শেষ আপডেট: 27th July 2019 09:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সারা রাজ্যে নিন্দের ঝড়। তাঁর প্রতি সংহতি জানিয়েছেন বহু বিশিষ্টজন। ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েছেন হুগলি জেলা তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ যাদব। কোন্নগর কলেজের আক্রান্ত অধ্যাপক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় যখন রাজ্যে শিক্ষামহলে চর্চার কেন্দ্রে, তখনই সামনে এল ২২ বছর আগের এক ঘটনা। অভিযোগ উঠল, হুগলির বাহিরখণ্ডের নারায়ণপুর গ্রামের ভূমিপুত্র সুব্রতবাবু নাকি ১৯৯৭ সালের ২৬ জানুয়ারি নিজেই এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষককে রাস্তায় ফেলে জুতো পেটা করেছিলেন। নারায়ণপুরের গ্রামবাসীরা বলছেন, ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।’ আর সুব্রতবাবু ওই ঘটনায় নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলছেন, “তৃণমূল নতুন করে গল্প সাজাতে চাইছে।” ঠিক কী ঘটেছিল ২২ বছর আগে? সুব্রতবাবু তখন নারায়ণপুর পাঠাগারের সম্পাদক। সেই সঙ্গে দাপুটে সিপিএম নেতাও। গ্রামবাসীদের কথায় হার্মাদ তৈরির কারিগর। প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন জাতীয় পতাকা তোলা নিয়ে বচসা শুরু হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, সিপিএমের লোকজনকে জুটিয়ে সুব্রতবাবুরা বলেন, জাতীয় পতাকা তুলতে দেওয়া যাবে না। বচসা গড়ায় হাতাহাতিতে। সেই সময়েই ছেলের মোটর সাইকেলে চেপে নালিকুল থেকে ফিরছিলেন মাস্টারমশাই মনসারাম ঘোষ। অভিযোগ, যেহেতু রামনগর নুটবিহারী পালচৌধুরী স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষক মনসাবাবু কংগ্রেস করতেন, তাঁকে বেধড়ক মারতে শুরু করেন সুব্রতবাবু এবং তাঁর লোকজন। মাটিতে ফেলে করা হয় জুতোপেটা। ২০১৯-এ সেই মনসাবাবু ৭০ পেরিয়েছেন। হাঁটেন ক্রাচ নিয়ে। সংবাদমাধ্যমে দেখেছেন কোন্নগরের ঘটনা। অশক্ত শরীরের মনসাবাবু বলেন, “কলেজ শিক্ষককে মারা যেমন অন্যায়, প্রাথমিক শিক্ষককে মারাও অন্যায়। এটা ও বুঝুক।” সে দিনের সাক্ষী মনসাবাবুর মেজো ছেলে বলেন, “এ জন্মেই সব পাপের হিসেব হয়ে যায়!” সুব্রতবাবু সিপিএমের অধ্যাপক সংগঠনের নেতা। প্রতিদিন বিকেলে কলেজ শেষ করে কাঁধে সাইডব্যাগ ঝুলিয়ে শ্রীরামপুরে সিপিএম জেলা দফতরে যাওয়া তাঁর রুটিন। যে অধ্যাপক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রাজ্যবাসীর সহানুভূতি কুড়িয়ে নিলেন, তিনিই কি না ২২ বছর আগে শিক্ষক পিটিয়েছিলেন? সুব্রতবাবু অবশ্য উল্টো অভিযোগ করছেন। তাঁর দাবি, “কংগ্রেসিরা সে দিন জাতীয় পতাকা লাগাতে দিচ্ছিল না।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “ঘটনাস্থলে আমি ছিলামই না। আমার দাদা বাণীব্রত চট্টোপাধ্যায়কে ওরা প্রথমে মারধর করে। তারপর একটু ধস্তাধস্তি হয়।” কিন্তু সেই ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ হয়েছিল। ২০১২ সাল পর্যন্ত সেই মামলা চলেছে চন্দননগর আদালতে। সে দিনের প্রহৃত শিক্ষক মনসাবাবু বলেন, “সুব্রতর পরিবারের অনুরোধেই ওই কেস তুলে নিয়েছি।” মনসাবাবুর এক আত্মীয়ের কটাক্ষ, "কোর্টের কেস উঠে গেলেও ওপরওয়ালা যে ছাড়েন না, এই ঘটনা তা দেখিয়ে দিল।"