শেষ আপডেট: 13th July 2019 09:03
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বছর তেরোর কিশোর জগদীশ গিরি। দু'সপ্তাহ ধরে এসএসকেএম-এ চিকিৎসাধীন। ক্যানসারে আক্রান্ত জগদীশের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক, তেমনটাই জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। জটিল অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হবে টিউমার। বাদ যেতে পারে একটা কিডনিও। কিন্তু অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজন অতি বিরল বম্বে গ্রুপের রক্ত। চারদিন ধরে হন্যে হয়ে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছিল না রক্ত। শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে ফেলেছিলেন রক্তদান সংস্থার সঙ্গে যুক্ত দীপঙ্কর মিত্র। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পাওয়া গিয়েছে রক্ত। কিন্তু বিনামূল্যে পাওয়ার পরিবর্তে ১৯০০ টাকার বিনিময়ে কিনতে হয়েছে সেই রক্ত। সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে ব্লাড ব্যাঙ্কের উদাসীন ব্যবহার। একটা বাচ্চা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। টাকার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার। কিন্তু কোনও হেলদোল নেই ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। এমনটাই অভিযোগ করেছেন দীপঙ্করবাবু। ঘটনাটা ঠিক কী? চিকিৎসাধীন জগদীশের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ। বাবা শুভেন্দু গিরি এবং মা উমা গিরি কোনওমতে পান বিক্রি করে সংসার চালান। সেখানে ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত তাঁদের। তবু সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হওয়ায় খানিকটা স্বস্তি। কিন্তু অপারেশনের আগে রক্ত জোগাড়ের সময় মাথায় হাত পড়েছিল তাঁদের। দীর্ঘদিন রক্তদান সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে বেশ কিছু যোগাযোগ রয়েছে দীপঙ্করবাবুরও। কিন্তু কিছুতেই সুরাহা হচ্ছিল না। হাজার খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছিল না বম্বে গ্রুপের রক্ত। দীপঙ্করবাবুর জানিয়েছেন গত ৫ জুলাই হাওড়ার বড়গাছিয়ার বাসিন্দা শম্ভুনাথ বাগ এক ইউনিট রক্ত দেন জগদীশের জন্য। কিন্তু অপারেশনের জন্য প্রয়োজন ছিল আরও রক্তের। দীপঙ্করবাবু জানিয়েছেন, বছর ৩৩-এর বিলকিস পারভিন নামের এক গর্ভবতী মহিলা ভর্তি ছিলেন পিয়ারলেস হাসপাতালে। তাঁরও বম্বে পজিটিভ গ্রপের রক্ত প্রয়োজন ছিল। দমদম ক্যান্টনমেন্ট-এর বাসিন্দা স্বপন কুমার মান্না, বিলকিস পারভিনকে রক্ত দেন। একই সঙ্গে রক্ত দিতে গিয়েছিলেন মৃদুল কুমার দলুই নামের আর এক ব্যক্তি। দীপঙ্কর বাবু আরও বলেন, "মৃদুলবাবু আমাদেরই সংগঠনের সদস্য। ওঁর কাছ থেকেই আমরা জানতে পারি যে মৃদুলবাবুর দেওয়া রক্ত বিলকিস পারভিনের লাগেনি। স্বপন কুমার মান্না-র দেওয়া রক্ততেই কাজ হয়ে গিয়েছে।" এরপরেই পিয়ারলেস হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেন দীপঙ্করবাবুরা। অভিযোগ, রক্ত আছে সে কথা প্রথমে স্বীকারই করতে চায়নি ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। দীপঙ্কর মিত্রের কথায়, "যখন আমরা পেশেন্টের নাম নির্দিষ্ট করে জানাই তারপর ওরা আমাদের কথায় কান দেয়। বলে খানিকক্ষণ পরে আসুন। এরপর ১৯০০ টাকার বদলে রক্ত নিতে হয়। অথচ এই রক্ত বিনামূল্যে দেওয়ার কথা। পেশেন্ট পার্টির আর্থিক অবস্থা, এসএসকেএম চিৎসাধীন, কোনও কিছু শুনেই ওরা নিজেদের সিদ্ধান্ত বদল করেনি।" এ বিষয়ে পিয়ারলেস হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মন্তব্য পাওয়া গেলে তা প্রতিবেদনে আপডেট করা হবে। পিয়ারলেস হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের পাশাপাশি সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধেও অভিযোগ এনেছেন দীপঙ্করবাবু। তিনি বলেন, "সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্ত নিতে চায়নি বলেই আমাদের ডোনার মৃদুলবাবুকে পিয়ারলেসে যেতে হয়েছিল। নয়তো সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত থাকলে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ নিজেরাই রক্ত আনিয়ে নিতে পারত। এত ভোগান্তি হতো না। বাচ্চাটার অপারেশনটাও হয়তো ক'দিন আগে হয়ে যেতে পারত।" দীপঙ্করবাবু জানিয়েছেন, এই চিত্রটা সারা দেশে একই রকম। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কয়েকজন অসাধু লোকের ইন্ধনে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলোকে ঘিরে চলছে নানা চক্র। ফ্রিতে যে রক্ত পাওয়ার কথা সেটা কিনতে হচ্ছে বিপুল দামে। বাধ্য হয়ে রোগীর পরিবার মোটা টাকা দিচ্ছেন। এমনকী ডোনারকেও ব্লাড ব্যাঙ্কের বলে দেওয়া জায়গায় দিতে হচ্ছে ব্লাড। পাশাপাশি তাঁদের থেকে টাকাও নেওয়া হচ্ছে। আর এত কিছুর পরেও দরকারে পাওয়া যায় না রক্ত। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন দীপঙ্করবাবু। তবে শেষ পর্যন্ত হাজার ঝক্কি সামলে জগদীশের জন্য রক্তের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। সফল হয়েছে তার অস্ত্রোপচার। এখন ভালো আছে সে। বেডেও দেওয়া হয়েছে তাকে। আরও পড়ুন https://www.four.suk.1wp.in/news-national-know-three-aspects-of-bombay-group-blood/