷ কেন রবীন্দ্র আদর্শ সরিয়ে আরএসএস-এর আদর্শ নিয়ে নিয়ে আসছেন৷ ওনার উপাচার্য থাকা উচিত নয়৷”
মেলার উদ্বোধনে ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটির শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর, বিশ্বভারতী প্রাক্তন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত ও সবুজকলি সেন উপস্থিত ছিলেন। পৌষমেলা না করার জন্য বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন সকলেই৷ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “পৌষমেলা শুধু নয়, একে একে সব বন্ধ হয়ে যাবে। যে ভাবে চলছে সেভাবে চলতে পারে না।” প্রাক্তন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত বলেন, “আমি রবীন্দ্রনাথের গানের কথায় বলছি, 'তোমরা যা বলো তাই বলো আমার লাগে না মনে'।”
প্রাক্তন উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, “আমার আশঙ্কা বিশ্বভারতীতে আর কখনও পৌষমেলা, বসন্তোৎসব হবে না৷”
১৮৪৩ সালে ২১ ডিসেম্বর (৭ ই পৌষ) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন। এরপর এই ধর্মের প্রসার বৃদ্ধি। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৪৫ সালে কলকাতার কাছেই গোরিটির বাগানে উপাসনা, ব্রাহ্মমন্ত্র পাঠের আয়োজন করেন। এটিকেই পৌষমেলার সূচনা বলে ধরা হয়। ১৮৬২ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে আশ্রম প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে শুরু করেন। ১৮৯১ সালে ব্রহ্মমন্দির বা উপাসনা গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিকে শান্তিনিকেতনে পৌষ উৎসবের সূচনা হিসেবে ধরা হয়। ১৮৯৪ সালে এই পৌষ উৎসবের পাশাপাশি মন্দির সংলগ্ন মাঠে শুরু হয় পৌষমেলা। দিন দিন মেলার পরিধি বৃদ্ধি পায়। বিশ্বভারতী মেলা করত পূর্বপল্লির মাঠে।
করোনায় চিনে একদিনে আক্রান্ত পৌনে ৪ কোটি! সংক্রমণের সুনামি ভয় ধরাচ্ছে বিশ্বকে