শেষ আপডেট: 16th July 2020 18:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জন্ম থেকেই অসুস্থ। উচ্চতা সাকুল্যে দু’ফুট। শয্যাশায়ী। সেই অবস্থাতেও পড়াশোনা বন্ধ করেননি উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ ব্লকের মনিরা খাতুন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা এমনই যে উমফানে ঘরের চাল উড়ে যাওয়ার পরে এখনও তা পুরোপুরি মেরামত করা হয়নি। কিন্তু থামানো যায়নি মনিরাকে। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। বছর ষোলোর মনিরা খাতুন থাকেন মিনাখাঁ ব্লকের কুমারজোল গ্রাম পঞ্চায়েতের মালিয়ারি গ্রামে। স্থানীয় ধুতুরদহ কল্যাণ পরিষদ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল বামনপুকুর এসএমএম হাইস্কুল। তাঁর বাবা মুক্তার আলি মোল্লা পেশায় ভ্যানচালক। মা আখলিমা বিবি কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। দরিদ্র পরিবারের দুই ছেলেমেয়েই শারীরিক প্রতিবন্ধী। মনিরার শারীরিক দৈর্ঘ্য মাত্র দু’ফুট। ছেলে আশিকুলও ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। সে এখন পড়ে পঞ্চম শ্রেণীতে। মুক্তার আলি মোল্লা প্রতিটি পরীক্ষার দিন মেয়েকে ভ্যানে করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতেন। মেয়ের সঙ্গে থাকতেন তাঁর মা আখলিমা বিবি। বুধবার মাধ্যমিকের পরীক্ষার ফলাফল বের হতে জানা যায় মনিরা উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই খবর গ্রামে পৌঁছাতে সকলেই আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। গ্রামের প্রতিটি মানুষের কাছে তিনি নজির তৈরি করেছেন। এভাবেও যে সফল হয়ে ওঠা যায় তা প্রমাণ করেছেন মনিরা। তাঁর স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও খুশি। গর্বে তাঁদের বুক ভরে উঠেছে। স্কুলের শিক্ষক তরিকুল আলম মোল্লা বলেন, “আমরা ওর পড়াশোনার ব্যাপারে সব রকম সহযোগিতা করব। সমস্যা থাকলেও যাতে অন্য ছাত্রছাত্রীরাও এগিয়ে যেতে পারে তার সব রকম ব্যবস্থা আমরা করব। সরকার যেন ওর পাশে থাকে। এই রকম একটি হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে অন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।” মনিরার স্বপ্ন শিক্ষিকা হওয়া। আরও বেশি পড়াশোনা করে সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে চান তিনি। আর পাঁচটা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ যাতে তাঁর জীবনসংগ্রাম দেখে এগিয়ে আসেন সেটাই তিনি চান। তিনি চান কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকলেও কেউ যেন মানসিক ভাবে ভেঙে না পড়েন। আখলিমা জানান, তাঁদের দশ বছরের ছেলে আশিকুল মোল্লাও এখন দিদির লড়াই দেখে সাফল্যের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। মনিরা-আশিকুল দুই ভাইবোনই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে শিক্ষালাভের পথে বাধা হতে দেননি। মনিরা এখন তাঁদের গ্রামে আলোর পথ দেখাচ্ছেন।