দ্য ওয়াল ব্যুরো: শিলচরের ঘটনার সপ্তাহ ঘোরেনি এখনও। আর এর মধ্যেই নিজের তথাকথিত ‘অরাজনৈতিক’ অবস্থান বদলে ফেললেন কবি শ্রীজাত। গেলেন ব্রিগেডে। কবিতা পাঠ করলেন মমতার ডাকা ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’র মঞ্চে।
কয়েক বছর আগেই শ্রীজাতর লেখা একটি কবিতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু তা ভোলেননি হিন্দুত্ববাদীরা। বাংলার মাটিতে সে ক্ষোভ সোশ্যাল মিডিয়ায় আটকে থাকলেও, অসমে তা নেমে এসেছিল রাস্তায়। গত রবিবার শিলচরে একটি সাংস্কৃতিক সংস্থার আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন ‘উড়ন্ত সব জোকার’, ‘ছোটদের চিড়িয়াখানা’, ‘অকাল বৈশাখী’, ‘কফির নামটি আইরিশ’-সহ একাধিক কাব্যগ্রন্থের লেখক। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানেই বছর আড়াই আগের একটি কবিতায় কেন তিনি ওইরকম শব্দ ব্যবহার করেছিলেন তা জানতে চায় একদল হিন্দু কট্টরপন্থী। কথার পিঠে কথা থেকে শুরু বচসা। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে হোটেলের লনেই। তারপর হেনস্থা। ভেঙে দেওয়া হয় তাঁর গাড়ির কাচ। দীর্ঘক্ষণ হোটেলের একটি ঘরে আত্মগোপন করে থাকতে হয় কবিকে। এরপর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপরই কলকাতায় ফিরে শ্রীজাত জানিয়েছিলেন, বাংলায় তাঁর কথা বলার স্বাধীনতা থাকলেও। বাংলায় তা নেই। এবং জানিয়েছিলেন, বাংলায় সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত। কিন্তু বাংলার বাইরে তা একেবারেই নেই।

এ দিন তৃণমূলের মঞ্চে শ্রীজাতর উপস্থিতি দেখে অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছেন। কবি ঘনিষ্ঠদের অনেকের কথায়, বিজেপি-বিরোধিতার উদ্দেশ্যেই তিনি গিয়েছিলেন ওই মঞ্চে। হতে পারে সেটাই ঘটনা। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, রাজনীতি সবসময়ই ধারনা সর্বস্ব। যেমন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় গত ৭ জুন নাগপুরে আরএসএস-এর হেডকোয়ার্টারে গিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার পর তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়েছিল। প্রণববাবু সঙ্ঘের মতাদর্শের সুরে কথা বলেননি। বলেছিলেন, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ঐতিহ্যের কথা। কিন্তু তার পরেও ফ্রেমবন্দী হয়ে থেকেছে নাগপুরে সঙ্ঘের বারান্দায় প্রণব-ভাগবতের ছবিটাই। শ্রীজাতর ক্ষেত্রেও তেমনটাই হল না কি? তাঁর ব্যাখ্যা কে শুনবেন? বরং এই বার্তাই যাবে, তৃণমূলে নাম লেখালেন শ্রীজাত।
প্রসঙ্গত, সাহিত্য এবং সংস্কৃতিমহলে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিয়ে শ্রীজাতর একটা দৃঢ় অবস্থান ছিল। এ নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে জনপ্রিয়তা রয়েছে কবির। কখনও তাঁকে দেখা যায়নি বাম শিবিরে। পরিবর্তনের পরেও তিনি যাননি শাসকের দিকে। বহু বন্ধু, অগ্রজরা গিয়েছেন একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে। কিন্তু নিজের দর্শনকে উপস্থাপিত করেছেন শব্দ, ছন্দ আর অন্তমিলের অনবদ্য মিশেলে। তাতে রাজনীতি ছিল, কিন্তু ছিল না কোনও দলীয় রাজনীতির প্রতি আনুগত্য। এ বার সেটাও ঘুচল। অনেকের মতে, ছবিগুলো থেকে যাবে। আজ থেকে কয়েক দশক পরেও লোকে বলবে, শ্রীজাত গিয়েছিলেন তৃণমূলের মঞ্চে। মমতার মেগা মিটিং-এ।
বস্তুত এর মধ্যেই তৃণমূলের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে, শ্রীজাত কি এ বার তৃণমূলের টিকিটে ভোটে দাঁড়াবেন? কারণ, উনিশের ভোটে দলের বর্তমান সাংসদদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে দিদি হয়তো টিকিট দেবেন না! কে বলতে পারে পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসাবে মাঠে নামবেন না শ্রীজাত!