শেষ আপডেট: 19th July 2023 18:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আমরা অনেকেই ভাবি হার্ট বা হৃদপিণ্ডের সমস্যা শুধু বড়দেরই হতে পারে। একটা বয়সের পরে তাই নিয়মিত চেকআপের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু শিশুদেরও হার্টের সমস্যা দেখা যায়। বিশেষ করে, সদ্যোজাত শিশুদের মধ্যেও হার্টের বড় রকম সমস্যা (Pediatric Heart Block) দেখা যায়। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এখন এই সমস্যার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। শিশুর হার্টে সমস্যা শুরু হতে পারে মায়ের গর্ভে থাকার সময়েই। জন্মাবার পরে হৃদগতি বা হার্ট রেট কমে যেতে পারে, এমনকী শিশুর হার্টে পুরোপুরি ব্লক (Pediatric Heart Block) দেখা যেতে পারে, তখন কী করণীয়? কী ধরনের চিকিৎসা দরকার, সবিস্তারে বললেন কলকাতার বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টারের পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. শুভেন্দু মণ্ডল।
ডাক্তারবাবু বলছেন, সুস্থ মানুষের হৃদযন্ত্র এক মিনিটে ৬০-৮০ বার পাম্প করে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের কোষে কোষে পৌঁছে দেয়। এই পাম্প করার ক্ষমতাকে চালনা করার জন্য হার্টের নিজস্ব পেসমেকার থাকে যাকে বলে সাইনাস নোড (এসএ নোড)। এই সাইনাস নোডের কাজ হল হার্টবিট তৈরি করা। ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছে হার্টের এই নিজস্ব পেসমেকার। ইলেকট্রিক্যাল স্পন্দন তৈরি করছে, যে কারণে হৃদস্পন্দন তৈরি হচ্ছে এবং হার্ট পাম্প করে বিশুদ্ধ রক্ত সারা শরীরে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তবে শুধু সাইনাস নোডই নয়, হার্টের নানা জায়গা থেকেই ইমপালস তৈরি হতে পারে, যেমন এভি নোড ও হিস বান্ডিল। সাইনাস নোডের ঠিক নীচেই থাকে এভি নোড। যদি কোনও ভাবে সাইনাস নোডে অসুখ হয়, তখন হৃদপিণ্ডে তড়িৎ পরিবহনের কাজটা করে এভি নোড।
কোনও ভাবে যদি এই সাইনাস নোড ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে হৃদস্পন্দন তার স্বাভাবিক ছন্দ হারায়, কখনও বেড়ে যায় আবার কখনও কমে যায়। ডাক্তারি ভাষায় আমরা একে বলি অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন। অনেক সময়েই এই অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন বুঝতে পারি না আমরা, তবে কিছু আগাম ইঙ্গিত দেয় হার্ট। যেমন বুক ধড়ফড় করতে পারে, মাথা ঘোরা বা ব্ল্যাক আউট হতে পারে রোগীর, ঘনঘন সোডিয়াম-পটাশিয়াম লেভেলে বদল হতে পারে। পরীক্ষা করালে দেখা যাবে হার্টবিট হয়তো প্রতি মিনিটে বেড়ে ১৫০ থেকে ২০০-তে পৌঁছে গেছে।
কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে হৃদগতি কমে যেতে পারে গর্ভে থাকার সময় থেকেই (Pediatric Heart Block)। অথবা প্রসবের পরে হার্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে বাচ্চার। ডাক্তারবাবু বলছেন, শিশুদের ক্ষেত্রে হৃদপিণ্ডের সমস্যা দুই প্রকারের হয়ে থাকে। প্রথমটি হল জন্মগত। আর দ্বিতীয়তটি জন্মের পরে হওয়া সমস্যা। এমনও দেখা গেছে, জন্মাবার পরে সদ্যোজাতের হার্টরেট খুবই কম অথবা হার্টে ব্লকেজ রয়েছে। সেই সময় ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফি করে দেখতে হয় হার্টের সমস্যা কতটা গভীরে।
শিশুর কী কী লক্ষণ দেখে বোঝা যায়? ঘন ঘন জ্বর আসা, সারা শরীরে লাল দাগ, র্যাশ, শিশুর স্বাভাবিক হৃদগতি অনেকটাই কমে যাওয়া ইত্যাদি।
ডা. শুভেন্দু মণ্ডল বলছেন, হার্টবিট প্রতি মিনিটে ৪০-৫০ হয়ে যাওয়া মানেই হল সাইনাস নোডের অসুখ করেছে, যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে ‘সিক সাইনাস সিন্ড্রোম’ বা ‘সাইনাস নোড ডিসফাংশন’। এই অসুখে সাইনাস নোড আর স্পন্দন তৈরি করতে পারে না। সেই কাজটা তখন করে সাইনাস নোডের ঠিক নীচেই থাকা এভি নোড। কিন্তু যদি এভি নোডেও অসুখ করে তখন হৃদপিণ্ডের ওপরের ও নীচের প্রকোষ্ঠ তথা অলিন্দ ও নিলয়ের মধ্যে বোঝাপড়াটা নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে হৃদপিণ্ডের এই ইলেকট্রিকাল সার্কিট ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তখন হৃদগতি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পেসমেকার বসাতে হয়। পেসমেকার হৃদস্পন্দন নিয়মিত রাখার কৃত্রিম বৈদ্যুতিক যন্ত্র। যা ইলেকট্রিক্যাল ইমপাল্স তৈরি করে হৃদপেশিকে সরবরাহ করে এবং হৃদপিণ্ডের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই পেসমেকার প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ঠিক আছে, কিন্তু শিশুদেরও কি পেসমেকার বসতে পারে?
ডাক্তারবাবু বলছেন, পেসমেকার বসানো ক্ষতিকর কিছু নয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও নিরাপদ। পেসমেকারের কাজ হল হৃদগতিকে নির্দিষ্ট ছন্দে নিয়ে আসা। শিশুর পেসমেকার বসালে আগামী দিনে বড় বিপদের ঝুঁকি কমবে। কারণ বাচ্চা দৌড়বে, খেলবে, সেই সময় হার্টরেট ঠিক রাখা ও হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতাকে সঠিকভাবে চালনা করার জন্য পেসমেকারেরই দরকার পড়বে।
দেশে প্রথম তিন মাসের শিশুর কিডনি অপারেশন সফল, মাত্র দু'ঘণ্টায় জটিল সার্জারি করেছে এইমস
বাচ্চার হার্টে সমস্যা থাকলেও ভয়ের কিছু নেই। ডাক্তারবাবু বলছেন, যদি ঠিক সময়ে চিকিৎসা করানো যায়, তা হলে চিকিৎসায় শিশুর ১০০ শতাংশ সেরে ওঠা সম্ভব। সুস্থ হওয়ার পরে শিশু স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।