দ্য ওয়াল ব্যুরো: একথা আর গোপনীয় নেই যে সংখ্যালঘু ভোটই একুশের ভোটে তৃণমূলের অন্যতম ভরসা। তৃণমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরও জাতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাত্কার দিতে গিয়ে বলেছেন, বিজেপির লড়াই তো ৭০ শতাংশকে নিয়ে।
এর মধ্যেই ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে শাসকদলে। সংখ্যালঘু ভোট বিভাজিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তাত্পর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। এদিন সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন সূর্যবাবু। তারপর সাংবাদিক বৈঠকে সূর্যবাবু বলেন, "আব্বাস সিদ্দিকি কী বলেছেন তার টেপ আমার কাছে আছে। উনি কখনও একটি ধর্মের কথা বলেননি। বরং ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। উত্তর ভারতে যাকে বহুজন বলা হয়। সমাজিক বৈষম্যের শিকার সবাই রয়েছেন সেখানে।"
আব্বাসের একটি সংগঠন রয়েছে। নাম সুন্নাতুল জামাত। তিনি বলেন, "ভারতের সংবিধান ধর্মের ভিত্তি রাজনৈতিক দল গঠনে অনুমতি দেয় না। আমার উদ্দেশ্যও তাই নয়। আমি গরিব হিন্দু অধিকারের জন্যও লড়ব। আদিবাসীদের জন্যও লড়ব। কিন্তু ভাই, বামফ্রন্ট জমানায় আমিই তো দেখেছি, কোনও না কোনও পীরজাদা ধর্মীয় মঞ্চ থেকেই মুসলিম ভাইদের ঠেলে বামপন্থী গঙ্গার জলে ফেলেছেন। আবার তৃণমূল ক্ষমতায় এলে দেখেছি, মঞ্চে তাঁদের হাত ধরে সেই পীরজাদা বলছেন, ইনিই আমাদের ক্যান্ডিডেট!”
তাঁর কথায়, “ও ধোঁকাবাজি আমার স্বভাবে নেই। ইমানের সঙ্গে কাজ করি। মানবতার সঙ্গে কাজ করি। পষ্টাপষ্টি বলি, এমন কিছু করবে না যাতে দেশের ক্ষতি হয়। হজ, জাকাত যেমন ইসলামের শিক্ষা তেমনই দেশকে ভালবাসাও ইসলামের শিক্ষা। দেশবিরোধী যারা কাজ করবে তারা ইসলাম বিরোধী। আমি বলি, ন্যায়ের জন্য লড়াই করতে। সৎ মানুষের পাশে থাকতে।”
গত রবিবার ফুরফুরায় আসেন অল ইন্ডিয়া ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি বলেন, বাংলায় আব্বাসের নির্দেশেই মিম চলবে। যদিও এদিন সূর্যবাবু মিম সম্পর্কে খুব একটা ইতিবাচক মনোভাব দেখাননি। তাঁর সাফ কথা, বিহারে কী হয়েছে আমরা দেখেছি। তবে আব্বাসকে এখনই সাম্প্রদায়িক বলতে রাজি নন সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য।
একটা সময় সংখ্যালঘু ভোট ছিল বামেদের একচ্ছত্র আধিপত্য। তৃণমূল আসার পর তা কার্যত তাদের ভোট ব্যাঙ্ক হয়ে যায়। লোকসভা ভোটের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, " যে গরু দুধ দেয় তার লাথিও সহ্য করব।"
চলতি সপ্তাহে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এসেছিলেন কলকাতায়। তাঁকে যখন মিম নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেছিলেন, "বাংলার পরিস্থিতি অনুযায়ী অবস্থান স্পষ্ট করুক। তারপর ভাবা যাবে।"
সংখ্যালঘুদের অনেকে বলেন, আব্বাস সিদ্দিকি ত্বহাদের মতো নন। ভোটের আগে সরকার বিরোধী গরম গরম কথা বলে অজ্ঞাত কারণে ভোটের সময় চুপ করে যাওয়ার লোক তিনি নন। তাঁর জেদ মারাত্মক। আব্বাস মনে করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল লালিপপ ঝুলিয়ে রেখেছে সংখ্যালঘু তথা নিপীড়িতদের সামনে। অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে ওয়াইসি বলেন, "তোমার কাঁধে কাউকে বন্দুক রাখতে দিও না। নিজেরই বন্দুক হয়ে যান।"
তবে সূর্যবাবুর এদিনের মন্তব্যে উস্কে গিয়েছে অন্য জল্পনা । তাহলে কি আব্বাস বাম-কংগ্রেস জোটে শামিল হচ্ছেন?